নীলা মেয়েটি দুরন্ত ছিল। ছিল প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী। সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইত। তার স্বপ্ন ছিল অনেক। স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ও ছিল তার। কিন্তু তার ভেতরে কে ও আশা জাগাত না। ফলে তার স্বপ্ন গুলো কেমন যেন কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায়। সবাই তাকে বলত, “তুমি পারবে না”। কেন এমন বলে তারা………?
কারণ সে কালো। তার বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রখর নয়। বয়স অনুযায়ী সে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান। হয়তো এসব কারণেই কার ও কাছ থেকে পয্রাপ্ত ভালোবাসা পায়নি। তবু ও সে হাল ছাড়তে চায়নি। কিন্তু নীলা ও একজন মানুষ। তার পক্ষে হয়তো এতটা অপমান সহ্য করা সম্ভব হয়নি। এসব অপমানের কাছে সে এখন মাথা নত করে ফেলেছে।
.
ও যখন কলেজে যায়, তখন সবাই ওকে দেখে হাসে। হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, “নীলা নাকি অনেক কুৎসিত”। ক্লাসে ওর পাশে কে ও বসতে চায় না। কারণ ও মোটা আর কালো। ওর বন্ধু বান্ধব কম। কারণ ক্লাসের মেয়ে গুলো সবাই যেন মিস ইউনিভার্স। তারা কখনোই নীলার সাথে কথা বলতে চায় না। এমনকি শিক্ষকগণ, যারা মানুষের ভেতরে আশা উদ্দীপনা জাগিয়ে দেয়ার কারিগর, তারা ও এই কালো মেয়েটিকে কেন যেন দেখতে পারেন না। ওর মা বাবা ও বিয়ে বা এ ধরনের অনুষ্ঠানে নীলাকে নিয়ে যেতে চান না। কারণ……………মেয়ে টা সুন্দর না।
.
একদিন ও কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরই ক্লাসের কয়েকটা মেয়ে ওকে দেখে হাসতে হাসতে বলল,”তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকনা। সবাই ভয় পাবে। হা হা হা হা হা হা”। অনেক কষ্টে নীলা তার চোখের পানি আটকে রাখে। বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন সে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। কাঁদতেই থাকে।
.
কালো মেয়ে টি আমাদের চোখে মানুষ নয়। আচ্ছা কালো হলেই কি তাকে অবজ্ঞা করতে হবে? বাহ্যিক সৌন্দর্য যাদের প্রখর হয় না তাদের মন বলে কিছু নেই নেই এটাই কি আমাদের ধারণা? সুন্দর অসুন্দর সবকিছুই তো মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। কালো, ফর্সা, সুন্দর, অসুন্দর এসব বিষয় কেন একজন মানুষের জীবনে মুখ্য হবে? কালো হয়ে জন্ম হওয়া, অসুন্দর হয়ে জন্ম হওয়া কি মহাপাপ? যদি মহাপাপই হতো তাহলে সৃষ্টিকর্তা কোনো অসুন্দরকেই সৃষ্টি করতেননা।
.
বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, মনের সৌন্দর্য্যই আসল। অপর দিকে চিন্তা করলে পৃথিবী, মহাবিশ্বের সবকিছুই সুন্দর। সৃষ্টিকর্তার কোনো সৃষ্টিকেই অসুন্দর বলার ক্ষমতা আমাদের নেই।
.
.