সাকিবকে আগলে রাখলেন মাশরাফি ‘ম্যাচে ক্যাচ পড়তেই পারে’

23
298

নিজের তৃতীয় বলেই শিখর ধাওয়ানকে ফিরিয়ে দিয়ে দলকে দুর্দান্ত এক সূচনা এনে দিয়েছিলেন আল আমিন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাঁর এই উল্লাস অবশ্য ম্যাচ শেষে রূপ নিয়েছে হতাশায় l শামসুল হকরোহিত শর্মার নামের পাশে তখন মাত্র ২১ রান। স্কোরবোর্ডে ভারত ৩ উইকেটে ৫২। ভাবুন একবার, ওই সময় রোহিত আউট হয়ে গেলে ম্যাচে কতটা এগিয়ে যেত বাংলাদেশ! ৪ উইকেটে ৫২, দলকে টেনে তোলার জন্য উইকেটে নেই রোহিতও। কী দারুণ একটা সম্ভাবনার হাতছানি যে ছিল!
কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে পয়েন্টে রোহিতের ক্যাচ ফেলে সম্ভাবনাটাকেও মাটিতে ফেলে দিলেন সাকিব আল হাসান। সেখান থেকে রোহিতের রান শেষ পর্যন্ত ৮৩, ভারতের ১৬৬। টি-টোয়েন্টিতে এই রান টপকে ভারতকে হারানো বাংলাদেশ দলের জন্য অসাধ্য সাধনের মতোই ব্যাপার ছিল।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার সংবাদ সম্মেলনে তাই ঘুরেফিরে এল সাকিবের ক্যাচ ছাড়ার প্রসঙ্গ। মাশরাফিও স্বীকার করলেন, ‘ওই ক্যাচ ফেলাটা অবশ্যই ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তাই বলে হারের সব দায় সাকিবের ওপরই চাপালেন না, ‘এটা খেলার অংশ। ম্যাচে ক্যাচ পড়তেই পারে। কিছু করার নেই।’
রোহিতের জীবন ফিরে পাওয়ার আলোচনা সংবাদ সম্মেলনে যতবারই এসেছে, মাশরাফির ওই একই কথা। সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডারদের একজন সাকিব। কাল যেমন একটা ক্যাচ ছেড়েছেন, অতীতে অনেক দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেনও তিনি। তা ছাড়া একটা ক্যাচ ফেললেও বোলিংটা তো করেছেন ভালো!
মাশরাফির অভিজ্ঞতা বলছে, মিরপুরের উইকেটে কাল স্পিনারদের জন্য তেমন কিছুই ছিল না। তবে উইকেটে ঘাস থাকায় দুই দলের পেসাররাই শুরুটা করেছেন ভালো। বাংলাদেশের চার পেসার খেলানো নিয়ে ওঠা প্রশ্নটা এই বলেই উড়িয়ে দিলেন অধিনায়ক। কিন্তু এই চার পেসারের মধ্যে যে মুস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন সেটা বোঝা গেল কই! ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে উইকেট পাননি একটিও। মাশরাফি অবশ্য সাকিবের মতো ঢাল হলেন মুস্তাফিজেরও, ‘শিশিরের কারণে বল ভেজা থাকায় ওর বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। সে জন্য স্লোয়ার মারতেও সমস্যা হয়েছে। একটা কাটারে তো ছক্কা মারল ওকে।’
বোলারদের সংঘবদ্ধ আক্রমণেও ওই শিশিরই বাধা হচ্ছিল বলে মনে করেন মাশরাফি। তারপরও বলেছেন, ‘ভারতের রানটা ১৩৫-১৪০-এর মধ্যে থাকলে সেটা তাড়া করা সম্ভব ছিল।’ এমনকি লক্ষ্যটা ১৫০ পর্যন্ত থাকলেও নাকি সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ভারত করে ফেলল ১৬৬! এটাকে ব্যর্থতা মেনেই মাশরাফি আশ্বাস দিলেন, ‘আশা করি পরের ম্যাচে ভুলগুলো শুধরে আমরা ফিরে আসব।’
এসব ভুল-ত্রুটির মধ্যে ভারত ম্যাচে একটা ইতিবাচক দিকও দেখছেন মাশরাফি। সেটা হলো ১৪ ওভার পর্যন্ত ভারতের ব্যাটিংকে লাগাম পরিয়ে রাখতে পারা। এরপরই বাংলাদেশের হাত থেকে সেই নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই রোহিত শর্মার। সে জন্য ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রশংসাও পেলেন তিনি, ‘ওই সময় ভালো একটা জুটির দরকার ছিল। রোহিতের ইনিংসটা সে জন্যই বিশেষ কিছু। বোলারদের গতি কাজে লাগিয়ে কিছু কাট শট খেলেছে, যেটা খুবই দরকার ছিল। এই উইকেটে ১৪০-ই ভালো স্কোর। আমরা তবু ১৫-২০ রান বেশি করতে পেরেছি।’
ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে এই ১৫-২০ রানকে বড় প্রভাবক মানছেন দুই অধিনায়কই। এখানে আবারও চলে আসে সাকিবের ক্যাচ ফেলার প্রসঙ্গটা। রোহিত যদি ২১-এই আউট হয়ে যেতেন…! দিন শেষে এ রকম অতৃপ্তি থাকে বলেই হয়তো খেলাটা টি-টোয়েন্টি। ছোট গল্পের মতো শেষ হয়েও থেকে যায় যার রেশ।

স্কোরকার্ড
টস: বাংলাদেশ
ভারত
রান বল ৪ ৬
রোহিত ক সৌম্য ব আল আমিন ৮৩ ৫৫ ৭ ৩
ধাওয়ান ব আল আমিন ২ ৪ ০ ০
কোহলি ক মাহমুদউল্লাহ ব মাশরাফি ৮ ১২ ১ ০
রায়না ব মাহমুদউল্লাহ ১৩ ১৩ ২ ০
যুবরাজ ক সৌম্য ব সাকিব ১৫ ১৬ ১ ০
পান্ডিয়া ক মাহমুদউল্লাহ ব আল আমিন ৩১ ১৮ ৪ ১
ধোনি অপরাজিত ৮ ২ ০ ১
জাদেজা অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ২, ও ৩) ৬
মোট (২০ ওভারে, ৬ উইকেটে) ১৬৬
উইকেট পতন: ১-৪ (ধাওয়ান ১.৩ ওভার), ২-২২ (কোহলি, ৪.৩), ৩-৪২ (রায়না, ৭.৫), ৪-৯৭ (যুবরাজ, ১৪.৫), ৫-১৫৮ (রোহিত, ১৯.২), ৬-১৫৮ (পান্ডিয়া, ১৯.৪)।
বোলিং: তাসকিন ৩-০-২২-০, আল আমিন ৪-০-৩৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৪০-০ (ও ২), মাশরাফি ৪-০-৪০-০ (ও ১), মাহমুদউল্লাহ ২-০-৯-১, সাকিব ৩-০-১৫-১।
বাংলাদেশ
সৌম্য ক ধোনি ব বুমরাহ ১১ ১৪ ১ ০
মিঠুন ব নেহরা ১ ৩ ০ ০
সাব্বির ক ধোনি ব পান্ডিয়া ৪৪ ৩২ ২ ২
ইমরুল ক যুবরাজ ব অশ্বিন ১৪ ২৪ ১ ০
সাকিব রানআউট ৩ ৮ ০ ০
মুশফিক অপরাজিত ১৬ ১৭ ২ ০
মাহমুদউল্লাহ ক রোহিত ব নেহরা ৭ ৬ ১ ০
মাশরাফি ক জাদেজা ব নেহরা ০ ১ ০ ০
তাসকিন অপরাজিত ১৫ ১৫ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৪, ও ৬) ১০
মোট (২০ ওভারে, ৭ উইকেটে) ১২১
উইকেট পতন: ১-৯ (মিঠুন, ২.২), ২-১৫ (সৌম্য, ৩.২), ৩-৫০ (ইমরুল, ৯.৫), ৪-৭৩ (সাকিব, ১২.৩), ৫-৮২ (সাব্বির, ১৪.১), ৬-১০০ (মাহমুদউল্লাহ, ১৬.৩), ৭-১০০ (মাশরাফি, ১৬.৪)।
বোলিং: নেহরা ৪-০-২৩-৩ (ও ১), বুমরাহ ৪-০-২৩-১, পান্ডিয়া ৪-০-২৩-১ (ও ৩), অশ্বিন ৪-০-২৩-১, জাদেজা ৪-০-২৫-০ (ও ২)।
ফল: ভারত ৪৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোহিত শর্মা।

23 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here