আজ ফাইনাল স্বপ্নপূরণের ……………

11
225

মুখোমুখি বাংলাদেশ–ভারতদুই দিন ধরে মিরপুরে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ ‘ফাইনাল’ নয়, ‘টিকিট’।
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো একটা ফাইনাল খেলা হবে অথচ টিকিট-সংকট থাকবে না, সে তো প্রায় অসম্ভব। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ এশিয়া কাপের ফাইনাল এবং যথারীতি দেশজুড়ে তীব্র টিকিট-সংকট। ‘দেশজুড়ে’ না বলে বলা উচিত ‘মিরপুরজুড়ে’। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাত্র ২৪-২৫ হাজার আসন তো স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকার মানুষকেই বসার জায়গা দিতে পারে না! দেশের অন্যান্য শহর দূরের কথা, ঢাকা শহরের মানুষের জন্যই ‘টিকিট’ এক সোনার হরিণের নাম। এশিয়া কাপের বাংলাদেশ-ভারত স্বপ্নের ফাইনালকে ঘিরে পুরোনো প্রশ্নটাই তাই সামনে নিয়ে এল। ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ ১৬ কোটি মানুষের দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির ধারণক্ষমতা মাত্র ২৫ হাজার হবে কেন?
ভবিষ্যতে কোনো একদিন হয়তো এই ধারণক্ষমতা বাড়বে। তবে তত দিনে এই দেশের লোকসংখ্যা কত কোটিতে গিয়ে ঠেকবে সেটাই প্রশ্ন। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় ম্যাচ দেখার ‘অধিকার’ শুধু প্রভাবশালীদের। আমজনতা দর্শক টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভে মৃদু ভাঙচুর করে কাঁদানে গ্যাস খেয়ে বাড়ি ফিরে যান। তারপর টেলিভিশনেই খেলা দেখে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকার করতে থাকেন। তাতে সরাসরি খেলা দেখার তৃপ্তি না পেলেও আবেগের ঘোড়া সেখানেও বল্গাহারা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি এই দর্শক-সমর্থকই। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের ‘বাঘ হয়ে ওঠা’র টনিকও। তবে ভারতীয় দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী ভারতের জয়ের পথে এটিকে বড় বাধা বলে মানেন না। মিরপুরে কাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘আমরা এসবে অভ্যস্ত। সব দর্শক বাংলাদেশকে সমর্থন করলেই বা কী আসে-যায়!’
বাংলাদেশের সব প্রতিপক্ষেরই সৌভাগ্য যে, এ দেশের কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর ধারণক্ষমতাই ২৫ হাজারের বেশি নয়। গ্যালারির ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারটা তাই তাদের জন্য সহনীয় পর্যায়েই থাকে। তবে বাংলাদেশ দল বঞ্চিত হচ্ছে মাঠে দাঁড়িয়ে আরও বেশি লাল-সবুজ পতাকা দেখা থেকে। মাঠে এসে খেলা দেখার আশা সবার পূরণ হবে না, মাশরাফিরা পাবেন না ৫০ হাজারের বেশি হাতের তালি—এই সত্য মেনে নিয়েই আজ আরেকটি ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশ দল। ২০১২-এর ২ রানের আক্ষেপ ঘুচিয়ে তারা কি পারবে এশিয়া কাপের ট্রফি তুলে ধরতে? আজ কেমন হবে বাংলাদেশের রাতটা? আলোর ঝরনাধারায় উজ্জ্বল, নাকি আরও একবার হতাশার কালো চাদরে ঢাকা পড়বে চরাচর?
বাংলাদেশ দল আশাবাদী, চার বছর আগের হতাশার ক্ষত শুকিয়ে যাবে জয়ের উত্তাপে। শক্তির তারতম্যে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের এগিয়ে থাকা অস্বীকার করার উপায় নেই।
টানা তিন জয়ের আগে এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশ শুরু করেছে তাদের কাছে হেরেই। তবে স্বপ্নযাত্রা প্রতিবারই আক্ষেপের সমুদ্রে মিশবে, এমনটা বিশ্বাস করেন না অধিনায়ক। আজকের ফাইনালকে তিনি একটা আলাদা ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন, ‘ফাইনাল বলে এই ম্যাচের মেজাজ আলাদা হবেই। তবে আমাদের কাছে এটা স্রেফ আরেকটা ম্যাচই। গত তিন ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই।’
খেলোয়াড়দের মনে এ রকম আশার বসতিকে বলে আত্মবিশ্বাস। কিন্তু যখন প্রত্যাশার পাল ওড়ায় ১৬ কোটি মানুষ, সেই আত্মবিশ্বাস পড়ে যায় প্রবল চাপে। মাশরাফি শুরু থেকেই চেষ্টা করছেন প্রত্যাশার পারদকে নিচে নামিয়ে রাখতে। কিন্তু ফাইনালের উত্তাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে কি আর সেটা সম্ভব? অধিনায়ক তাই এখন একটাই করণীয় দেখছেন, আর সব বাদ দিয়ে শুধু ম্যাচ নিয়ে ভেবে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।

11 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here