২০১৫ সালের সেরা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ‘সিআরআইএসপিআর’

8
237
images (13)

২০১৫ সালের সেরা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ‘সিআরআইএসপিআর’

সায়েন্স সাময়িকীর চোখে এ বছরের সেরা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন হিসেবে উঠে এসেছে ‘সিআরআইএসপিআর’ বা ক্রিস্প সেরা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য ও ওষুধ শিল্পে সম্ভাব্য বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েনামের জিন সম্পাদনার পদ্ধতি।‘সিআরআইএসপিআর’ বা ক্রিস্প নামের জিন সম্পাদনার একটি প্রযুক্তি এ বছর ছে এই পদ্ধতিটির। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সায়েন্স সাময়িকী ২০১৫ সালের সেরা বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন হিসেবে ‘সিআরআইএসপিআর’ পদ্ধতিটির নাম ঘোষণা করেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনের গবেষকেরা জিন সম্পাদনার বিশেষ এ পদ্ধতিটি মানুষের ভ্রূণে পরীক্ষা চালালে তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

images (13)

বিতর্কিত এ ধরনের গবেষণা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন গবেষকেরা। তবে এই পদ্ধতিটির সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে সায়েন্স সাময়িকীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাময়িকীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জন টার্ভিস বলেন, ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগের জন্য টিস্যুভিত্তিক এই পদ্ধতিটির প্রয়োগ শুরু করেছেন গবেষকেরা। এ পদ্ধতির ফলে প্রাণীর দেহে তৈরি প্রত্যঙ্গ মানব শরীরে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। মাত্র তিন বছর আগে উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক গবেষক ও শিক্ষার্থী কাজ শুরু করেছেন।

টার্ভিস বলেন, ‘২০১২ সালে এ ই পদ্ধতিটির উদ্ভাবন হলেও গত বছরে এটি বেশি নজর কেড়েছে। এটি আণবিক বিস্ময়।’

‘সায়েন্স’ সাময়িকীগুলোর প্রধান সম্পাদক মার্সিয়া ম্যাকনাট বলেন, ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি যেভাবে আগ্রহ তৈরি করেছিল আগামী দুই বছরের মধ্যে বায়োলজির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকের সূচনা করবে ক্রিস্প প্রযুক্তি। ২০১৩ সালে ইমিউনোথেরাপি সায়েন্স সাময়িকীতে বর্ষসেরা উদ্ভাবনের তালিকায় শীর্ষে ছিল।

সায়েন্স সাময়িকীর ওয়েবসাইটে পাঠকের ভোটে অবশ্য সেরা বৈজ্ঞানিক ঘটনা হিসেবে ক্রিস্প পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার পাঠানো নিউ হরাইজনসের প্লুটোর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার ঘটনা। ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে নিউ হরাইজনস। ক্রিস্প পেয়েছে ২০ শতাংশ ভোট।

জিন কাট-পেস্ট পদ্ধতি
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে হয়তো জন্মের আগেই ঠিকঠাক করে রাখা বা নকশা করে রাখা শিশু (ডিজাইনার বেবি) ও ‘সম্পাদনা করা’ মানুষের জন্মের ঘটনার কথা শুনেছেন। কিন্তু ক্রিস্প পদ্ধতির কল্যাণে এখন তা বাস্তবতার কাছাকাছি চলে এসেছে। চীনের একদল গবেষক এ বছর দাবি করেছেন, তাঁরাই প্রথম জিন সম্পাদনা পদ্ধতি ব্যবহার করে জন্মের আগেই ঠিকঠাক করে ‘নকশা করে রাখা’ কুকুর ছানার (ডিজাইনার ডগস) জন্ম দিতে পেরেছেন।

এই কুকুর ছানাগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মেছে। টিয়াংগু ও হারকিউলিস নামের বিরল প্রজাতির দুটি কুকুর ছানাকে আরও পেশিবহুল হয়ে জন্মাতে সহায়তার করার দাবি করেছেন চীনের গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিসিন অ্যান্ড হেলথের গবেষকেরা। এ প্রজাতির কুকুরের মায়োস্টাটিন নামের একটি জিন সরিয়ে দিয়ে এ পরিবর্তন ঘটান তাঁরা। এ ক্ষেত্রে জিন সম্পাদনার প্রযুক্ত ‘সিআরআইএসপিআর-ক্যাস-৯’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনা গবেষকেরা। এটি অনেকটাই কম্পিউটারের ‘কাট-অ্যান্ড-পেস্ট’ প্রক্রিয়ার মতো। ডিএনএর নির্দিষ্ট অংশ কেটে এনে জীবন্ত প্রাণীর ডিএনএতে বসিয়ে দেওয়া হয় এ পদ্ধতিতে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ চার্চ বলেন, ‘মানুষসহ যেকোনো প্রাণীর কোষে ডিএনএ সম্পাদনার ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে ভালো ও দক্ষ পদ্ধতি।’

ক্রিস্প বিতর্ক
ক্রিস্প পদ্ধতিটি খুব সাধারণ হওয়ায় মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা। এ বছরের এপ্রিল মাসে আরেকটি চীনা প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণাগারে মানুষের ভ্রূণ নিয়ে পরীক্ষার কথা জানালে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল ওঠে। ওই প্রতিষ্ঠানটির দাবি ছিল, বেটা-থ্যালাসেমিয়া রোগ সারাতে তারা মানব ভ্রূণ নিয়ে এ গবেষণা চালিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল গবেষকের দাবি, বিতর্কিত যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে মানব ভ্রূণে জিনগত পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা নিরাপদ কি না বা প্রযুক্তিগত কোনো ত্রুটি আছে কি না, এসব প্রভাব খতিয়ে দেখার আগ পর্যন্ত এ ধরনের গবেষণা করা ঠিক হবে না। তাঁরা বলছেন, বিশেষ জার্ম লাইন প্রক্রিয়ায় জিনগত যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা বিপজ্জনক ও নৈতিকতাবিরোধী। এই পদ্ধতিতে মানুষকে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত বা ইচ্ছানুযায়ী সন্তান নিতে উত্সাহী করবে। মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত জিনগুলোই কেবল ভ্রূণের মধ্যে চাইবে। এতে কেবল ‘নকশা করা’ শিশু জন্ম দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

কিছু গবেষক এ ধরনের গবেষণার ফল অনৈতিক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা করলেও কিছু গবেষক মনে করছেন, ক্যানসারের মতো কিছু রোগের চিকিৎসায় এ ধরনের গবেষণা কাজে লাগানো যাবে।
গবেষকেরা বলেন, প্রযুক্তিটি যেহেতু একেবারেই নতুন, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো অজানা। তাই প্রাণী ও প্রাপ্তবয়স্কদের আগে পরীক্ষা করে দেখাই শ্রেয়।

8 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here