বহুল আলোচিত পানামা পেপারস কী ও কেন

20
427

বহুল আলোচিত পানামা পেপারস কী ও কেন

ঢাকা: এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় তথ্যফাঁসের ঘটনা ‘পানামা পেপারস’ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অর্থপাচারের বিষয়ে এক কোটি ১৫ লাখ নথি ফাঁস হয়েছে। মোসাক ফনসেকা নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে এসব ব্যক্তির আইনি সহায়তা দিত বলে জানা গেছে। জার্মানির একটি পত্রিকার সূত্রে এসব নথি প্রকাশিত হয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে।

যা প্রকাশিত হয়েছে:
কর ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা কিভাবে অর্থ পাচার করতেন সে বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে প্রকাশিত এসব নথিতে। হেভিওয়েট এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ১২ জন রাষ্ট্রীয়নেতাসহ ১৪৩ জন রাজনীতিবদ, তাদের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীরা যারা এই প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিত। অবৈধভাবে অর্জিত অগাধ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে মোসাক ফনসেকা পরামর্শ দিত এদের।
বিশাল এই অর্থ কেলেঙ্কারি সাথে জড়িয়ে আছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধু ও একান্ত কাছের লোক সের্গেই রোল্ডুগিন। তার সহযোগিতায় রাশিয়ান স্টেট ব্যাংক থেকে এসব অর্থ পাচার হয়েছে।

মোসাক ফনসেকার পরিচিত:
পানামাভিত্তিক একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা। বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিগুলোকে আইনি সহায়তা দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি। বার্ষিক হারে অর্থের বিনিময়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি সম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও কাজ করে এটি। প্রতিষ্ঠানটি মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাভিত্তিক হলেও এর কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের ৪২টি দেশের ৬০০ জন লোক এটির নেটওয়ার্কে কর্মরত। বিশ্বব্যাপী তাদের বিভিন্ন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মোসাক ফনসেকার নাম ও দক্ষতা ব্যবহার করে গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটি সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্সমুক্ত দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

কর্মপরিধির দিক থেকে মোসাক ফনসেকা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তিন লাখেরও বেশি কোম্পানির হয়ে কাজ করে এটি। ব্রিটেনের সাথে রয়েছে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এদের গ্রাহকের অর্ধেকেরও বেশির অবস্থান ব্রিটেনশাসিত এলাকাগুলোয়।

কী পরিমাণ তথ্য ফাঁস হয়েছে:
এযাবৎকালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যফাঁসের ঘটনা এটি। ২০১০ সালে উইকিলিকস কিংবা ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্লোডেনের ফাঁসকৃত নথির চেয়ে ‘পানামা পেপারস’ সংখ্যায় অনেক বেশি। সব মিলে এক কোটি ১৫ লাখ নথি ও মোসাক ফনসেকার নিজস্ব ডাটাব্যাজ থেকে ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য ফাঁস হয়েছে।
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ কি বৈধ?

কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আইনি সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়া বৈধ। এর অনেক কারণ রয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতো দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা কৌশলগত কারণে তাদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। সন্ত্রাসীদের হানা ও মুদ্রাসংক্রান্ত আইনি জটিলতা থেকে বাঁচতে তারা এটি করে থাকেন। আবার অনেকে উত্তরাধিকারী মনোনয়ন ও রাষ্ট্র পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটা করে থাকেন।

তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ব্যবস্থাপনার কাজে সহায়তা করে এসব প্রতিষ্ঠান। গত বছর সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও অর্থ পাচারকারীরা এসব বেনামি কোম্পানির সুবিধা নিয়ে থাকে। সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। এমন একটি ডাটাব্যাজ তৈরি করা হবে যেখানে এসব সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের তালিকা থাকবে। আগামী জুন মাস থেকেই ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মালিকদের নাম প্রকাশ করতে হবে।

ফাঁসের বিষয়ে মোসাক ফনসেকার বক্তব্য:
গ্রাহকের গোপনীয়তার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি এই অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করবে না। প্রবলভাবে তারা নিজেদের কাজকে সমর্থন করছে। অর্থপাচারবিরোধী আইন কঠোরভাবে মেনে চলছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, তাদের গ্রাহকেরাও এই আইন মেনে চলে বলে দাবি তাদের। পেশাগত যেকোনো অদক্ষতার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করবে এবং তা প্রতিরোধ করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। ব্যাংক, আইনি প্রতিষ্ঠান কিংবা হিসাবরক্ষকসহ মধ্যস্থতাকারীদের কোনো ভুলের দায় তারা নেবে না বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

20 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here