সুলতান সুলেমান (পর্ব-২)
সুলতান সুলেমান (পর্ব-২)
[পূর্ব প্রকাশের পর]
মাহিদেভরানের ঘুমিয়ে পড়ারই কথা। নাকি সুলেমানের আশায় নির্ঘুম জেগে আছেন? এটা অবশ্য হওয়ার কথা নয়, কারণ তিনি জানেন যুবরাজ সুলেমান তার হারেমে ব্যস্ত। স্ত্রীর কথা মনে করে একটু যেন অন্যমনস্ক হয়ে ওঠলেন সুলেমান।
হেরেমের বিষয়টা মাহিদেভরান কখনোই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। শুরু থেকেই দারুণ অস্বস্তি দেখা গেছে তার। কেবল কষ্ট পান। সুলেমান সেটা টের পেয়েছেন আরও আগেই। প্রথমদিকে সুলেমান তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এটাই অটোমান সাম্রাজ্যের রীতি। এ রীতির বাইরে কেউ যেতে পারে না। শাসক আর রাজরক্তের ঐশ্বর্য এ প্রথা। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে এটাই চলে এসেছে। শুধু অটোমান সাম্রাজ্যেই নয়, প্রাচ্যের মুঘল সাম্রাজ্যেও রয়েছে হারেমের প্রচলন। পত্নী-উপপত্নী আর রক্ষিতাদের নিয়ে শাসকদের জীবন মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ স্বাভাবিক ঐশ্বর্যমণ্ডিত রীতির বাইরে কে যেতে চাইবে? কিন্তু সুলেমানের সেসব কথা মাহিদেভরানের মন ভরাতে পারেনি কখনোই। তিনি নীরবে কেবল অশ্রুই ঝরিয়েছেন। এখন সেটা অভ্যাসেই পরিণত হওয়ার কথা।
কেন হবে না? বিয়ের চার বছরের মধ্যে পাল্টে গেছে অনেককিছুই। সুলেমানের কাছে মাহিদেভরানের আবেদন যেমন খানিকটা কমেছে, তেমনি ঘরকুনো হয়ে গেছেন মাহিদেভরানও। তাতে কি? প্রিয় স্বামী বলে কথা! মনের ভিতর অভিমানের মেঘ জমা কি আর বন্ধ হয়? তাই বলে সেই অভিমানের মেঘ গলিয়ে প্রশান্তির বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা অনেক আগেই ছেড়েছেন সুলেমান। মাহিদেভরানের অনেক অভিমানই এখন আর আমলে নেন না তিনি। অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসার স্বপ্নই শুধু নয় এ সাম্রাজ্যকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সালতানাতে পরিণত করার একটা অভিসন্ধিও মনের ভিতর সযত্নে লালন করছেন তিনি। তাই সাধারণে নয়, বৈচিত্র্যে বেড়ে উঠাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য তার। তুর্কি সালতানাতের উত্তরসূরি হিসেবে এখানকার সব রীতি-রেওয়াজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। স্ত্রীর মন জুগিয়ে চললে আর যাই হোক রাজকার্য চালানো সম্ভব নয়!
রাজকার্য বড়ই বিচিত্র জিনিস। এ অটোমান সাম্রাজ্যে এখনো পর্যন্ত খুব কম সুলতানই আছেন যারা নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি ছাড়া সালতানাত পেয়েছেন। সিংহাসনের লোভে ভাই, জন্মদাতা পিতা পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ভাই কিংবা সন্তানের তলোয়ারের আঘাতে। তবু পরিবার— পরিবারই। নইলে এমন বিক্ষিপ্ত ভাবনার মধ্যেও স্ত্রী মাহিদেভরান আর সন্তান মুস্তফার কথা কেন মনে পড়বে সুলেমানের?
নগরে রাত এসেছে আরও আগেই। অন্ধকারের প্রলেপ প্রকট হচ্ছে আস্তে আস্তে। মানিসার প্রাসাদেও তাই সুনসান নীরবতা। বাবার কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে মুস্তফা। পাশেই চোখ মেলে শুয়ে আছেন মাহিদেভরান। ঘুমানোর চেষ্টা তিনিও করেছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কিছুতেই এক করতে পারছেন না দুই চোখের পাতা। কতক্ষণ ছটফট করার পর পুত্র মুস্তফাকে বুকের সঙ্গে লেপ্টে ধরলেন। ভিতর থেকে হু হু করা কান্নার রোল উঠল। কিছুতেই ধরে রাখতে পারলেন না চোখের পানি। পাছে মুস্তফার ঘুম ভেঙে যায়, এই ভয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। জামার আঁচলে চোখ মুছলেন। কী একটা ভেবে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন আয়নার সামনে। চোখ জোড়া স্থির হয়ে রইলো নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। তাহলে কী এখন আর তাকে ভালো লাগে না সুলেমানের?
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবারও অশ্রুসজল হয়ে উঠল চোখ জোড়া। আয়নায় চিক চিক করছে মাহিদেভরানের চোখ গড়িয়ে পড়া অশ্রুজল। দুহাত দিয়ে ভালোমতো চোখের পানি মুছলেন তিনি। এরপর শান্ত হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। কপালের ওপর উঠে আসা কপাটি অগোছালো চুল গুছিয়ে নিলেন। চোখের নিচটায় কেমন যেন কালো কালো লাগছে। আয়নার দিকে ঝুঁকে স্পষ্ট দেখার চেষ্টা করলেন। আসলেই তো! একটু যেন কালি পড়েছে!
এরপর পেছন ফিরে আয়নার দিকে ফের তাকালেন। যেন অনেক দিন বাদে নিজের শরীরের জরিপ করছেন নিজেই। পাশ ফিরে একবার মুস্তফার দিকে তাকালেন মাহি। ছেলেটা গভীর ঘুমে। তারপর হুট করেই নিজের গায়ের আবরণটুকু এক ঝটকায় খুলে ফেললেন। কাপড়টাকে ছুড়ে মারলেন ঘরের আরেক প্রান্তে।
মাহিদেভরানের শরীরে এখন এতটুকু সুতো পর্যন্ত নেই! সম্পূর্ণ বিবস্ত্র। আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। দুই বুকের মাংসপিণ্ডে হাত রেখে অনুভবের চেষ্টা করলেন নিজের মোহনীয় ক্ষমতা। আবেশে চোখ দুটি মুদে এলো যেন। অ্যাক্রোবেটদের মতো ঘুরে ঘুরে নিজেকে পরখ করতে লাগলেন। মনের ভিতর প্রশ্ন পোকা কিড়মিড় করছে। তবে কি যৌবনে ভাটা পড়ল? নাকি মুস্তফার আগমনের পর তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন সুলেমান। নইলে এমন কেন হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলে না কিছুতেই। এভাবেই কিছুক্ষণ আয়নার সামনে কেটে গেল। দূরে কোথাও কিসের একটা শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলেন।
ঘুরে দাঁড়ালেন নিমিষেই। সাদা কাপড়ে নিজের লজ্জা ঢাকলেন। হাম্মামখানায় গোসলের সময় আর ঘুমের আগে মেয়েরা এক প্যাঁচে যেমন কাপড় বেঁধে নেয়, সেরকম করে পেঁচিয়ে নিলেন। মুস্তফার কাছে গিয়ে ছোট্ট করে তার গালে একটা চুমু খেলেন। হৃদয় ভেদ করা একটা দীর্ঘশ্বাসে ঘরের বাতাস ভারি হয়ে উঠল। প্রিয় সন্তানকে বিছানায় রেখে বাইরের বারান্দায় চলে এলেন মাহি। সুলেমান নিশ্চয়ই হারেমে কোনো সুন্দরীর বুকের সুবাসে প্রাণ ভরাচ্ছেন!
আকাশের দিকে তাকিয়ে সুলেমানের সঙ্গে পরিচয়-প্রণয়ের প্রথম দিনগুলো মনে করতে লাগলেন মাহি। তার যখন খুব একা লাগে, নিঃসঙ্গ মনে হয় নিজেকে, তখন তিনি তার পুরনো দিনের কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করেন। জাগরূক করতে চান নিজের সুখের স্মৃতিগুলো। এতে বুকের ভিতরের হাহাকারের মাত্রা কমে আসে। অপ্রাপ্তির দহনে পুরনো প্রাপ্তির স্পর্শ খানিক প্রশান্তি এনে দেয়। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন জাপ্টে ধরল মাহিদেভরানকে। অপ্রত্যাশিত বটে, তবে অসংলগ্ন নয়। এ হাত, শরীরের এই গন্ধ মাহির অনেক চেনা।
নিশ্চয়ই সুলেমান।
মাহিদেভরান এক ঝটকায় পেছন ফিরে তাকালেন। সত্যিই দাঁড়িয়ে যুবরাজ সুলেমান। মুখে মৃদু হাসির রেশ। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব মাহিদেভরান। কিছুতেই আশা করেননি এত রাতে সুলেমান স্ত্রীর কাছে ফিরবেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্বামীর বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে ওঠলেন তিনি। কয়েক মিনিট কেটে গেল, কিন্তু মাহির কান্না যেন আর থামে না।
সুলেমান কী করবেন বুঝে ওঠতে পারেন না। বুক থেকে স্ত্রীর মাথা তুলে চোখ মুছে দিলেন কয়েকবার। তবু থামছে না অশ্রুবর্ষণ।
এরপর মাহিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ঠোঁট দুটিকে মুখে পুড়ে নিলেন। একটা একটা করে সেকেন্ডের হিসাব কয়েক মিনিটে গিয়ে ঠেকল। প্রবল বিক্রমে একে অন্যের সংস্পর্শে যুবরাজ সুলেমান আর মাহিদেভরান। বিষণ্ন কবি আর বঞ্চিত স্ত্রী দুজনেই ১০ মিনিট আগের ভাবনা ভুলে আদি মানব আদি মানবীতে রূপায়িত হয়েছেন। আদরে আদরে কুপোকাত সব অপূর্ণতা অস্থিরতার জঞ্জাল। মানিসার রাতের নিস্তব্ধতা তখন আর কোনো দীর্ঘশ্বাসের সাক্ষী হলো না। গরম নিঃশ্বাসের ব্যঞ্জনায় মুখরিত হলো কেবল।
পেছনে পড়ে রইল যুবরাজের হারেম।
পেছনে পড়ে রইল হ্যারানসিনা রহস্য।
পেছনে পড়ে রইল মাহিদেভরানের শত জিজ্ঞাসা।
মুহিব আগা কিংবা পারগালি ইব্রাহীমের দুর্ভাবনাও আমলে এলো না।
ঘুমন্ত মুস্তফার উপস্থিতির খেয়ালটাও হারিয়ে গেছে মন থেকে।
সুলেমানের আলেকজান্ডার হয়ে ওঠার স্বপ্ন কিংবা মাহিদেভরানের আকর্ষণী ক্ষমতা হারানোর শঙ্কাও বিবেচনায় এলো না।
কেবল মানব আর মানবীর চিরন্তন সম্পর্কটাই ঢেউ খেলাল।
রাতের গভীরতায় প্রশান্তির নরম আবেশ আসল এক সময়।
সে আবেশে মুদে এলো সুলেমান এবং মাহিদেভরানের চোখ।
‘সুলেমান, আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’
ধীরে ধীরে, গাঢ় অথচ অনুচ্চ স্বরে কথাগুলো বললেন মাহিদেভরান। প্রতিটা শব্দ যেন বিন্দু বিন্দু রক্ত হয়ে ঝরে পড়ল ওর ঠোঁট থেকে। জবাবে সুলেমান আরেকবার সেই ঠোঁটকে নিজের ঠোঁটের আশ্রয় বানালেন।
কনস্টান্টিনোপল থেকে দূত এসেছে। সার্বা সালেকিন নামের খর্বাকায় মানুষটি সুলেমানের খুব পছন্দের। এটা সবার জানা বলেই তিনি আলাদা সম্মান পান। তাই আসা মাত্রই মানিসার প্রাসাদে আপ্যায়নের ব্যবস্থা হলো তার জন্য। পারগালি ইব্রাহীম নিজে এর তদারকি করছেন। সার্বা সালেকিনের চেহারার দিকে তাকিয়েই ইব্রাহীম অনুমান করতে পারছেন যে নিশ্চয়ই বড় কোনো খবর নিয়ে এসেছে। আবার সালেকিন নিজেও দ্রুত সুলেমানের দেখা পাওয়ার আর্জি জানিয়েছে। ইব্রাহীম চাইলেই ভিতরের খবরটা জেনে নিতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সুলেমানের আসার কথা। একটু অপেক্ষা করাই বরং ভালো। তাই এখন আর এ বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। কেবল তার পরিবার-পরিজন আর অন্যদের খবর নিল। এর মধ্যেই সালেকিন বলল,
‘যুদ্ধের খবর আছে। খুশির খবর।’
সঙ্গে সঙ্গে তাকে থামিয়ে দিলেন পারগালি ইব্রাহীম। বললেন.
‘থামুন। আর বলবেন না। মূল খবর যা বলার সেটা যুবরাজ সুলেমান আসার পরই বলবেন। আপাতত আপনি পানাহার সেরে নিন।’
নিজের কৌতূহল ধরে রাখলেন পারগালি ইব্রাহীম। খবরটা যুবরাজ সুলেমানেরই সবার আগে শোনা দরকার। ইব্রাহীম অনুমান করতে পারছে খবরটা নিশ্চয়ই রিদানিয়ার যুদ্ধ সংক্রান্তই হবে। কারণ এর মধ্যে অটোমানদের আর কোনো যুদ্ধের কথা শোনা যায়নি। রিদানিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি সুলেমান বেশ ব্যাকুল ছিলেন। কিন্তু পিতা সুলতান সেলিম কিছুতেই তাকে এ যুদ্ধযাত্রার সঙ্গী বানাতে রাজি ছিলেন না। সুলেমান অবশ্য তেমন জোর করেননি। মানিসায় তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে সেটি নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। নিজে যেতে পারেননি বলেই হয়তো রিদানিয়ার যুদ্ধ নিয়ে তার আলাদা একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সালেকিনের পানাহার শেষ হওয়ার আগেই সেখানে পৌঁছে গেলেন যুবরাজ সুলেমান। কুশল বিনিময় করতে করতে পাশের লাল চেয়ারটায় বসে পড়লেন তিনি। সরাসরি চলে গেলেন প্রসঙ্গে।
‘বলুন সার্বা সালেকিন, কী খবর নিয়ে এসেছেন কনস্টান্টিনোপল থেকে?’
‘সুখবর হুজুর। আমরা মামলুকদের সঙ্গে জিতে গেছি।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আব্বাহুজুর কেমন আছেন? সব ঠিকঠাকতো? বিস্তারিত জানান আমাকে।’
‘আল্লাহপাকের দোয়ায় সুলতান সেলিম বহাল তবিয়তে ঠিকঠাক আছেন। তবে তার পৌঁছতে আরও দুদিন লাগবে। আমরা দূত মারফত যুদ্ধ জয়ের খবর পেয়েছি।’
‘দারুণ খবর। যুদ্ধের বিস্তারিত কিছু জানেন আপনি?’
খুশি মনে প্রশ্ন করলেন যুবরাজ সুলেমান।
‘জি জনাব। জানি। আমাদের পরিকল্পনামতোই সব হয়েছে। রিদানিয়ার প্রান্তরের এ যুদ্ধে মামলুকদের সহজেই হারিয়ে দেওয়া গেছে।’
‘কিন্তু আমার জানা মতে মামলুকরা বেশ শক্তিশালী ছিল।’
যুবরাজের কণ্ঠে বিস্ময়। তাকে সমর্থন জানালেন সালেকিন, তবে কিছু একটা যোগ করলেন।
‘আপনার জানা বেঠিক নয় হুজুর। মামলুকরা শক্তিশালী ছিল বটে। কিন্তু আমাদের গোলন্দাজ বাহিনীর ধাক্কাটা ওরা কিছুতেই সামলে ওঠতে পারেনি। তাছাড়া জেনেসিসরা অনেকদিন পর যুদ্ধে গেছে। সবার মনোবল চাঙ্গা ছিল। স্বয়ং সুলতান সেলিম ছিলেন নেতৃত্বে। সব মিলিয়ে মামলুকরা ভড়কে গিয়েছিল।’
‘হুমম। অটোমানদের সাম্রাজ্য আরও বাড়বে। সেজন্য সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। সেনাবাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গোলন্দাজ বাহিনী। আমি আগেই বলেছিলাম— গোলন্দাজ বাহিনীকে শক্তিশালী করতে। কী ইব্রাহীম? দেখলেতো? আমার কথার প্রমাণ পেলে?’
পারগালি ইব্রাহীমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন যুবরাজ। জবাবে কেবল মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন ইব্রাহীম। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আরেকবার সালেকিনের দিকে দৃষ্টি দিলেন সুলেমান।
‘আল ঘোরীর ওই ক্রীতদাসটার কী যেন নাম…’
‘তুমান বে।’
সুলেমানকে নাম মনে করিয়ে দিলেন ইব্রাহীম।
‘হ্যাঁ। তুমান বে। তার কী অবস্থা?’
‘হুজুর প্রথমে তো সে কোনো মতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি তার। পালিয়ে গিয়ে এক শেখের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে সুলতান প্রকাশ্যে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন।’
‘তাহলে মামলুক সালতানাতের ইতি ঘটল?’
‘জি হুজুর। বর্বর মামলুকদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। এখন অটোমানদের জয়জয়কার চারদিকে। এই যুদ্ধের কারণে মক্কা ও মদিনার মতো পবিত্র শহরও অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ।’
‘দারুণ। দারুণ! মহান আল্লাহর কৃপায় সমগ্র বিশ্ব একদিন অটোমান পতাকাতলে আসবে।’
‘ইনশাআল্লাহ।’
সমস্বরে বলে উঠলেন পারগালি ইব্রাহীম ও সার্বা সালেকিন।
সুলেমানকে বেশ খুশি মনে হলো। তিনি ইব্রাহীমকে নির্দেশ দিলেন সুখবরদাতা সালেকিনকে পুরস্কৃত করার জন্য। এর মধ্যেই একজন রক্ষী এসে কুর্নিশ করল। সুলেমান ইশারায় তার আগমনের কারণ জানতে চাইল। রক্ষী মাথানত করেই জবাব দিল,
‘জনাব ইব্রাহীমের কাছে একজন অতিথি এসেছেন। তার নাম জরিয়ম জাবের।’
‘অতিথি? এ আবার কে?’
রক্ষীর কথা শোনার পর ইব্রাহীমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন সুলেমান।
‘হুজুর আপনাকে কিছুদিন আগে এক বুজুর্গের কথা বলেছিলাম। তিনি অনেক কিছু জানেন। ভাগ্য গণনা করেন।’
‘তোমার কাছে কী চায়?’
সুলেমানকে তেমন একটা আগ্রহী মনে হলো না। বিষয়টি খেয়াল করে ইব্রাহীম বললেন,
‘আমিই ডেকেছি উনাকে। তবে নিজের জন্য নয়, আপনার সম্পর্কে জানতে। আমি জানি আপনি এসব ভাগ্য গণনা করা পছন্দ করেন না। এরপরও প্রাচ্যের বিভিন্ন রাজ্যে এরকম গণকদের আলাদা মূল্য দেওয়া হয়। কেউ কেউ তো রাজগণকদের পরামর্শ নিয়েই রাজকার্য চালান।’
‘হুমম।’
ইব্রাহীম এরপরও বলে গেলেন।
‘ক্ষমা করবেন আপনার অনুমতি ছাড়াই আমি তাকে ডেকেছি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাকে আপনার সামনে হাজির করতে চাই। অটোমান সাম্রাজ্য আর ভবিষ্যৎ অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে তার কাছে কিছু কথা জেনে নেওয়া যেতে পারে। বিশ্বাস করুন আর না করুন, জানতে তো আর দোষ নেই।’
তাইতো! জানলেই কী আর বিশ্বাস করতে হবে? নিজে নিজেই ভাবলেন সুলেমান। তারপর বললেন,
‘ঠিক আছে ডাকো দেখি তোমার গণককে।’
কয়েক মিনিটের মধ্যেই জরিয়ম জাবের নামের লোকটাকে নিয়ে হাজির হলো রক্ষী। যুবরাজের সঙ্গে পরিচয়ের আগে ইব্রাহীম তাকে কী যেন বুঝিয়ে বললেন। পরিচয়পর্ব শেষে তার কাছে নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলেন যুবরাজ সুলেমান। বললেন,
‘দেখুন জরিয়ম জাবের, আমি এসবে একদম বিশ্বাস করি না। শুনেছি আপনি বুজুর্গ মানুষ। ইব্রাহীমও দারুণ প্রশংসা করল। ইব্রাহীমের কোনো কথায় আমি না বলতে পারি না। এসেছেন যখন, বলুন আমার সম্পর্কে। বলুন কী দেখতে পাচ্ছেন আমার ভবিষ্যতে?’
‘হুজুর এখানে আসার আগেই মহামান্য পারগালি ইব্রাহীম আপনার সম্পর্কে গণনা করে আসতে বলেছেন। তাই আমার জানা হয়ে গেছে এ গোটা শতকটাই আপনার হবে। আপনি হয়ে ওঠবেন অবিশ্বাস্য রকম সফল একজন মানুষ। বিশ্ব ইতিহাসে নিজের নামটা সোনার হরফে লেখার মতো বর্ণিল জীবন হবে আপনার।’
‘মানে?’
খানিক বিদ্রূপের হাসি হেসে গণককে জিজ্ঞেস করলেন যুবরাজ। কিন্তু সেটা মোটেও আমলে নিল না গণক। বরং ব্যাখ্যায় মনোযোগী হলো সে।
‘হুজুর আপনি নিশ্চয়ই জানেন এ প্রাচ্যদেশীয় ঐতিহ্য মতে প্রতিটি শতকের শুরুতে একজন মহামানব জন্মগ্রহণ করেন। যিনি তার আলোয় সবাইকে আলোকিত করেন। এ শতকের স্বর্গের সেই দেবদূত আর কেউ নন আপনি নিজে…যুবরাজ সুলেমান।’
আবার হাসলেন সুলেমান। বললেন,
‘কিন্তু কীভাবে?’
‘দেখুন…আমার গণনা আর অটোমান সাম্রাজ্যের বর্তমান অবস্থা সাক্ষ্য দিচ্ছে আপনি হতে যাচ্ছেন অটোমান সাম্রাজ্যের দশম সুলতান। আর এই ‘দশ’ সংখ্যার সব আশীর্বাদ আপনার সঙ্গে থাকবে। মানুষের হাত পায়ের দশ আঙ্গুল-দশ অনুভূতি, কোরআনের দশ অংশ, পেন্টাটিউকের দশ আজ্ঞা, নবীর দশ শিষ্য, ইসলামীয় স্বর্গের দশ আকাশ এবং পথপ্রদর্শক দশ আত্মা। আপনার সৌভাগ্য, মেধা, বীরত্ব আর ন্যায়বিচার আপনাকে করে তুলবে অন্য সবার চেয়ে আলাদা, অনন্য।’
‘সুবহানাল্লাহ।’ সুলেমান কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন পারগালি ইব্রাহীম।
[চলবে…আগামী শনিবার পরবর্তী পর্ব]
lipitor 80mg price order lipitor 80mg online cheap buy atorvastatin 20mg sale
buy lipitor 10mg pill buy generic atorvastatin 40mg order lipitor 40mg sale
buy ciprofloxacin pills – buy generic baycip augmentin sale
order generic cipro – buy amoxiclav pills augmentin 375mg sale
ciprofloxacin usa – buy bactrim 480mg online cheap cost augmentin 625mg
order retrovir 300 mg without prescription – cost allopurinol 300mg
clozapine 50mg brand – frumil 5 mg generic purchase pepcid sale
buy zidovudine pill – roxithromycin 150 mg usa zyloprim 100mg cost
order clozapine 100mg without prescription – coversyl cheap pepcid for sale online
buy generic quetiapine 100mg – purchase bupropion without prescription cheap eskalith
where to buy anafranil without a prescription – buy generic amoxapine over the counter order sinequan 75mg for sale
order quetiapine 100mg without prescription – buy desyrel online eskalith order
clomipramine 50mg drug – paroxetine online buy buy doxepin 75mg for sale
order atarax – escitalopram order online buy generic amitriptyline 10mg
order atarax generic – purchase buspin pills amitriptyline 10mg drug
augmentin 375mg without prescription – septra buy online cipro 1000mg canada
buy generic amoxicillin for sale – purchase keflex order baycip for sale
buy clavulanate pills – purchase ethambutol generic cipro 1000mg tablet
amoxil tablet – amoxicillin pills buy ciprofloxacin without prescription
cleocin order online – buy clindamycin tablets buy chloramphenicol without a prescription
zithromax order online – floxin 200mg canada order ciplox 500 mg online
buy zithromax – ofloxacin 200mg without prescription ciplox 500 mg oral
clindamycin cheap – purchase oxytetracycline for sale purchase chloramphenicol generic
ivermectin 3 mg online – levaquin generic buy cefaclor 500mg without prescription