চলুন জানি একটি রহস্যময় প্রাচীন চায়না সভ্যতা এবং অমিমাংসিত কিছু প্রাকৃতিক রহস্য সম্পর্কে।

8
561

অতভুত ঘটনা

রহস্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ সীমাহীন।সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকে মানুষ ছুটেছে রহস্যের পিছনে। সৃষ্টির শুরুতে সকল কিছুই ছিল রহস্যে ঘেরা।আস্তে আস্তে মানুষের প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে আর মানুষ খুজে বের করেছে তার কারন।৫০বছর আগে যা আমরা কল্পনা করতে পারতাম না বর্তমানে প্রযুক্তির কারনে তা এখন ডালভাত।তবুও এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা আছে যে গুলোর কারন সম্পর্কে আজও ভালভাবে জানা যায়নি বা অন্য ভাবে বলতে গেলে ব্যখ্যাতীত তবুও বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য কিছু ব্যখ্যা দিয়েছেন তাও অতটা স্পস্ট নয়।এগুলো সাধারনত সুপার ন্যাচারাল বা অতিপ্রকৃত ঘটনা হিসাবে পরিচিত।আজ আমি আপনাদের তেমনই কিছু রহস্যের কথা বর্ননা করব।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে প্রমাণিত হয়েছে, কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক- সেই খবর বোধকরি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেনি।

এটা ঠিক, পৃথিবীর সবচাইতে অভিশপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে বারমুডা টায়াঙ্গল বা ত্রিভুজকে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়। কারণ এ যাবৎ এখানে যতো রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটার কথা শোনা গিয়েছে, অন্য কোথাও এতো বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। এ জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।

বারমুডা ত্রিভুজের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। মোট তিনটি প্রান্ত দ্বারা এ অঞ্চলটি সীমাবদ্ধ বলে এর নামকরণ করা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। এ অঞ্চলটি যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পাচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিলো, ‘সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে উদ্ধার কর।’ এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম এ অঞ্চলের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি।

এর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনো এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তা হলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবে।

তবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।

রহস্যদ্বীপ বাল্ট্রা

প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের অনেক রহস্যই এখনো উম্মোচিত করা সম্ভব হয়নি। এমনই অদ্ভুত রহস্যেঘের এক দ্বীপ বাল্ট্রা। বাল্ট্রা মূলত মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। দণি আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটিই হচ্ছে বাল্ট্রা। কিন্তু এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তখনকার এয়ারবেসের একজন অফিসার ফ্রান্সিস ওয়াগনার এর মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রেক কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা স্বীকার করেন। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়েনা বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে অন্য পাশে প্রবল বৃষ্টি। বাল্ট্রা অর্ধেক পার হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে আর এক ইঞ্চিও এগোয়না বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি যত প্রবলই হোক এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সব সময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোন সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আবার দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছামতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশ করে। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক।

বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো- এর “মানসিক” দিক। অন্য বারোটি দ্বীপের তুলনায় “মৃত দ্বীপ” বাল্ট্রায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারো মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্যরকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষন এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চার্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।

অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন বৃক্ষ নেই। নেই কোন পশুপাখি। কোন পশুপাখি এ দ্বীপে আসতে চায় না। দ্বীপের রহস্যময়তার আবিষ্কর্তা ওয়েগনার জোর করে কিছু প্রাণীকে বাল্ট্রা এবং এর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মধ্যবর্তী খালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বাল্ট্রাকে এড়িয়ে সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু তাই নয়, উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয়, যেন অদৃশ্য কোন দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা।

বাল্ট্রা দ্বীপের এ রকম অদ্ভুত আচরণের কোন গ্রহণযোগ্য কারণ এখনো কেউ খুঁজে পায়নি। তবে কারো কারো মতে এখনে কোন অস্বাভাবিক শক্তির অস্তিত্ব রয়েছে যার প্রভাবে এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। বিজ্ঞানীরা আজও এ রহস্যের কোন কুলকিনারা করতে পারেনি।

রহস্যপূর্ণ সানসিংতুন (প্রাচীন চায়না সভ্যতা)

“সানসিংতুন” এর নাম আগে “সানসিং গ্রাম” ছিল। কেউ ভাবতে পারেন নি যে, ইয়ে নামে একজন কৃষক জমি চাষ করার সময় একটি বিস্ময়কর আবিস্কার করবেন। তারপর একটানা কয়েক দশকের গবেষণার পর প্রমাণিত হয়েছে , পাঁচ থেকে তিন হাজার বছর আগে এখানে প্রাচীন শু রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। সুউজ্জল এই সভ্যতা এখানে ২০০০ বছর স্থায়ী ছিল। সানসিংতুন ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের ফলে শু রাষ্ট্রের ইতিহাস আরো ২০০০ বছর এগিয়েছে। এ আবিষ্কার চীনের সভ্যতার ইতিহাসকে আরো সুসম্পূর্ণ করেছে। সানসিংতুন সভ্যতা আর ছুয়াংচিয়াং নদীর সভ্যতা ও হুয়াংহো নদীর সভ্যতার মতো সবই চীনের সভ্যতার মুল ভিত্তি।

সানসিং গ্রাম চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সিছুয়ান প্রদেশে অবস্থিত। রাজধানী চেনতুং থেকে গাড়িতে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগে। ৭৫ বছর আগেকার বিস্ময়কর আবিষ্কার এই গ্রামের শান্তভাব ভেঙে দিয়েছে। প্রায় দশ বছর আগে এখানে সানসিংতুন নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।

সানসিংতুন জাদুঘরের কর্মী ছিউ শুয়েন ছিং জানিয়েছেন, উত্তর অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রিতে অবস্থিত এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য আছে। তিনি বলেছেন, “এই অক্ষাংশে আরো রয়েছে ছুমোলোংমা পর্বত, মায়া সভ্যতা, বারমুদা ত্রিকোণ । এগুলোর অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রহস্য। সানসিংতুন হচ্ছে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আবিষ্কৃত পুরাকীর্তির মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি, আওতায় সবচেয়ে বড়, স্থায়ী সময় সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সবচেয়ে সাংস্কৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন নগর।”

প্রত্নতত্ব থেকে জানা গেছে, প্রায় ৩০০০ বছর আগে, এই প্রাচীন নগর আকস্মিকভাবে বাতিল করা হয়। ফলে খুব উন্নত মানের সানসিংতুন সভ্যতা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ বছর আগে চেনতুং শহরের উপকন্ঠে আবিষ্কৃত কিনশা ধ্বংসাবশেষ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। এই দুটি পুরাকীর্তির বৈশিষ্ট্যে বহু মিল আছে। ফলে কেউ কেউ বলেন, সানসিংতুন বর্তমান কিনশা ধ্বংসাবশেষের জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু ২০০০ বছর স্থায়ী একটি সুউজ্জল প্রাচীন নগরকে বাতিল করার আসল কারণ কি ছিল? কেউ বলেন, বন্যার জন্য। কেউ বলেন, যুদ্ধের জন্য । কেউ বলেন, মহামারী-রোগের জন্য। কিন্তু এ সম্পর্কে কোন ঐতিহাসিক রেকর্ড নেই, সেই জন্য আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে এক গোলক ধাঁধা রয়েছে।

জাদুঘরের কর্মী ছিউ সুয়েন ছিং বলেছেন, ব্রোন্জ দিয়ে তৈরি দ্রব্যাদি হচ্ছে সানসিংতুনে আবিষ্কৃত পুরাকীর্তির মধ্যে সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় জিনিষ। বিশেষ করে কিছু ব্রোন্জ মূর্তির এশিয় ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। তাদের বড় বড় চোখ, উচু উচু নাকের হাড়। তিনি বিশেষ করে জাদুঘরের একটি ব্রোন্জ দিয়ে তৈরি মুখোশের ব্যাখ্যা করেছেন। জানা গেছে, এটা হচ্ছে শু রাষ্ট্রের প্রথম রাজার আসল মুখের মূর্তি। তিনি বলেছেন, “এটা হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় একটা ব্রোন্জ মুখোশ এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় মূল্যবান বস্তু। এই মুখোশের চোখ বেলুনাকার। কান খুব বড় এবং চুড়াযুক্ত। পর্যটকরা তাকে দিব্যদৃষ্টি বা অলোকশ্রবণসম্পন্ন বলে ডাকে।”

আরেকটি পুরাকীর্তি থোংটিয়ান গাছ ফরাসি পর্যটক হিমবার্ট দ্রোজকে সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, “কয়েক বছর আগে এ পুরাকীর্তিগুলো ফ্রান্সে প্রদর্শিত ছিল। যদিও তিনি জানেন, চীনের বহু প্রাচীন ইতিহাস আছে। তবু যখন তিনি আরেক বার এ পুরাকীর্তিগুলো দেখার সুযোগ পান, তখন অবাক হন।”

প্রাচীনকালে চীনারা মনে করেন, গাছ হচ্ছে মহামূন্যের অবতার। সূর্য, চাঁদ, তারকা সবই গাছের ফল। ব্রোন্জ দিয়ে তৈরি এই ৩.৬ মিটার উচু থোংটিয়ান গাছ বিশ্বের বিস্ময় বলা হয়। ম্যাডাম ছিউ শুয়েন ছিং বলেছেন, “এই গাছ তৈরির প্রযুক্তি খুব কঠিন। এমন ভাস্কর্য পৃথিবীতে অদ্বিতীয় । এতো বড় ব্রোন্জ দিয়ে তৈরি দ্রব্যাদি এক বার উৎপাদিত হয় না। আমাদের আবিষ্কৃত আটটি ব্রোন্জ গাছের মধ্যে আমরা মাত্র দুটি গাছকে মেরামত করেছি। একটি গাছ মেরামত করতে তিন বছর সময় লাগে।”

বলা যায়, ব্রোন্জ দিয়ে তৈরি দ্রব্যাদি হচ্ছে সানসিংতুনে আবিষ্কৃত পুরাকীর্তির মধ্যে সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী পুরাকীর্তি। এই পুরাকীর্তিতে পুরোপুরি সেই যুগের চমৎকার শিল্প প্রযুক্তির মান প্রতিফলিত হয়েছে।

সানসিংতুন ধ্বংসাবশেষে বিপুল পরিমাণ হাতির দাত আর সামুদ্রিক খোলা আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা হচ্ছে সানসিংতুনের আরেকটি রহস্য। কারণ বর্তমান সিছুয়ান প্রদেশের ভৌগোলিক অবস্থা দেখে বুঝা যায়, সেখানে কোন মতে হাতি বেচে থাকার পরিবেশ নেই এবং সমুদ্র থেকেও বহু দূর। এ বিষয় ছিউ শুয়েন ছিং বলেছেন, “কিছু পন্ডিত মনে করেন, হাতির দাত আর সামুদ্রিক খোলা “দক্ষিণ রেশমী পথের ” মাধ্যমে এসেছে। আমরা প্রায় ৫০০০টি সামুদ্রিক খোলা আবিষ্কার করেছি। অন্তর্দেশীয় শহর চেনতুয়ে কোন মতে সামুদ্রিক খোলা থাকার কথা নয়। তা থেকে বুঝা যায়, প্রাচীন শু রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক লাইন সত্যি সত্যি খুব লম্বা, এমন কি পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত ছিল। ”

সানসিংতুন জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দশ বছরে অসংখ্য পর্যটক আকর্ষণ করেছে। সানসিংতুন পুরাকীর্তি আফ্রিকা ছাড়া অন্য চারটি মহাদেশে প্রদর্শিত হয়েছে। সানসিংতুন জাদুঘরের উপ-প্রধান চাং জি চোং বলেছেন, “পর্যটকরা সানসিংতুনের প্রাচীন ও রহস্যময় সংস্কৃতি সবচেয়ে পছন্দ করেন। সানসিংতুনকে চাংচিয়াং নদী সভ্যতার উপরে একটি রাজমুকুট বলা হয়। গভীর প্রাচ্য ও সিছুয়ানের প্রাচীন শু রাষ্ট্রের সভ্যতার মিশ্রন হচ্ছে সানসিংতুনের বৈশিষ্ট্য। ”

UFO (Unidentified Flying Object) রহস্য

ফ্লাইং সসার কি ?
ফ্লাইং সসার (Flying Saucer) দেখতে চাকতির মতো, এক ধরণের রহস্যময় ধাতব আকাশযান। তবে ফাইং সসার বলতে কেউ ভিনগ্রহী আকাশযানকে বোঝান। ফ্লাইং সসারই বলুন আর গুপ্তচর বিমান, অসনাক্ত বিমানই বলুন- তা সবই UFO (Unidentified Flying Object)-এর অন্তর্গত। সেই খ্রীষ্টিয় বর্ষ (A.D) শুরুর আগ থেকেই ফ্লাইং সসার মানুষকে আকৃষ্ট করে চলেছে। মানুষ হতবুদ্ধি হয়েছে, উত্তেজিত হয়েছে, খুঁজে চলেছে সেই আকাশযানের উৎসকে।

খ্রীষ্টপূর্ব ১৫ শতকে মিশরের ফারাও ছিলেন তুতেম খানম। তার সময় জনতা আকাশে দেখেছিল বিচিত্র ধরণের আগুনের গোলা। সে সময় সেনাবাহিনী খুঁজেছিল গোলার উৎসকে। হঠাৎ সেই গোলা অদৃশ্য হয়ে যায়। ষোড়শ শতকে কি কোন আকাশযান ছিলো ? না।

তাহলে ১৬৮৬ সালের ৯ জুলাই তারিখে জার্মানীর লিপজিক অধিবাসীরা কিভাবে রহস্যময় এক ধাতব বস্তুকে উড়তে দেখেছিলো ?

১৭৫৬ সালে সুইডেনের লোকেরাও দেখেছিলো এ ধরণের অদ্ভূত রহস্যময় বস্তু। ইউরোপ বিশ্বের একটি অতি জনপ্রিয় ইউফো দেখার জায়গা।

১৯৮০ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি ত্রিকোণাকার বস্তু সন্ধ্যার পর প্রায়ই দেখা দিতে লাগলো। কালো বন্তুটির তিন কোণায় তিনটি লাল আলো, মাঝে সবুজ বৃত্ত। কয়েকদিন পর আকাশযানটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

সেই সময় ইংল্যান্ডেও ইউফো দেখা দিতে লাগলো। সেই সাথে Crop Circle 3, Crop Circle , অর্থাৎ রাতের বেলা কে বা কারা জমির শস্যেক্ষেতে শস্য মাড়িয়ে বিভিন্ন আকৃতির নকশা তৈরী করে যায়। অনেকে বলেন, ভিনগ্রহের প্রাণীরা এইসব করে দিয়ে যায়। মানুষের পক্ষে এই নকশা তৈরী করা অসম্ভব।

কারণ অতি জটিল ও সুক্ষ Crop Circle গুলো তৈরী করতে মানুষের প্রচুর সময় লাগবে, অন্তত এক রাতের মধ্যে নয়। তবে Crop Circle কিছু মানুষ তৈরি করেছে বলে জানা যায়।

প্রত্যদর্শীরা Crop Circle তৈরী করার সময় অনেক ইউফো এবং আলোক বিন্দু দেখেছেন। সবচেয়ে লৌহমর্ষক ঘটনা ঘটে, ১৯৯৪ সালে। ঐ বছর কিছু লোক স্টোনহেঞ্জ ভ্রমণ করতে আকাশে ওঠেন। ৪৫ মিনিট পর আবার স্টোনহেঞ্জ দেখতে এসে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটা জটিল Crop Circle দেখতে পান।

এতো জটিল Crop Circle মানুষ ৪৫ মিনিটে তৈরি করতে পারে না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্সের প্লেন ক্যামেরাসহ অজানা আলোকে তাড়া করে, তাদের ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেলো, অজানা আলো যে ক্ষেতের উপর দিয়ে যাচ্ছে, শস্য কাত হয়ে যাচ্ছে, Crop Circle তৈরি হচ্ছে। অজানা আলো অদৃশ্য হয়ে যায়। এগুলোও ইউফো বটে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায় Crop Circle এর মাধ্যমে।

২০০২ সালে ইংল্যান্ডের এক শস্যবৃত্তে এক এলিয়ানের মুখচ্ছবি এবং তার হাতে ধরে রাখা একটি গোলক দেখা গিয়েছিলো। এছাড়াও হাজারো ধরণের শস্য গোলক প্রতি বছরই আবিষ্কৃত হচ্ছে। গবেষণাগারে ঐ নুয়ে পড়া শস্যগুলো পর্যবেক্ষণের পর জানা গেল -প্রচুর পরিমাণ মাইক্রোওয়েভ মিথস্ক্রিয়ার ফলে ওগুলোর এ অবস্থা হয়েছে।

১৯৮৫ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর দিয়ে উড়ে যায় একটি অদ্ভূত পিরিচ আকৃতির আকাশযান। একে নামানোর জন্য প্রেরিত বেতারবার্তা ফিরে আসে। তারপর একে নামাতে আকাশে উড়ে যায় ভয়ংকর বিমান ‘ফ্যান্টম’। এই বিমান দিয়েই ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল অনায়াসে ৬ দিনের যুদ্ধে জয়লাভ করে। এ বিমানের রয়েছে মিসাইল ও পারমানবিক বোমা বহনের ক্ষমতা; কিন্তু বোমা মারার বোতাম টিপে দেখা গেল তা বিকল হয়ে গেছে। ঐ নভোযান চলে যাওয়ার পর ২টি বিমান সচল হয়। ইরান দাবি করে, তার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পশ্চিমারা এই আকাশযান পাঠিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করে জানায় অন্য বিমানের সুইচ বিকল করার যন্ত্র তাদের কাছে নেই এবং বিমানটিও তাদের না।

১৯৫৭ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করে, তখন আমেরিকাও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। স্নায়ুযুদ্ধ তখন শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ১৯৬৯-এ প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখতে সক্ষম হয়। অবশ্য তার আগে থেকেই আকাশে ইউফো দেখা যায়। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের লোক ইউফো দেখার দাবি জানান। কেউ কেউ আবার ভিনগ্রহীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন বলে দাবি করেন। আমেরিকার সেনাবাহিনীর সাথে ইউফোর সংশ্লিষ্টতার কথা অনেকেই তোলেন। এর কারণও অনেক। ১৯৭৮ সালে নিউ অরলিন্স অঙ্গরাজ্যের একটি ফিওয়েতে যাচ্ছিলেন তিনজন মহিলা। তারা হঠাৎ দেখলেন, একটি অদ্ভূত আকাশযান উড়ে যাচ্ছে। তাকে তাড়া করে উড়ে যাচ্ছে মার্কিন বিমানবাহিনীর ১৭টি হেলিকপ্টার। মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলে তাপ অনুভব করলেন তারা। দিগন্তে মিলিয়ে গেল হেলিকপ্টার আর আকাশযান। তখন কিছু বুঝতে না পারলেও রাতে শুরু হলো প্রদাহ। চোখ জ্বলছে, শরীর জ্বলছে। সবারই একই অবস্থা। পরদিন তারা স্থানীয় ডাক্তারের কাছে সবকিছু খুলে বললেন। ডাক্তার স্থানীয় এক পত্রিকাকে ঘটনাটি জানালেন। পত্রিকার কাছে অভিযোগ এসেছে, আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে ৬-৭টি হেলিকপ্টার একত্রে উড়ে গেছে। রাস্তার উপর ফাটল চিহ্ন দেখা গেছে। কিছুদিন পর পুলিশ রাস্তায় রোডব্লক বসিয়ে রাস্তা মেরামত করে। অনেকে একে ’কন্সপিরেসি’ বলে আখ্যা দেন এবং বলেন ইউএস এয়ারফোর্স অন্তত একটি ভিনগ্রহী আকাশযান আটকে রেখেছে। তা অস্বীকার করলো বিমানবাহিনী। কিন্তু ১০ বছর পর একটি টিভি সাক্ষাৎকার পুরো কাহিনী পাল্টে দেয়।

৭ই জুলাই চীনের আকাশে দেখা যাওয়া সসার এর ছবি

AREA 51

১৯৮৭ সালে নিউ মেক্সিকোর স্থানীয় টিভি চ্যানেলের এম আর টিভি একটি টিভি সাক্ষাৎকার নেয়। এক Undercover (পরিচয় গোপনকারী) ব্যক্তি দাবি করেন- তিনি ‘AREA51’ নামে এক মরুভূমির মাঝে একটি সামরিক বেসে একটি ফ্লাইং সসার নিয়ে গবেষণা করেন।

AREA 51

ঐ বেসের প্রধান তাকে বলেন, এটি ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলো এবং তাদের আরোহীদের হত্যা করে ইউএস আর্মি এটা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা এর কার্যকলাপ বুঝতে ব্যর্থ হন। তাই একজন পদার্থবিজ্ঞানীর সহায়তা চান মেজর। অবশ্য, ঐ লোকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল পদার্থবিজ্ঞানে।

তারপরও ফ্লাইং সসার সম্বন্ধে তাকে কেন ডাকা হলো কেউ জানে না। যা হোক, ঐ লোক দাবি করেন, ঐ আকাশযান কোন শব্দ ছাড়াই উত্তোলন বা অবতরণ করা সম্ভব। তাহলে এ এক অতি উন্নত সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে। তিনি আরো দাবি করেন যে, সেখানে আরও একটি উন্নত যন্ত্র রয়েছে যার কার্যকলাপ তিনি বুঝতে পারেননি। সেখানে সেই যন্ত্রের ভেতরে একটি গোলাকার কক্ষ, যার মাঝে রয়েছে গোলাকার একটি প্যানেল। আর সেই গোলাকার প্যানেলের উপরে রয়েছে একটি বৃত্ত, যা ছাদ থেকে ঝুলছে। এই বৃত্তাকার যন্ত্রটিই বোধ হয় ফাইং সসারের মাথা। মেস কমান্ডার মেজর হেল দাবি করেন, ঐ এলাকার উপরে আরো ফ্লাইং সসার আসে, তিনি ঐ পদার্থবিজ্ঞানীকে সতর্ক করে দেন-কেউ যেন এ বিষয়ে না জানে। কিন্তু বিজ্ঞানী তার বন্ধুদের জানিয়ে দেন। তখন মেজর তাকে কাজ থেকে বহিষ্কার করেন এবং শাসিয়ে যান। তার কিছুদিন পর তাকে হত্যা করতে গুলি ছোঁড়া হয়। তাই তিনি টিভির শরণাপন্ন হয়েছেন। কিছুদিন পর তিনি স্বপরিচয় স্বীকার করেন এবং জানান ইউফো দেখতে হলে ‘AREA51’ ই উপযুক্ত স্থান। এর অনেক প্রমাণও আছে। ‘AREA51’ -এর ১০ কি.মি. ব্যাসার্ধে থাকে অস্ত্রধারী সৈন্য। কেউ ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে পারে না। গুলি করার নির্দেশ আছে। Discovery Channel এর ক্যামেরায় রাতের বেলা অজানা আলো ‘AREA51’ -এর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য রেকর্ড আছে। তবে কর্তৃপক্ষ ‘AREA51’ কে মানচিত্রে স্থান দেননি এবং তাকে হাইপারসনিক বিমানের গবেষণাগার হিসেবে চিহ্নিত করে। সোভিয়েত স্যাটেলাইট ঐ স্থানে কাঠামোর ছবি তোলে, কোনো ইউফো দেখা যায়নি। ইউফোনামার প্রত্যদর্শীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর, মাঝ রাতে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারে নির্জন পথ ধরে হেঁটে আসছিলো নরম্যান মাসকোরোলা নামের এক যুবক। হঠাৎ সে অবাক হয়ে দেখলো- খোলা মাঠের উপর একটা বিরাট জিনিস, যার ব্যস প্রায় ২৫ মিটার, মাটি থেকে সামান্য উপর দিয়ে এগিয়ে আসছে। গোলাকার বস্তুর পরিধি ঘিরে উজ্জ্বল আলোর মালা, নরম্যান ভয়ে রাস্তার পাশে লুকালো। তারপর দেখলো, সেই অদ্ভূত জিনিসটা আকাশে চক্কর দিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। ১৯৬৪ সালে দু’টি ঘটনা শুধু আমেরিকা নয়, গোটা পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। সেই বছরের ২৪ এপ্রিল নিউ মেক্সিকোর সোকরাতে সন্ধ্যাবেলায় এক টহলদার পুলিশ দেখতে পেলেন, রাস্তা থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট দুরে সবুজ আগুনের একটি শিখা। সাহস করে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে পুলিশটি দেখলেন-প্রায় ২০ ফুট চওড়া অর্ধ গোলাকার বস্তু দাঁড়িয়ে আছে চারটি পায়ার উপর ভর করে। একটু কাছে যাওয়া মাত্র সেটা প্রচন্ড গর্জন করে শূণ্যে উড়ে গেলো। তার নিচ থেকে বেরিয়ে আসে নীলচে আগুন। পুলিশ ভদ্রলোক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন নরম মাটির উপর চারটি গভীর গর্ত। সেই রহস্যময়যানের চার পায়ের দাগ। সেই বছরই ওকলাহোমার নিকটবর্তী কোথাও গিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। তিনি সপরিবারে পিকনিক করবেন। পিকনিকে তিনি তার মেয়ের ছবি তোলেন, ছবি পজিটিভ হলে তিনি দেখেন তার মেয়ের ছবির পেছনে মাথা তুলে অদ্ভূত পোষাকের এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দেখেন, সেই লোকের পোশাক আসলে একজন নভোচারীর পোশাক, সারা শরীরে সাদা রঙের ধাতব পোশাক। চোখের দিকটা কালো কাঁচে ঢাকা। তিনি ঐ দিনের সমস্ত পত্রিকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেন। অবশেষে দেখতে পান- ঐ দিন ওকলাহোমার আকাশে ইউফো দেখা গেছে। তবে সর্বাপেক্ষা চাঞ্চল্যকর ইউফো দেখার ঘটনা ঘটে পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে ১৯৪৭ আর ১৯৯৭ সালে। ১৯৪৭ সালের ২৪ জুন।

কেনেথ আর্নল্ড নামে এক বৈমানিক ওয়াশিংটনের চেহলিস বিমানবন্দরে তার নিজস্ব বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন। একটি হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজে তল্লাশিরত এক অনুসন্ধানকারী দলকে তিনি সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। কাসকেট পাহাড়ের সাথে সংঘর্ষে সেই বিমানটি ভেঙ্গে পড়েছিলো। ১২ হাজার ফুট উঁচুতে পাহাড়ে ছিলো সেই ধ্বংসাবশেষ। পাহাড়ের কাছে গিয়ে কেনেথ আর্নল্ড দেখতে পেলেন চাকতির মতো কয়েকটা অদ্ভুত জিনিস উড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের চুড়া ঘেঁষে। সাথে সাথে উত্তেজিত কেনেথ কন্ট্রোল টাওয়ারে সংবাদ পাঠালেন। তিনি ৯টি উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পেলেন।

কন্ট্রোল টাওয়ারে রেকর্ড হয়ে গেল-‘সাংঘাতিক উজ্জ্বল একটা আলো হঠাৎ ঝলকে উঠে আকাশটাকে আলোয় আলোকিত করে দিলো। সেই আলোয় আমার বিমানের ভেতরটা ঝলমল হয়ে উঠলো। কোনকিছুর বিস্ফোরণে যেমন ঝলক দেয়, ঐ আলোর ছিলো নীলাভ সাদা আভা। প্রথমে ভেবেছিলাম সামনে দিয়ে উড়ে যাওয়া কোন সামরিক বিমানের গায়ে আলোকরশ্মি টিকরে পড়ে ঐরকম হয়েছে। তখন চারপাশ আবার ভালোমত দেখছিলাম। পর মূহুর্তেই দেখলাম-পাহাড়ের চূড়ার কাছাকাছি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যাচ্ছে ৯/১০টা জিনিস। সেগুলো দেখতে চাকতি ও পিরিচাকৃতির। একটু এলোমেলোভাবে প্রচন্ড গতিতে উড়ছে এই বস্তুগুলো। টানা তিন মিনিট ধরে তাদের দেখলাম। তার আগে এত দ্রুত গতির কোন বস্তু দেখিনি।’

পরে এক টিভি সাক্ষৎকারেও তিনি একথা বলেছিলেন, পুরো পৃথিবীজুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। অন্য দেশ থেকে আসে একই রিপোর্ট। পর্যালোচনা করে দেখা গেলো-একটা পিরিচাকৃতির বস্তু অর্ধপৃথিবীজুড়ে একটা বিশেষ রুটে ঘুরে বেড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল, ৫০ বছর পর ৫ মার্চ আরিজোনার রাজধানী ফিনিক্সে গ্রীষ্মকাল চলছে। মরুভূমির উষ্ণ হাওয়া জনজীবনকে করেছে কিছুটা স্তম্ভিত। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফিনিক্সের আকাশে একটা ত্রিকোণাকৃতির, ঠিক ত্রিকোণাকার নয়, বুমেরাং আকৃতির আকাশযান উড়ে যেতে দেখা যায়। তার চার ঘন্টা পর পাহাড়ের উপরে বিশাল একটি মহাকাশযান দেখা গেল। প্রায় ১০০ লোক হোমভিডিও দিয়ে এই মহাকাশযানের ছবি তোলেন। এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা এতে যোগ দেন, তবে ঐ দিন বিমানবাহিনী দাবি করে তারা আরিজোনার ফিল্ড বেস হতে রুটিন ট্রেইনের অংশ হিসেবে ফ্লেয়ার ফেলেছিলো বিমান হতে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দাবি করেন ফ্লেয়ার চারপাশ আলোকিত করে।

তারা যে মহাকাশযানের মত বস্তু দেখেছিলেন তা চারপাশ আলোকিত করেনি। তবে কম্পিউটারে দেখা যায়, ফেয়ার যদি বিমান হতে প্রকৃতপক্ষে ফেলা হয়, তাহলে পাহাড়ের পেছনে অবতরণ করার কথা এবং তত্ত্বানুসারে তা হয়েছেও। তাই আসলে সেটা কী আমাদের জানতে অনেক সময় লাগতে পারে, হয়তো কোনদিনই জানতে পারবো না।

তদন্ত ও গবেষণা :-
এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সোভিয়েত আর্মি, ইউএস আর্মি, ব্রিটিশ আর্মি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কমিটির পক্ষ থেকে গবেষণা কমিটি গঠিত হয়। এ বিষয়ে তিনটি গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো:

১. এগুলো (ইউফো) আসলে একটা ষড়যন্ত্র বা কন্সপেরিসি। এগুলো মার্কিন সরকারের তৈরি কিংবা সোভিয়েত সরকারের তৈরি সুপারসনিক কিংবা হাইপারসনিক বিমান। এরকম দ্রুতগতির বিমান আমেরিকা তৈরি করতে সক্ষম এবং রাডারকে তা ফাঁকি দিতে পারে। ‘এফ-১১৭ নাইট হক’ এ ধরণের বিমান। এছাড়া নাসাও এ ধরণের বিমান তৈরি করছে।

২. দ্বিতীয় থিওরিটি হচ্ছে এটি বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান প্রাণীদের দ্বারা তৈরিকৃত ও পরিচালিত। এটি নিঃশব্দে চলতে পারে। ১৯৭৮ সালে ফ্রায়েরিখ ভ্যালেনটিচ নামে এক লোক মেলবোর্নের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তার উপর এলো একটি সবুজাভ চুরুটাকৃতির আকাশযান। সেটি তার আকাশযানকে কেন্দ্র করে ঘুরছিলো, কন্ট্রোলারকে এসব জানিয়েই তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন। ১৯৮৯ সালে চারজন লোক দাবি করলো- তারা একটি বিমানকে একটি চুরুটাকৃতির ‘স্পেশশিপ’ ফলো করে নিয়ে যেতে দেখেছে। তারা আকাশযানটিকে স্পেশশিপ বলে অভিহিত করে, কারণ ওটার গঠন বৈশিষ্ট্য ছিলো অনন্য। বাইরের খোলস সম্ভবত অভ্রের আবরণে আবৃত। একটি সাদা ও সবুজ আলোর বৃত্ত ওটাকে ঘিরে রেখেছে। এটা অতি উন্নত সভ্যতার উদাহরণ। মানুষের চেয়ে কমপক্ষে ১০হাজার বছরের অগ্রগামী যে সভ্যতা। কেননা, ২১৬ খ্রীষ্টপূর্বে রোমেও ফ্লাইং সসার দেখা গিয়েছিলো। তাহলে যিশু খ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে তারা (ভিনগ্রহীরা) আকাশবিদ্যা ও মহাকাশবিদ্যা অর্জন করেছিলো! আবার তারা আন্তঃনাত্রিক যোগাযোগ স্থাপনেও সক্ষম হয়েছিলো! কারণ আমাদের সৌরজগতে এখনও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের নিকটবর্তী তারকা প্রক্সিমা সেন্টারাই ৪.২২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

৩. তৃতীয় থিউরিটি হলো-এটি একটি ইলুউশন। ১৯৪৮ সালে মার্কিন বিমানবাহিনীতে এ নিয়ে তদন্ত প্রকল্প শুরু হলো। তার নাম হলো Project Blue Book. তখন থেকেই চালু হলো ইউএফও (বা ইউফো)। দিনে ও রাতে নানা সময়ে সেগুলো দেখা গেছে। অনেকে ছবি তুলেছে তাদের। সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বললেন, ৯০% ইউফো হলো একদম জানা জিনিস। মানুষ ভুলভাবে সেগুলোর ব্যাখ্যা করেছে। যেমন অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া জেট প্লেনের গায়ে ঠিকরেপড়া সূর্যের আলো কিংবা বাতাসে তাপমাত্রার জটিল পরিবর্তনে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু বিষয়কে ইউফো বলে চিহ্নিত করা হয়।

তবে ১৯৬০ সালে কী নেমেছিলো নরম্যানের সামনে ? কী দেখেছিলেন ১৯৬৪ সালে সেই পুলিশ অফিসার ? কে বা কারা তৈরী করে উড়ন্ত চাকতি ? কেনই বা ‘AREA 51’ এতো গোপনীয় ? মানুষ একদিন ঠিকই এর উত্তর বের করবে।

“শেষ”

তথ্যসুত্রঃ- ইন্টারনেট (সংকলিত)

কষ্ট করে পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

8 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here