গহীন অ্যামাজন জঙ্গলে স্বর্ণের শহরের খোঁজে

22
299

এল ডোরাডো।
এক স্বপ্নের নাম! কতশত অভিযাত্রী কয়েক শতাব্দী ধরে খুঁজে চলেছে একে! তাদের বিশ্বাস, দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অ্যামাজন জঙ্গলের কোথাও না কোথাও একটি শহর আছে, যার পুরোটাই স্বর্ণের তৈরি। শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, বাড়িঘরের আসবাব সব কিছুই। অফুরন্ত সোনার লোভ শত শত বছর ধরে অনেককে ঘুমাতে দেয়নি, অনেকের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়েছে, অনেককে চিরতরে নিখোঁজ করিয়েছে।

এল ডোরাডোর মিথ প্রথম শুরু হয় দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ অভিযানের পর। মূলত স্প্যানিশদের আমেরিকা অভিযানের মূল অনুপ্রেরণাই ছিল স্বর্ণ। এল ডোরাডো নামটি আসে কলম্বিয়ার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে থেকে, যাদের নাম “মুসিকা”। এল ডোরাডো মানে হচ্ছে “স্বর্ণ নির্মিত মানুষ”। এটি আসলে তাদের দলপতিকে বোঝাতো, যিনি বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে স্বর্ণের আবরণ গায়ে দিতেন। তার পোশাক স্বর্নের, মুকুট স্বর্ণের, সে স্বর্ণের গুঁড়া গায়ে মেখে গুয়াটাভিটা লেকে জলমগ্ন হতেন। সেই থেকেই এই মিথের উৎপত্তি। লোকমুখে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে গেল সোনার তৈরি এক শহরের কথা। তবে বাস্তবিকই দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে প্রচুর স্বর্ণ ছিল, তবে তাদের কাছে এটা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসই ছিল। সেটা দেখে স্প্যানিশদের মধ্যে এই মিথ আরো শক্তপোক্ত হল। অবশ্য স্প্যানিশদের সোনার প্রতি পাগলামি দেখে আদিবাসীরা ভীষণ অবাক হতো!

এই মিথের কারণে ১৫৪৫ সালে স্প্যানিশরা গুয়াটাভিটা লেকে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। তারা সেখান থেকে বেশ খানিকটা স্বর্ণ উত্তোলন করতে সমর্থ হয়, কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য “এল ডোরাডো”- তার কোনো নিশানা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অনেকেই এল ডোরাডো খুঁজে পাওয়ার দাবি করেন, নকল ম্যাপও বানানো হয়। কিন্তু কোনোটিই সত্যি ছিল না। অভিযাত্রীদের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন স্যার ওয়াল্টার র‍্যালে।

তবে এল ডোরাডোর খোঁজে যাওয়া অভিযাত্রীরা অনেক সোনার বস্তু খুঁজে পেয়েছিলেন সেই সভ্যতাগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকে। সেগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য না বুঝে তারা গলিয়ে ফেলেছেন, তাদের দরকার যে শুধু সোনা! ফলে ইউরোপীয়ান-পূর্ব দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে।

আধুনিক যুগে এসেও মানুষের মন থেকে এর আকর্ষণ হারিয়ে যায়নি। মানুষ রহস্য পছন্দ করে, এর সাথে যদি যোগ হয় বিপুল ধনসম্পদ- তাহলে তো কথাই নেই! এইতো একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে, ২০০০ সালেও এর খোঁজে ইনকা ধ্বংসাবশেষের নিচে টানেলে খোঁজাখুঁজি চলেছে এবং রাডারের সাহায্যে আরো অনেক টানেলের অস্তিত্ব মিলেছে। ২০০১ সালে এক ইতালিয়ান প্রত্নতত্ত্ববিদ একটি প্রাচীন দলিল খুঁজে পান। সেটা অনুসরণ করে পেরুর গহীন জঙ্গলের ভেতর এক মানুষ নির্মিত কিছু স্থাপত্য দেখতে পান তিনি বিমান থেকে। কিন্তু স্থলপথে সেই জঙ্গলে ঢোকার কোনো পথ বের করতে পারেননি। পরে অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এই প্রজেক্ট আপাতত স্থগিত রেখেছেন।

অ্যাডভেঞ্চারের নেশা, সোনার তৈরি শহর- এগুলোর স্বপ্ন মানুষকে আজীবন তাড়া করে বেড়াবে। কে জানে, হয়তো সত্যিই একদিন সন্ধান পাওয়া যাবে কিংবদন্তির এল ডোরাডো শহরের!

তথ্যসূত্র- www.historicmysteries.com/legend-of-el-dorado/

22 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here