২য় বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছেন যিনি…

24
292

বিংশ শতাব্দীতে এসে  ১৪৬ বছর বেঁচে ছিলেন যিনি!

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ১৪৬! তবে যখন তার বয়স ১২২ বছর, তখন থেকেই তিনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমনকি মৃত্যুর পর লাশ দাফন করার জন্য নিজের ছেলের কবরের পাশে দাফন করার জমিও কিনে রেখেছিলেন ১৯৯২ সালে।

ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক সডিমেদজো অবশেষে মৃত্যুবরণ করলেন বিশ্বের দীর্ঘজীবি ব্যাক্তি হিসেবেই। সরকারি হিসেব অনুযায়ী সডিমেদজোর জন্ম হয়েছিলো ১৮৭০ সালে। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী সডিমেদজোই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবি মানুষ।

যদিও প্রথমে গিনেজ বুক সডিমেদজোর বয়সের ব্যাপারে কথা তুলেছিলো। কারণ, ইন্দোনেশিয়াতে বয়সের হিসেব রাখা শুরুই করা হয়েছিলো ১৯০০ সাল থেকে। তবে কর্মকর্তারা সডিমেদজোর সাথে কথা বলে নথিপত্র দেখে বিবিসিকে জানান বয়সের ব্যাপারে সডিমেদজোর দেয়া তথ্য সঠিক।

সডিমেদজো জানান তার ১৮৮০ সালের একটি ঘটনা মনে আছে। সেবছর গনডাং সুগার ফ্যাক্টরির উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান তিনি দেখেছিলেন। তার ধারণা তখন হয়তো তার বয়স ১০ বছরের মতো ছিল। ওই সময়ের আরেকটি কথা তার মনে আছে। তখন তিনি ধানী জমিতে লাঙ্গল চাষ করা শিখছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে বাচ্চারা দশ বছর বয়স হলেই বাবা-মাকে ধানের জমিতে লাঙ্গল চাষে সাহায্য করতে শুরু করে। এই কারণেই আমি আমার বয়স অনুমান করতে পারছি।’

 

গত বছর বিবিসি তার সাক্ষাৎকার নেয়। তখন তাকে প্রশ্ন করা হলো, এত বছর ধরে বেঁচে থাকার পেছনে রহস্য কি?

তিনি উত্তরে জানান “ভালোবাসা”। ভালোবাসার কারণে এত বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। তিনি তার জীবনে এমন মানুষদের পেয়েছেন, যারা তাকে সত্যিকার অর্থেই ভালবাসে। যারা তার খোঁজখবর রাখে। ভালো-মন্দে তার দেখাশোনা করে।

বেঁচে থাকার আরেকটা রহস্য হচ্ছে ধৈর্য। তিনি বলেছিলেন,

“Life is only a matter of accepting your destiny wholeheartedly.”

ধৈর্য ধরে রাখাটা বড় কঠিন। তিনি এটা ধরে রেখেছিলেন।

সডিমেদজো জাকার্তা পোস্টকে বলেছিলেন,

‘আমি অনেকদিন থেকেই মৃত্যুবরণ করতে চাচ্ছি। আমার স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয় সবাই মারা গিয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে একটি দীর্ঘায়ু দিয়েছেন। আমাকে তাই ধৈর্য ধরে বেঁচে থাকতে হবে এবং ভাগ্যকে মনে প্রাণে মেনে নিতে হবে।’

সডিমেদজো ছিলেন একজন তুখোড় ধূমপায়ী। খাবার দাবারের ব্যাপারে কোনো বাছবিচার ছিলো না তার। জীবদ্দশায় আহামরি তেমন রোগ-বালাইয়ের স্বীকারও হতে হয়নি তাকে। ১৪৬ বছরের জীবনে সডিমেদজো বিয়ে করেছেন চারবার। উনার চার স্ত্রীর শেষের জনই মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর হলো। তার নাতি-নাতনী ১২ জন। তাদের ঘরে সন্তান মোট ১৭ জন। আর নাতি-নাতনীদের ঘরে নাতি-নাতনী এসেছে দুইজন! কী ভাগ্যবান এই সডিমেদজো!

অনেক বয়স হলেও তার শরীর খুবই ভালো ছিল। মাত্র এক বছর আগে তিনি চলাচলের জন্যে লাঠি নিয়েছিলেন। এর আগে কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই চলতে পারতেন। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গিয়েছিল, কানেও শুনতেন কম, তবুও সডিমেদজো যোগাযোগ করতে পারতেন পরিষ্কারভাবেই। কথা বলতে পারতেন স্পষ্ট করেই। নিজ গ্রামে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। অসাধারণ গল্প বলতে পারতেন। জাপান এবং ডাচ সাম্রাজ্যের বিপক্ষে যে যুদ্ধ হয়েছিল, ওসব নিয়ে অনেক ঘটনা জানা ছিলো তার। গ্রামবাসীদের সেসব গল্প শোনাতে পছন্দ করতেন।

সোমবার সকালে সডিমেদজোর মৃতদেহের সমাধি হয়। তার বাড়িতে মৃত্যুর পর বসানোর জন্য সডিমেদজোর একটি স্মৃতিফলক তৈরি করা ছিল অনেকদিন থেকেই। দাফনের পর সডিমেদজোর কবরে সেই স্মৃতিফলকটি বসিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই একটি ১৪৬ বছরের জীবনাবসান হলো। শেষ হলো অনেকগুলো টুকরা টুকরা গল্পের।

24 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here