কিছু অদ্ভুত ভবিষ্যৎবাণী, যা সত্যি সত্যিই মিলে গিয়েছে!

23
376

রাস্তার ভিক্ষুক থেকে শুরু করে একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী, সবার মনেই সবসময় এই চিন্তাই ঘুরপাক খায়- এরপর কী ঘটবে? সবাই অনুমান করার চেষ্টা করে সামনের দিনগুলোর ব্যাপারে, এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কিছু অনুমান হুবহু মিলে গেছে, যেগুলো সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল কেবলই রূপকথা! চলুন, এরকম কিছু অদ্ভুত ভবিষ্যৎবাণীর কথা জেনে নেওয়া যাক।

স্মার্টফোন

১৯৮৭ সালে অ্যাপল কোম্পানী একটা ভিডিও রিলিজ করে যেখানে কম্পিউটারের ভবিষ্যত রুপ দেখানো হয়। “Knowledge Navigator” নামের এই কম্পিউটারে ফিচার হিসেবে থাকে ভিডিওকলিং, টাচস্ক্রিন, পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট ইত্যাদি। এই জিনিস দুনিয়াতে আসার সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছিল ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১। তখন অনেকে হয়তো হাসাহাসিই করেছিল প্রায় পঁচিশ বছর পরের ভবিষ্যত বাণী করার জন্য। কিন্তু কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে সেই তারিখের মাত্র ১৮ দিন পরে এই সমস্ত ফিচার সম্বলিত স্মার্টফোন প্রথম বাজারে আসে।

ট্যাঙ্ক

বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক এইচ জি ওয়েলস ১৯০৩ সালে একটি বই লেখেন, যার নাম “The land ironclads”। ওয়েলস লোহার আবরণে তৈরি জাহাজ থেকে এই আইডিয়া নেন এবং উপন্যাসে দেখান ভূমিতে চলাচলযোগ্য লোহার বাহন, যার আট জোড়া চাকা আছে আর আছে দুর্দান্ত গতি। ঠিক ট্যাঙ্কের মতন। এর মাত্র ১৩ বছর পরই প্রথম মিলিটারি ট্যাঙ্কের প্রচলন শুরু হয়। কে জানে এইচ জি ওয়েলসের থেকেই মিলিটারি নেতারা এই আইডিয়া নিয়েছেন কিনা।

ট্যাবলেট এবং অনলাইন নিউজপেপার

১৯৬৮ সালে আর্থার সি ক্লার্ক লেখেন তার বিখ্যাত বই “2001: a space odyssey”, যার উপর ভিত্তি করে স্টানলি কুব্রিক একই নামে সিনেমা তৈরি করেন। এই কাহিনীতে ক্লার্ক প্রথম উপস্থাপনা করেন “news pad”, যা দিয়ে অনলাইনে নিউজপেপার পড়া যাবে, ঠিক আধুনিক ট্যাবলেটের মতো। এই আইডিয়া কত সুদুরপ্রসারী তা বোঝা যায় অ্যাপল বনাম স্যামসাংয়ের ট্যাবলেটের পেটেন্ট সংক্রান্ত মামলায়। সেখানে স্যামসাং যুক্তি দেয় যে এর আইডিয়া অনেক আগেই থেকে ছিল, সেই ১৯৬৮ সাল থেকে। সুতরাং এটা অ্যাপলের নিজস্ব আইডিয়া নয়। বলাবাহুল্য সেই মামলায় স্যামসাং জিতেছিল।

ই-কমার্স

“1999 AD” নামের এক ভিডিওতে ফিলকো ফোর্ড নামের এক টিভি কোম্পানী ১৯৬৭ সালেই ভবিষ্যতের এক নিখুঁত চিত্র তৈরি করে। সেখানে দেখানো হয় যে, এক দম্পতি অনলাইনে কেনাকাটা করছে, ইমেইল ব্যবহার করছে, ইন্টারনেটে বিল পে করছে। এটা যখন প্রচার হয় তখন লোকজন ধাপ্পাবাজি মনে করে হাসাহাসি করেছিল। ঠিক এখন যেমন ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশের মুরুব্বীরা ইন্টারনেটে আয় করা, কেনাকাটা করা ইত্যাদিকে ধাপ্পাবাজি মনে করে!

ইন্টারনেট

বিখ্যাত লেখক ই এম ফস্টার ১৯০৯ সালে একটি গল্প লেখেন, যার নাম “The machine stops”। তিনি এ গল্পে দেখান, লোকজন ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার করে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করছে, প্রতিটি বাড়িই একটি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত যা ব্যবহার করে লোকজন জ্ঞান ও আইডিয়া শেয়ার করছে! কীসের সাথে মিলে বলেন তো? ঠিক ধরেছেন, ইন্টারনেট। ১৯০৯ সালে ফস্টার এই আইডিয়া বের করেন, যখন ইন্টারনেট তো দূরের কথা রেডিওর প্রচলনও ঠিকমত শুরু হয়নি।

বারাক ওবামা

১৯৬৮ সালে আমেরিকার কালোদের অনেক নাগরিক অধিকারই ঠিকমত ছিল না। তারা ভাল ক্যারিয়ারের চিন্তাও ঠিকমত করতে পারতো না। অথচ সেই সময়ই জন ব্রুনার “Stands on Zanzibar” নামের একটি বইয়ে ২০১০ সালের আমেরিকার চিত্র দেখান যেখানে একজন নেতা হিসেবে একজন আফ্রিকানকে  দেখা যায়, যার নাম “প্রেসিডেন্ট অবমি”, যা “ওবামা” শব্দটার খুব কাছাকাছি! এ ছাড়া সেই বইয়ে আরো দেখা যায়, ২০১০ সালে সমকামিতা একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ একটি প্রধান ইস্যু। এসব কিছুই ২০১০ এর সময়ে এসে প্রায় হুবহু মিলে গেছে। অথচ ৯০ এর দশকেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একজন কালো মানুষ হবে এমন চিন্তা করলেও লোকে পাগল বলতো!

ফেসবুক

টেলিগ্রাফ আবিষ্কার হওয়ারও প্রায় দশ বছর আগে রাশিয়ান লেখক ভ্লাদিমির অডয়েভস্কি উপন্যাস লেখেন নাম “Year 4338” যেখানে তিনি বর্ণনা দেন ব্লগিং, স্ট্যাটাস আপডেট, এমনকি ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং নিয়ে! হ্যাঁ, ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়ার কন্সেপ্ট। তবে আমাদের ৪৩৩৮ সাল পর্যন্ত বসে থাকা লাগেনি, ২০০৪-এ এসেই ফেসবুক তৈরি হয়েছে!

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

একসময়কার জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ “ The Simpsons” ২০০০ সালে এক পর্ব প্রচার করে “Bart to the future” নামে। সেখানে দেখানো হয় লিসা নামের এক চরিত্র হিলারি ক্লিনটনের মতো পোশাক পড়ে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প বহু আগে থেকেই আমেরিকাতে সেলেব্রেটি) এবং আরো দেখানো হয় যে পুরো দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। ওই পর্বের ভবিষ্যতবাণীর একটা অংশ যেহেতু মিলে গেছে, তাই বাকি অংশ অর্থাৎ আমেরিকার দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা যাতে না মিলে তার জন্য আমেরিকানদের বেশি বেশি করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা উচিত! 

য় বিশ্বযুদ্ধ

ফ্রেঞ্চ মার্শাল ফার্ডিনান্ড ফসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছিলেন। যুদ্ধ যখন শেষ হলো, তখন তিনি বিশ্বাস করেননি যে এখনই এটার সমাপ্তি হলো। তিনি বলেছিলেন এটা সমাপ্তি নয়, এটা বিশ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি। তার ভবিষ্যতবাণী প্রায় হুবহু মিলে যায়, ঠিক ২০ বছর ৬৮ দিন পর ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

১০আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা

১৯৪৯ সালে প্রকাশিত বইয়ে বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েল কল্পনা করেন ভবিষ্যতের পৃথিবীতে তিনটা পরাশক্তি থাকবে যারা পরস্পরের সাথে যুদ্ধরত এবং দেশগুলোর জনসংখ্যা খুবই নিয়ন্ত্রিত। সেই রাষ্ট্রগুলোর একটা ভয়াবহ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়- আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা, যা বর্তমান পৃথিবীর এক রুঢ় বাস্তবতা। সেই বইয়ে দেখানো হয়েছে স্যাটেলাইট ক্যামেরা, পাবলিক ক্যামেরা, সিক্রেট সার্ভিস এসবের মাধ্যেমে “বিগ ব্রাদার” সব সময় জনগনকে দেখছে, যা কিনা বর্তমান যুগে এসে হুবহু মিলে গেছে। কে জানে আধুনিক যুগের শাসকেরা অরওয়েল এর কাছ থেকেই আইডিয়া পেয়েছে কিনা!

১১প্রফেশনাল ফিউচারিস্ট

শুনে অবাক লাগতে পারে যে এই ধরণের মানুষ পৃথিবীতে আছে যার কাজই হলো ভবিষ্যত অনুমান করা, (দয়া করে আমাদের দেশের জ্যোতিষীদের সাথে মেলাবেন না) এরকম একজন হচ্ছেন রে কুর্জওয়েল। তার করা টেকনোলজি সংক্রান্ত  প্রায় সমস্ত অনুমান ফলে গেছে। এখন পর্যন্ত তিনি ১০৮ টি ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন তার মধ্যে ৮৯ টা সম্পূর্ণ সঠিক হয়েছে। তার বইয়ে তিনি ই-বুক, ন্যানো মেশিন, ইন্টারনেট, ওয়ারলেস ইন্টারনেট সম্পর্কে পারফেক্টভাবে অনুমান করেছিলেন। তবে তার এই দক্ষতা শুধু টেকনোলজির মধ্যেই আটকে থাকেনি। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং কম্পিউটারের কাছে মানুষের দাবা খেলায় হেরে যাওয়ার ব্যাপারেও সঠিক ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন।

ভবিষ্যৎ জানার ইচ্ছায় মানুষ জ্যোতিষী আর কবিরাজের কথা শুনতে গিয়ে অহরহ ধরা খায়। তা যতই ধরা খাক, সামনে কী হবে তা জানার দুর্মর আকাঙ্খা মানুষের কখনোই মরে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অনুমান করতে পারি, স্বপ্ন দেখতে পারি, প্রত্যাশা করতে পারি। তবে ভবিষ্যৎবাণী? কার কোনটা মিলে যায়, কে জানে!

লেখা ও ছবি- লিস্টটুয়েন্টিফাইভডটকম
ফিচার্ড ইমেজ- হাফিংটনপোস্ট

23 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here