আপনি হ্যাকিং এর শিকার হওয়ার পরে কিভাবে আপনার পিসিকে সিকিউর করবেন?

22
386

এতোদিন সিকিউরিটি নিয়ে যতো গুলো আর্টিকেল লিখেছি, প্রায় সব আর্টিকেলে লিখেছি, কিভাবে হ্যাকার থেকে বাঁচবেন, কিভাবে আপনার কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখবেন। কিন্তু আপনি যদি অলরেডি হ্যাক হয়ে যান, আপনার কম্পিউটার যদি অলরেডি জম্বি হয়ে যায়, কিংবা আপনার নেটওয়ার্ক যদি হ্যাকারের কবলে থাকে, তো কিভাবে আপনার কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ককে সিকিউর করবেন? হতে পারে কেউ আপনার সাথে প্রতারণা করিয়ে আপনাকে ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক ক্লিক করিয়ে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করিয়েছে বা হতে পারে আপনি র‍্যানসমওয়্যারের কবলে পড়েছিলেন এবং আপনার কম্পিউটার বিভিন্ন বিশ্রী ভাইরাসের মুখে পড়েছে। তাহলে এখন আপনার কি করা উচিৎ? চিন্তার কোন কারণ নেই, জাস্ট আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন, আর আমি আপনাকে শিখিয়ে দেবো, কিভাবে হ্যাক থেকে উদ্ধার হয়ে আপনার পিসি এবং নেটওয়ার্ককে সিকিউর বানাবেন। তো, চলুন শুরু করা যাক…
শুরু করার আগে
ধরুন আপনার কম্পিউটার সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে, কিংবা বটনেটে পরিনত হয়েছে, যেটাকে হ্যাকার রিমোটভাবে কন্ট্রোলও করছে। তো প্রথমে আপনার কম্পিউটারকে ইন্টারনেট কানেকশন থেকে বিচ্ছিন্ন করুণ। কারণ হ্যাকার ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আপনার কম্পিউটারের বারোটা বাজাচ্ছে। আপনার যদি মনে হয়, আপনার রাউটারও হ্যাকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে রাউটারকেও ব্রডব্যান্ড লাইন বা মডেম থেকে ডিস্কানেক্ট করুণ। আপনি যদি ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকেন, তো ল্যাপটপ এর ওয়াইফাই অফ করে দিন। অনেক ল্যাপটপ এ ওয়াইফাই অন অফ করার ফিজিক্যাল বাটন থাকে, সেটা প্রেস করেও ওয়াইফাই অফ করতে পারেন। ইন্টারনেট কানেকশন অফ করে দেওয়ার পরে এবং হ্যাকারের অ্যাক্সেস ডিস্কানেক্ট করার পরে আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম রি-ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়বে, সাথে হার্ড ড্রাইভ ইরেজ করতে হবে—কিন্তু এর আগেও কিছু কাজ রয়েছে।

হার্ড ড্রাইভ ইরেজ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার অত্যন্ত কাজের ফাইল গুলোর ব্যাকআপ করে নিতে হবে। পার্সোনাল ফাইল গুলোকে যেকোনো ইউএসবি ড্রাইভ, ফ্ল্যাশ কার্ড, বা সিডি, ডিভিডি‘তে ব্যাকআপ করে নিন। ব্যাকআপ করে নেওয়ার পরে যদি অন্য কম্পিউটারে ডাটা গুলোকে স্টোর করতে চান, তবে অবশ্যই চেক করে নিন ঐ কম্পিউটারে লেটেস্ট অ্যান্টিভাইরাস সাথে লেটেস্ট আপডেট ইন্সটল করা রয়েছে কিনা। তারপরে আপনার ব্যাকআপ ডাটা গুলো স্ক্যান করে নিন, সেগুলো ম্যালওয়্যার ফ্রী কিনা। আপনার ব্যাকআপ ফাইল গুলোকে ভেরিফাই করা হয়ে গেলে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার সময় এসেছে আপনার হার্ড ড্রাইভটিকে সিকিউর করার জন্য ডাটা গুলোকে ইরেজ করা। অনেক ডিস্ক ইরেজ করার ইউটিলিটি রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজে আপনার কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভ ইরেজ করতে পারবেন। অনেকে শুধু ড্রাইভ রি-ফরম্যাট করেই নিজেকে সিকিউর মনে করে, কিন্তু ফরম্যাট করার সময় ডাটা গুলো শুধুই ডিলিট হয়, ম্যালওয়্যার গুলো সম্পূর্ণ চলে যায় না, শুধু হাইড হয়ে যায়। যাই হোক, ড্রাইভটি সিকিউরভাবে ইরেজ করার পরেও যদি আপনার মনে চিন্তা থাকে, ম্যালওয়্যার কোথাও লুকিয়ে থাকলো কিনা, তো আলাদা কম্পিউটারে হার্ড ড্রাইভটি স্ক্যান করিয়ে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই আলাদা কম্পিউটারে লেটেস্ট অ্যান্টিভাইরাস আপডেট ইন্সটল থাকতে হবে।

ড্রাইভ ইরেজ করা হয়ে গেছে, ইন্টারনেট ডিস্কানেক্ট করা হয়েছে, এবার নিচের কাজ গুলো স্টেপ বাই স্টেপ অনুসরণ করতে হবে…

#অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল
অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার আগে অবশ্যই চেক করে নিন সেটা অফিশিয়াল ফাইল কিনা। যদি আপনি ফাইলটি ডাউনলোড করেন, তবে অবশ্যই অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অপারেটিং সিস্টেম ইমেজ ফাইল ডাউনলোড করবেন, সাথে অবশ্যই খেয়াল রাখুন, আপনার অপারেটিং সিস্টেম ফাইলটি জেনো লেটেস্ট ভার্সনে থাকে। অনেকে আইএসও ইমেজ ডাউনলোড করার জন্য তৃতীয়পক্ষ লিঙ্ক বা টরেন্ট খুঁজে, যেটা মোটেও সিকিউর ব্যাপার নয়। যদি আপনার কাছে অফিশিয়াল ডিভিডি থাকে কিন্তু সেটা যদি ব্যাকডেট হয়, তো আমি বলবো লেটেস্ট ভার্সন ডাউনলোড করে নিন, এতে সিকিউরিটি প্যাচ করার সময় টুকু বেঁচে যাবে।

যাই হোক, ধরুন এবার অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল প্রসেস শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন অপশন চালু এবং বন্ধ করার জন্য চয়েজ দেওয়া হবে। যদি আপনি ডিফল্ট অপশন সিলেক্ট করেন তবে সব কিছু এনাবল হয়ে যাবে, এটা কিন্তু করা যাবে না। সকল ফিচার গুলো বা কি এনাবল করতে চাচ্ছেন সেগুলোকে ভালভাবে পড়ে রিভিউ করুণ, কেনোনা এখানে আপনার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির ব্যাপার রয়েছে। প্রত্যেকটি সিকিউরিটি সেটিং রিভিউ করুণ, যদি কোন অপশন আপনার বুঝতে অসুবিধা হয়, তার জন্য গুগল করে দেখুন, আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।

অপারেটিং সিস্টেম লোড হওয়ার পরে এবার সর্বশেষ আপডেট এতে অ্যাপ্লায় করিয়ে নিন, লক্ষ্য রাখুন যাতে সকল রিসেন্ট সিকিউরিটি প্যাচ গুলো লাগানো থাকে। বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেমেই অটো-আপডেট টুল থাকে, যেটাকে রান করিয়ে সমস্ত কিছুকে আপ-টু-ডেট করে ফেলতে পারবেন। বারবার আপডেট প্রসেস রান করান, ততোক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আপডেট সিস্টেম বলছে “আর নতুন কোন আপডেট নেই”। সাথে আপনার সকল ড্রাইভার গুলোর লেটেস্ট ভার্সন ইন্সটল করুণ, যদি আপনার কাছে ড্রাইভার ডিভিডি থাকে, সেগুলোকে ইন্সটল করার পরে আপডেট করে নিন।

#অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল
অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার পরে এবং সকল আপডেট আর সিকিউরিটি প্যাচ গুলোকে অ্যাপ্লায় করার এবার নেক্সট স্টেপ হচ্ছে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইন্সটল করা। অবশ্যই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস নির্বাচন করুণ, যেটাকে বেশিরভাগ ওয়েবসাইট ভালো বলে স্বীকৃতি দিয়েছে কিংবা ভালো রিভিউ রয়েছে। আমি বলবো অবশ্যই একটি পেইড অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে, কিন্তু যদি আপনার টাকা না থাকে, তো আপনি ফ্রী ভার্সনও ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রী ভার্সন মানে কিন্তু ক্র্যাকড ভার্সন নয় বা চিট ভার্সন নয়, যেটা কোম্পানি অফিশিয়ালি ফ্রী প্রদান করছে সেই ফ্রী ভার্সন। আর কখনোই ক্র্যাক ভার্সন বা চিট ভার্সন অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না, হতে পারে সেটা নিজেও একটি ম্যালওয়্যার। আপনার অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটি লোড করে নেওয়ার পরে এবার অবশ্যই এর ভাইরাস ডাটাবেজকে লেটেস্ট আপডেট অ্যাপ্লায় করে নিন। আর অবশ্যই প্রতিনিয়ত অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটি আপডেটেড রাখবেন (কোন অলসতা করা যাবে না, বেশিরভাগ অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার নিজে থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেটেড হয়, সেটা কখনোই অফ করবেন না!)। আরো পড়ুন; এন্টিভাইরাস বনাম এন্টিম্যালওয়্যার | আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন? উইন্ডোজ ডিফেন্ডার কতোটা ভালো?

আপনি ভালো পেইড একটি অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করলেন আর সাথে সেটাকে আপডেট করলেন, এর মানে ভেবে নেবেন না যে আপনার সিস্টেম সম্পূর্ণ সিকিউর হয়ে গেছে। অনেক টাইপের ম্যালওয়্যার রয়েছে, যেগুলো আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামকে সহজেই ধোঁকা দিতে সক্ষম। প্রতিনিয়ত বহু নতুন ম্যালওয়্যার তৈরি হচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে, একটি সিঙ্গেল অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম কখনোই আপনার জন্য পারফেক্ট হবে না। তাই এবার একটি সেকেন্ডারি ম্যালওয়্যার স্ক্যানার টুল ইন্সটল করুণ। আমি ম্যালওয়্যার বাইটস কে দ্বিতীয় টুল হিসেবে রিকোমেন্ড করবো। যদি কোন কারণে কোন ম্যালওয়্যার আপনার প্রধান অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামকে ধোঁকাও দেয় তো সে দ্বিতীয় সফটওয়্যারের কাছে ধরা খেয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সেকেন্ড ম্যালওয়্যার স্ক্যানার টুলকে নিয়মিত আপডেট করে রাখুন।

#লেটেস্ট সফটওয়্যার ইন্সটল
আপনার কম্পিউটারের ভাইরাস প্রোটেকশন সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে এবার আপনাকে আপনার সকল কাজের সফটওয়্যার এবং অ্যাপস গুলোকে ইন্সটল করতে হবে। অনেকে সব সফটওয়্যারের সেট-আপ ফাইল ব্যাকআপ করে রাখে আর সেখান থেকে ইন্সটল করে, আমি বলবো সকল লেটেস্ট ভার্সন সফটওয়্যার গুলোকে ডাউনলোড করে তারপর ইন্সটল করুণ এবং লক্ষ্য করুণ সফটওয়্যার গুলোর সকল সিকিউরিটি প্যাচ গুলো জেনো অ্যাপ্লায় করা থাকে। যদি কোন সফটওয়্যারে অটো-আপডেট ফিচার থাকে তো সেটাকে অন রাখুন।

আর হ্যাঁ, আপনি হয়তো সবকিছুতেই অটো-আপডেট চালু করে রেখেছেন আর নিশ্চিন্তে বসে রয়েছেন, “আরে সব তো আপডেট হবেই”—এরকমটা কিন্তু করাই যাবে না। কেনোনা সকল অটো-আপডেট সব সময় কিন্তু কাজ করবে না। আপনাকে কয়েকদিন পরপর চেক করে দেখতে হবে, সব কিছু আপডেটেড রয়েছে কিনা, যদি না থাকে তো ম্যানুয়ালি আপডেট করে ফেলুন। সাথে অবশ্যই আপনার ম্যালওয়্যার স্ক্যানারের আপডেট ও চেক করে দেখুন।

নেটওয়ার্ক সিকিউর
উপরের স্টেপ গুলো অনুসরণ করে আপনার কম্পিউটারকে সম্পূর্ণ রুপে ফিরিয়ে নিয়ে আনা সম্ভব। তবে ব্যাকআপ করা ফাইল গুলো আবার আপনার কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে স্টোরের পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ম্যালওয়্যার স্ক্যান করিয়ে নেবেন। এবার আসি, আপনার হোম নেটওয়ার্ক সিকিউর করার কথা নিয়ে। প্রথমত, আপনার আইএসপির সাথে যোগাযোগ করুণ এবং চেষ্টা করুণ নতুন একটি আইপি অ্যাড্রেস অর্জন করতে। যদিও এমনটা করতেই হবে সেটা প্রয়োজনীয় নয়, তারপরেও আলাদা আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা ভালো কথা। যদি আপনার আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তনশীল হয়, তো সেটা আরো ভালো কথা। নতুন আইপি অ্যাড্রেস হলে হবে কি, হ্যাকার যদি আপনাকে আবার আগের আইপি অ্যাড্রেসে কানেক্ট করতে চায়, সে খুঁজে পাবে না। যেমনটা নতুন ফোন নাম্বার পরিবর্তন করলে আপনাকে কেউ খুঁজে পায় না।

#রাউটারে ফ্যাক্টরি সেটিং রিস্টোর করুণ
যদি মনে করেন, আপনার রাউটারও হ্যাকার নিয়ন্ত্রন করে রেখেছে, তো রাউটারের সেটিং ফ্যাক্টরি সেটিং এ রিস্টোর করুণ। এতে হ্যাকারের হ্যাক করা পাসওয়ার্ড রিমুভ হয়ে যাবে এবং ফায়ারওয়ালের সব রুল গুলো রিসেট হয়ে যাবে যেগুলোকে হ্যাকার বাইপাস করেছিলো। তবে ফ্যাক্টরি সেটিং রিস্টোর করার আগে অবশ্যই চেক করে দেখুন আপনার কাছে রাউটার অ্যাডমিন নেম এবং পাসওয়ার্ড রয়েছে কিনা, তার সাথে সাপোর্ট ওয়েবসাইট লিঙ্কও প্রয়োজনীয় হবে। যদি আপনি রাউটার সেটিং কনফিগ করতে পারেন তো ভালো কথা, না পারলে অবশ্যই আগের সেটিং গুলো লিখে রেখে তারপরে রিসেট করুণ।

ফ্যাক্টরি সেটিং রিস্টোর করার পরে অবশ্যই সাথে সাথে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে স্ট্রং পাসওয়ার্ড সেট করুণ, আর কি পাসওয়ার্ড সেট করলেন সেটা কিন্তু মনে রাখতে হবে 🙂

22 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here