আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং করবেন ভাবছেন? এই বিষয়ে আই টি ডক্টর ২৪. কম থেকে কিছু টিপস।

9
352

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কাজ পেতে পারেন। সহজ কাজগুলোর মধ্যে আছে Search Engine Optimization, Article writing, Data Entry ইত্যাদি। স্বভাবতই কাজগুলো যেহেতু সহজ, সেহেতু এগুলোতে বিডিং হয় সবচেয়ে বেশি এবং এগুলো সহসা পাওয়াও দুষ্কর। এগুলোর চাইতে একটু কঠিন কাজ হল Web Development, Product Development, Software Development, Graphics Designing ইত্যাদি। কঠিন কাজগুলোতে সহজ কাজের চাইতে পে-মেন্ট বেশি থাকে।

আপনি কোন্ কাজটি করবেন সেটি নির্ভর করে আপনি কোন্ কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং মার্কেটপ্লেসে তার চাহিদা কেমন। সবসময় এই দুটো বিষয়ের ওপর ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করুন।
আপনার কাজটি কতটা জটিল, এটি সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে রেট নির্ধারিত হয়। ফিক্সড পেমেন্টের কাজগুলো ৩০ ডলার থেকে শুরু করে ১০০০ বা তারও বেশি ডলারের হয়।

কিভাবে বিড করবেন

প্রধানত দুই প্রকারে বিডিং করা হয়ঃ

  • Project Fee: কোনো একটি প্রজেক্ট যখন মার্কেটপ্লেসে দেওয়া হয়, তখন আপনি পুরো প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে কত পারিশ্রমিক নিবেন তা নিয়ে বিডিং করতে পারেন।
  • Hourly Rate: এই পদ্ধতিতে আপনি কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে প্রতি ঘন্টায় কত পারিশ্রমিক নেবেন, তা নিয়ে বিড করতে পারেন।

টাকা তুলবেন কিভাবে

১.  Bank-to-Bank Wire Transfer: কিছু কিছু মার্কেটপ্লেস থেকে সরাসরি টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে সব মার্কেটপ্লেস থেকে এটি করা যায় না, সেক্ষেত্রে অনলাইনে টাকা লেনদেনের বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে প্রথমে আপনার অর্থটি ডলার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। টাকা পাবার পর সেটি আপনি Skrill (প্রাক্তন Moneybookers) বা এ ধরনের কোনো মানি সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে মার্কেটপ্লেস ভেদে ট্রান্সফার ফি দিতে হতে পারে। এরপর Skrill থেকে সেই টাকাটি আপনি আপনার দেশের কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। এই ধাপে ব্যাংক আপনার কাছ থেকে আরেকটি ট্রান্সফার ফি কেটে নিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যাংকটির যেনো অবশ্যই একটি SWIFT Code থাকে। নতুবা আপনার টাকা Skrill থেকে ট্রান্সফার হবে না। পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম ট্রান্স্যাকশনের ক্ষেত্রে প্রায় এক মাস লাগে। পরবর্তী Transaction গুলো সাত দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর SWIFT Code পেতে নিচের লিংকটি দেখতে পারেনঃ
http://www.theswiftcodes.com/bangladesh/

২. পেওনিয়ার কার্ড (Payoneer Card): নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আপনি আপনার মার্কেটপ্লেস থেকে যেকোনো সময়ে অর্থ উত্তোলন করার জন্য একটি কার্ড পেতে পারেন। এটি এক রকম ডেবিট কার্ডের মত। এই কার্ড দিয়ে আপনি পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে ATM এর মাধ্যমে যেকোন সময়ে আপনার মার্কেটপ্লেসে জমানো টাকা তুলতে পারবেন। এই কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটাও করতে পারবেন। এমনকি এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থিত আপনার কোন আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব তাদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড থেকে আপনাকে টাকা পাঠাতে পারবেন।

৩. ক্লায়েন্ট এর নিকট থেকে সরাসরি ট্রান্সফারঃ যখন কেউ একজন আপনার রেগুলার ক্লায়েন্ট হয়ে যাবেন, তখন তার কাছ থেকে প্রজেক্ট পেতে আপনার আর মার্কেটপ্লেসে যেতে হবে না। তিনি সরাসরি আপনার সাথে ই-মেইল বা অন্য কোনো উপায়ে যোগাযোগ করে প্রজেক্ট দিবেন এবং প্রজেক্টের পে-মেন্ট আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ট্রান্সফার করবেন।

ফ্রিল্যান্সারদের চ্যালেঞ্জসমূহ

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে গেলে অপার সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি-ও হতে হয়। যেমনঃ-

  • কাজ করার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, ক্লায়েন্ট যখন চাইবেন তখনই তাকে কাজের অগ্রগতি দেখাতে হবে। এটি আপনার প্রাত্যহিক ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং করছেন তাদের মাসিক আয় যথেষ্ট পরিমাণে ওঠানামা করতে পারে।
  • সব ক্লায়েন্টের প্রতিশ্রুতি এক রকম থাকে না, কাজ শেষ হয়ে গেলেও কেউ কেউ সম্পূর্ণ পে-মেন্ট প্রতিশ্রুত সময়ের চেয়ে দেরিতে দেন।
  • বাংলাদেশে এই পেশাটি এখনও সামাজিকভাবে তেমন একটা স্বীকৃতি পায় নি। তবে দ্রুতই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যাচ্ছে।

কিছু ব্যতিক্রমী মার্কেটপ্লেস

Odesk.com, Elance.com, Freelancer.com- এই প্রচলিত সাইটগুলো ছাড়াও ব্যতিক্রমি কিছু ফ্রিল্যান্সিং করার সাইট আছে। সংক্ষেপে সেগুলোর একটি বর্ণনা এখানে দেওয়া হল।

  • 99designs.com : গ্রাফিক ডিজাইন নির্ভর এই সাইটটিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজের পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর এ সাইটের পুরস্কারের টাকার পরিমাণ অন্য যেকোনো সাইটের তুলনায় বেশ ভাল। এখানে ক্লায়েন্ট তার চাহিদা অনুযায়ী কাজের বিবরণ দিবেন, কাজটি পাওয়ার জন্য আপনাকে কোন দরখাস্ত করতে হবে না। তার বর্ননা করা চাহিদা অনুযায়ী আপনি ডিজাইন করবেন এবং তা প্রতিযোগিতার পেইজে আপলোড করবেন। আপনার ডিজাইনটি সংশ্লিষ্ট ক্লায়েন্ট দেখবেন। আপনার মত আরও অনেক ডিজাইনার তাঁর নিজের ডিজাইন আপলোড করবেন ক্লায়েন্টের কাছে। ক্লায়েন্ট এর যে ডিজাইন পছন্দ হবে তিনি সেটিই বেছে নেবেন এবং সবশেষে পারফেক্ট ডিজাইনারকে পুরস্কার বা প্রজেক্টের টাকা প্রদান করবেন।
  • themeforest.net: থিমফরেস্ট গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কাজের একটি জনপ্রিয় সাইট । গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা এখানে তাঁদের ডিজাইন টেমপ্লেট বিক্রি করতে পারেন এবং ডেভেলপার হলে ডিজাইনের পাশাপাশি এইচটিএমএল এবং সিএসএস কোডিংও বিক্রি করা যায়। থিমফরেস্টে থিম বিক্রি হয়, আর গ্রাফিক্স বিক্রি করার জন্য গ্রাফিকরিভার, কোড বিক্রি করার জন্য কোডক্যানিয়ন, স্টক ফটোগ্রাফি বিক্রি করার জন্য ফটোডিউন এবং থ্রিডি অ্যানিমেশন বিক্রির জন্য থ্রিডিওশান বেশ জনপ্রিয় মার্কেটপেস।

এরকম ব্যতিক্রমী কিন্তু জনপ্রিয় আরও দুটি মার্কেটপ্লেস হল designcrowd.com এবং fiverr.com

বিবেচ্য বিষয়

১. ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টগুলোর একটি বড় অংশ আসে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে, তাদের সাথে আমাদের সময়ের পার্থক্য ৫ থেকে ১২ ঘন্টা। সহজ প্রজেক্টগুলো পোস্ট হবার প্রায় সাথে সাথেই বিডিং শুরু হয়ে যায়। তাই আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুতে রাতের বেলা বিড করতে হবে।

২. কাজটি জেনুইন কিনা বুঝতে সবার আগে যিনি প্রজেক্টটি পোস্ট করেছেন তার অ্যাকাউন্টটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন। তার সম্পর্কে অন্যদের ফিডব্যাকগুলো দেখে নিন। তিনি পেমেন্ট ভেরিফাইড কিনা সেটা দেখুন। বিড করার পর প্রজেক্ট পেয়ে গেলে তাকে প্রশ্ন করুন যে তিনি কিভাবে পে-মেন্ট দিতে চান, কবে দিতে পারবেন।

৩. ভালো ক্লায়েন্ট ধরে রাখার চেষ্টা করুন। সব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আপনি একই ব্যবহার পাবেন না, যার ব্যবহার ভালো তাকে ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। ভবিষ্যতে তার হাত ধরেই আপনি ভালো প্রজেক্ট পেতে পারেন।

৪. আপনি যেই মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন সেখানে Escrow সার্ভিস থাকলে সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। Escrow হল মার্কেটপ্লেসে টাকা জমা রাখার একটি সার্ভিস যা কাজের শেষে আপনার পারিশ্রমিক পাওয়া নিশ্চিত করে। কোনো একটি প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলার সময় আপনি ক্লায়েন্টকে অনুরোধ করতে পারেন পারিশ্রমিকের পুরো টাকাটি Escrow তে জমা রাখতে। Escrow তে একবার টাকা রাখার পর তা ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি Escrow থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা Discharge করে দিবেন। যদি আপনার ক্লায়েন্ট টাকা না দেন, তাহলে এই Escrow সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার পাওনা টাকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী করতে পারবেন।

৫. কোনো কোনো প্রজেক্টের জন্য Employer ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা রাখেন। যেসব প্রজেক্টের জন্য ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে সেগুলোতে বিড না করাই ভালো, কারণ ইন্টারভিউ যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, সুতরাং সেগুলো থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

৬. কাজের চাপ সামাল দিতে শিখুন। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সব সময় কাজের চাপ সমান থাকে না। যখন চাপ অনেক বেশি থাকে তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একটি ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। সময়ানুবর্তীতা বজায় রাখুন।

৭. আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে চোখ রাখুন। সব সময় আপনার কাজের মান উন্নয়ন করতে চেষ্টা করুন। এটি আপনার ভাল প্রোফাইল ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

৮. সহসাই কোনো প্রজেক্টের প্রস্তাব গ্রহণ না করে একটু ভেবে দেখুন কাজটি আপনি ১০০ ভাগ সম্পূর্ণ করতে পারবেন কিনা।

৯. কোনো কোনো মার্কেটপ্লেসে বিডিং করার সময় একটি Cover letter দিতে হয়। এক্ষেত্রে Cover letter টি প্রাসঙ্গিক, হতে হবে। সব কয়টি Cover letter এ একই ধরনের Template ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করুন আপনার সব কয়টি Cover letter নিজে থেকে বানাতে, এতে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে।

১০. আপনার কাজের জায়গাটি সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। কাজের মাঝে বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না। আপনার প্রাত্যহিক কাজগুলো মনে রাখতে একটি ছোটো নোটবুক সাথে রাখতে পারেন।

১১. ক্লায়েন্টের সাথে যেকোন ধরনের যোগাযোগ অথবা অডিও/ভিডিও ইন্টারভিউ এর সময় পেশাদারী পোশাক এবং ব্যবহার বজায় রাখুন।

১২. আপনার কাজ ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়েছে কি-না তা জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। ক্লায়েন্টের feedback থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি মার্কেটপ্লেস হলো Odesk.com, Freelancer.com, Elance.com। এই তিনটি সাইটেই খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

আউটসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ওডেস্ক। ফ্রিল্যান্সিং-এর সবচেয়ে বড় এই মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩য়। বর্তমানে ৭০০০ সক্রিয় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ওডেস্কে এবং বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই কারণে ওডেস্কের উদ্যোগে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘কনট্রাক্টরস অ্যাপ্রিপ্রিয়েশন ডে (২০১২) এবং ওডেস্কের পক্ষ থেকে কয়েক দফা বাংলাদেশে সফরে এসেছেন ওডেস্কের শীর্ষস্থানীয় সব কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে ওডেস্কের মোট কাজের ২ শতাংশ করতেন বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা। ২০১২ সাল নাগাদ যা গিয়ে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। ২০১২ সালের প্রান্তিকে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা ওডেস্কে ৭ লাখ ২০ হাজার ঘন্টা কাজ করেছেন।

ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ২৫ হাজারের বেশি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় জনপ্রিয় সাইট ফ্রিল্যান্সার ডটকমেও বাংলাদেশিদের অবস্থান সন্তোষজনক। এ সাইটটিতে বাংলাদেশিরা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজই বেশি করে থাকেন। সর্বশেষ স্ত্রিপ্টল্যান্সডটকম সাইটটি ফ্রিল্যান্সার কর্তৃক কিনে নেয়ায় বাংলাদেশি অনেক প্রোগ্রামার এখন ফ্রিল্যান্সার ডটকমে কাজ শুরু করেছেন।

অপর জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সেও প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ইল্যান্স কর্তৃপক্ষ কন্ট্রাক্টর বাই জিওগ্রাফি ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ২৫টি দেশের নাম প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। প্রকাশিত তথ্যমতে, সাইটটিতে বর্তমানে বাংলাদেশি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার ৩৯ হাজার ১৯৫ (৬ এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত)। এখানে বাংলাদেশিদের প্রতি ঘন্টায় গড় কাজের মূল্য ৯ ডলার। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা এই সাইট থেকে ৪৯ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে।

বাংলাদেশিরা মূলত Data Entry এবং SEO/SEM/SMM-এর কাজ বেশি হয়। এছাড়া Web Development, Software Development, Writing & Content, Design, এবং Multimedia & Architecture সহ অন্যান্য কাজের পরিমাণ কম না। ওয়েব ডেবেলপমেন্ট বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত প্রকল্পে ব্যয় বেশি। এধরণের কাজগুলোতে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। দেখা যায় বাংলাদেশি একজন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার যেখানে প্রতি ঘন্টার জন্য ৩ থেকে ৫ ডলার মূল্যে কাজ করেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন ওয়েব ডেভেলপার প্রতি ঘন্টার জন্য ৩০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত চার্জ করে থাকেন। কেবল তাঁর দক্ষতার কারণেই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি চার্জ করতে পারছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আরো দক্ষতা অর্জন করা দরকার।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফিল্যান্সিং এর অবদান

আমদানী নির্ভর আমাদের এ দেশে যত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রয়োজন হয় তার একটি বড় অংশ আসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। ২০১২ সালে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের শ্রমিকেরা প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন (তথ্যসুত্রঃ ওর্য়াল্ড ব্যংক)। প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে এটা ধরে নিলে ২০১৫ সাল নাগাদ সেটা হবে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ইউএস ডলারের কাছাকাছি।

এবার আসা যাক আউটসোর্সিং শিল্পের দিকে। ২০১২ সালে ৩৬৫ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছেন বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা। ২০১৫ সালে সর্বমোট ৪৪৩ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের কাজ আউটসোর্স হবে। আমরা যদি এর ১০% মার্কেট শেয়ার নিতে পারি তাহলে সেটা প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ৫% মার্কেট শেয়ার নিলে সেটা হবে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা কিনা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বর্তমানের সবচেয়ে বড় খাতকেও অতিক্রম করবে।

আমাদের দেশে প্রায় ৫০ শতাংশই মহিলা। আর এ মহিলাদের একটা বিশাল অংশ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে- এমন কাজ খুব কমই করেন। কিন্তু তাদের একটা বড় অংশ চাইলে বাসায় বসে প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা সময় দিলে প্রতি ঘন্টা ১ ডলার হিসাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ ডলারও ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন। মোট কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা যদি ৭ কোটি হয় তাহলে নারী আছে ৩.৫ কোটি। এর মধ্যে শিক্ষিত তরুণী এবং মহিলা যদি অর্ধ কোটিও হয় এবং তাঁদেরকে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন ১.৫ কোটি ডলার আয় আসবে এ ক্ষেত্র থেকে। বছরে এ আয়ের পরিমাণ দাড়াবে ৫০০ কোটি ডলারে।

9 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here