আসুন বাড়িয়ে নিই ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি, নাহলে আপনার সব তথ্য হাতিয়ে নিবে হ্যাকার আপনি টেরই পাবেন না

8
360

আস সালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভাল আছি। পত্রের শুরুতেই জানাই আপনাদের জন্য আমার প্রাণঢালা ভালবাসা। সরি আমি তো টিউন লিখতেছি ভুলেই গিয়েছিলাম। আসলে আজ এমন কিছু লিখতে যাচ্ছি যেগুলো আপনাদেরকে ভালবাসি বলেই লিখতে যাচ্ছি। নাহলে আজকের দুনিয়ায় খুব কম মানুষই আছে যারা অন্যের ভাল চায়। আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো কিভাবে আপনি আপনার ওয়াইফাই বা ওয়্যারলেস রাউটার এর সিকিউরিটি বৃদ্ধি করবেন। আর বৃদ্ধি না করলে কি হতে পারে সেটাও… তো চলুন শুরু করি…

মনে করুন, আপনি একটা কফি শপে গেলেন কয়েকজন বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে।সেখানে একটা ওয়াইফাই আছে। আপনারা খুব মজা করে ফেসবুক চালালেন, ভিডিও দেখলেন, coc অ্যাটাক দিলেন, ইমেইলে লগিন করলেন। খুব মজা করে বাসায় চলে গেলেন। রাতে খুব সুন্দর একটা ঘুম হল। কিন্তু সকালে হল বজ্রপাত। আপনি দেখলেন আপনি আর আপনার ফেসবুক, ইমেইল,coc কোনোটাই এক্সেস করতে পারতেছেন না। সব কিছু ভুতে এক্সেস করতেছে। আমি কাদেরকে ভুত বলি জানেন ই তো?? এরা হচ্ছে হ্যাকার(রিয়েল ভুত)। সমস্যা টা কোথায় ছিল জানেন??? ঐ কফিশপের মালিকের ওয়াইফাই এ। যেটায় উনি কোনো সিকিউরিটি ব্যবহার করেন নি। আপনি যেমন, সুযোগের সদ ব্যবহার করেছেন ফেসবুকে চালিয়ে, তেমনি হ্যাকারও সেই সুযোগ ব্যবহার করেছে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপের সব ডাটা চুরি করে। হা হা হা… দোষ কাকে দিবেন? হোটেল মালিককে?? উনি তো উনার দোকানের হিসাব রাখতেই হিমশিম খান।আপনাকে সিকিউরিটি দেয়ার বিষয়ে ভাববে কখন। সতর্ক হতে হবে আপনাকে নিজে নিজেই। তাই আজই সতর্ক হোন।

কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম; FAT, FAT32, NTFS, HSF+ কি, এদের মধ্যের পার্থক্য গুলো কি কি? – মেগাপোস্ট!

বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক ছাড়া সহজে কোনো নেটওয়ার্কে কানেক্ট হওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি যেই নেটওয়ার্কেই যুক্ত হন না কেন। ঐ নেটওয়ার্কের মালিক আপনার সমস্ত ডাটার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ  করতে পারবে যদি উনি এক্সপার্ট হয়ে থাকেন।

ঐটা তো বললাম একটা কফি শপের কথা, হ্যাকাররা চাইলে খুব সহজেই আপনার হোম নেটওয়ার্ক থেকেও ডাটা চুরি করে নিতে পারে। আমার এক ফ্রেন্ড তো উনার ব্রডব্যান্ড মালিক যতগুলি লাইন ল্যান কানেকশনে দিয়েছেন সেই সবগুলো কম্পিউটার নাকি এক্সেস করতে পারে। তাহলে বুঝুন অবস্থা। তাই আপনাকে আজই সতর্ক হতে হবে।

আপনি মাত্র ১০টি পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনার হোম নেটওয়ার্ক থেকে  এসব ভুতদের(হ্যাকারদের) তাড়াতে পারেন খুব সহজেই।

তার আগে চলুন জেনে নিই,

হোম ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক আসলে কি?

যদি অল্প কথায় বলি তাহলে হোম ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক বলতে বুঝায় এমন এক নেটওয়ার্ক যা একটা ইন্টারনেট এক্সেস পয়েন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে, সার্ভিস প্রোভাইডার কতৃক একটা ক্যাবলের মাধ্যমে রাউটার এ সংযোদ দেয়া হয় আর রাউটার অনেকগুলো ডিভাইসকে খুব দ্রুত কানেক্ট করতে পারে। নিচের চিত্রের দিকে লক্ষ করি।

কিন্তু আপনি যদি এই হোম নেটওয়ার্কের জন্য কিছু সিকিউরিটি আর প্রাইভেসির ব্যবস্থা না করেন তাহলে সাইবার ক্রিমিনাল ওরফে ভুত আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ভেংঙ্গে আপনার সব ডাটা হাতিয়ে নিতে পারে। নষ্ট করে দিতে পারে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডাটা।

আমরা সাধারণত ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেই নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করি। কিন্তু এটা খুবই জটিল রিস্ক। কারণ  অনলাইন ক্রিমিনাল আপনার এই পাসওয়ার্ডের ধার ধারে না। তারা বুঝার চেষ্টা করে বা অনুমান করার চেষ্টা করে আপনার ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি কতটা দূর্বল।যদি একবার আপনার মাধ্যমে বা আপনার আন্ডারে কারও ডিভাইসের মাধ্যমে সেটা বুঝে ফেলতে পারে তাহলে ম্যান ইন দ্য মিডল অ্যাটাক, নেটওয়ার্ক স্নাইফিং এবং ডাটা চুরির মত বিভিন্ন ম্যালিসিয়াস অ্যাটাক পরিচালনা করতে পারে।

চলুন যে ১০টি উপায় অবলম্বণ করে আপনার ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে আপনি এসব হ্যাকার বা ভুতদের আক্রমণ থেকে হয়ত বাঁচতে পারেন তা জেনে নিইঃ

১। আপনার হোম ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের নাম চেঞ্জ করেঃ

সবার আগে যে জিনিসটা পরিবর্তন করার দরকার সেটা হচ্ছে আপনার ওয়াইফাই এর নাম যেটাকে আমরা  ssid (service set identifier) বলে জানি।  এমন নাম কখনই ব্যবহার করবেন না যে নাম হ্যাকারদেরকে আপনার নেটওয়ার্ক হ্যাক করার জন্য বাধ্য করে। যেমন, ধরুন আপনি নাম দিলেন “can’t hack this”। মানে আপনি পরোক্ষভাবে হ্যাকারদেরকে চ্যালেঞ্জ করলেন। আর হ্যাকাররা তা যেকোনো উপায়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করবে।

তাই এই ধরনের নাম ব্যবহার করতে পারেন “this is not a wifi” অথবা “Too fly for a wifi”

নাম পরিবর্তন করা জরুরি একারণে যে, হ্যাকার যেন প্রথম দেখায়ই বুঝতে না পারে যে আপনি কোন ব্র্যান্ডের রাউটার ব্যবহার করতেছেন। কারণ তারা আগে থেকেই জানে যে, বাজারের কোন রাউটারে কি কি ধরণের দূর্বলতা আছে। আর সে অনুযায়ীই অ্যাটাক পরিচালনা করে।

তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে, ওয়াফাই এর নাম কখনই আপনার নিজের নাম যেমন, sorol wifi ব্যবহার করবেন না। যেন প্রথম দেখায়ই বুঝে না ফেলে এটা আপনার নেটওয়ার্ক। কারণ তারা এমন কিছু ডাটা আপনার আশপাশ থেকে নিয়ে যাবে যার মাধ্যমে আপনি হ্যাক হয়ে যেতে পারেন। তাই অবশ্যই অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন যেন সহজে কেউ বুঝতে না পারে যে, এইটা কার নেটওয়ার্ক।

মাউসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে নিন।

২। শক্তিশালী এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড নির্বাচনঃ

একটা ভাল মানের পাসওয়ার্ড এর জন্য অবশ্যই ২০ টি ক্যারেক্টার ব্যবহার করা উচিত। আর অবশ্যই পাসওয়ার্ড টা হবে কিছু অক্ষর+নাম্বার+ সিম্বল এর সমন্বয়ে। হয়ত এত বড় পাসওয়ার্ড দেখে আপনার ফ্রেন্ডরা আপনাকে উপহাস করতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন সিকিউরিটি উপহাস থেকে অনেক বেশি মূল্যবান।

৩। এনক্রিপশন করে করে ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি আরও শক্তিশালী করুনঃ

ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের কয়েকটি এনক্রিপশন ল্যাংগুয়েজ রয়েছে যেমন ধরুন Wep,wpa,wpa2 ইত্যাদি। wep প্রথম ডেভেলপ করা হয় ১৯৯০ সালে। তাই এটি বর্তমানে ক্র্যাক করা সহজ। আর wpa2 এর বিভিন্ন রুপ রয়েছে।। এর একটি হচ্ছে, TKIP,কিন্তু এটি খুবই পুরাতন এনক্রিপশন পদ্ধতি যেটা প্রথম wpa হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তাই এটা তেমন নিরাপদ নয়। তবে অন্য একটি হচ্ছে, aes (advanced encryption standard) যেটা আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের সরকারী অফিসগুলোতেও ব্যবহার করা হয়। তাই সব চেয়ে ভাল এনক্রিপশন পদ্ধতি হচ্ছে wpa2 aes.তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

৪। যখন আপনি বাসায় না থাকবেন তখন ওয়্যালেস নেটওয়ার্ক ডিজেবল করে দিনঃ

আপনি মনে করুন বাসায় নেই। এদিকে ওয়াইফাই অন করে গেছেন। এই সুযোগে হ্যাকার অনেক বড় সময় পেয়ে যেতে পারে তার হ্যাকিং প্র্যাক্টিস করার। আর কোনোভাবে যদি একবার আপনার রাউটার এর সিকিউরিটি ভাংতে পারে তাহলে আপনার অবস্থা কেরোসিন করে ছেড়ে দিবে। এই তো কিছুদিন আগে ওয়ার্ডফেন্স সিকিউরিটি থেকে আমাকে ইমেইল করে জানানো হয়েছে যে, ফিলিপাইনে প্রায় ৭হাজার ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে রাউটার হ্যাকিং এর মাধ্যমে। বুঝতেই পারতেছেন ব্যাপারটা কত ভয়ানক।

৫। আপনার বাসায় কোথায় রাউটার রাখবেন?

আমি জানি আপনি কখনো এটা ভাবেন নি যে, কোথায় রাখবো এর উপর আবার কিসের সিকিউরিটি নির্ভর করে। কিন্তু সত্যিকার ভাবে আপনি আপনার রাউটার কোথায় রাখতেছেন তার উপরও এর সিকিউরিটি নির্ভর করে।

আপনার রাউটার কে যতটা সম্ভব আপনার বাড়ির মাঝখান বরাবর রাখার চেষ্টা করুন। কেননা, এতে প্রথম লাভ হচ্ছে আপনি প্রতিটা ঘর থেকেই আপনার ওয়াফাই খুব ভালভাবে চালাতে পারবেন। আর দিতীয় লাভ টা হচ্ছে, আপনার রাউটার এর সিগন্যাল রেঞ্জ এত দূরে যাবে না, যেখান থেকে একজন হ্যাকার তার হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। তাই কখনই আপনার রাউটারকে আপনি আপনার জানালার পাশে স্থাপন করবেন না। এতে আপনার সিকিউরিটি নষ্ট হতে পারে।

৬। একটি শক্তিশালী এডমিনেস্ট্রেটর পাসওয়ার্ড নির্বাচনঃ

আপনি বাজার থেকে রাউটার কিনে আনলেন যেটার ডিফল্ট পাসওয়ার্ড আজ কাল বাচ্চারাও জানে। তাই অবশ্যই আপনার রাউটারের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করতে হবে। অধিকাংশ ওয়াইফাই রাউটারে ডিফল্ট ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড ই থাকে admin, admin. তাই এই পাসওয়ার্ড ভাংতে হ্যাকারের কোনো সময়ই লাগে না।

আর আপনি যদি এই নেটওয়ার্ক এডমিন এর  ইউজার নেইম আর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেন তাহলে আপনার ওয়াইফাই এ এ্যাটাক করা সাইবার ক্রিমিনালদের পক্ষে অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।

৭।রিমোট এক্সেস ডিজেবল করুনঃ

অধিকাংশ রাউটার ই এলাও করে যে, শুধু মাত্র ডিভাইসের কানেক্টেড ইন্টারফেস ডিভাইসকে এক্সেস করতে পারবে। কিন্তু কিছু রাউটার আছে যারা রিমোটলি এক্সেস সিস্টেম কে এলাও করে।

তাই যখন আপনি রিমোট এক্সেস কে ডিজেবল করে দিবেন তখন আর সাইবার ক্রিমিনাল আপনার ওয়াফাই নেটওয়ার্কে কানেক্ট না হয়ে বাইরে থেকে তার হ্যাকিং এ্যাটাক পরিচালনা করতে পারবে না। এটা কিভাবে এনেবল বা ডিজেবল করবেন তা গুগলে সার্চ করে জেনে নিন।

৮। আপনার রাউটার এর সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুনঃ

রাউটারেরও ফার্মওয়্যার আছে। অন্যান্য সফটওয়্যারের মত রাউটারের ফার্মওয়্যারের ও কিছু ত্রূটি বা দুর্বলতা আছে। তাই রাউটার কোম্পানী সেই দূর্বলতা দূর করার জন্য মাঝে মধ্যেই তাদের রাউটারের জন্য নতুন ফার্মওয়্যার আপডেট দিয়ে থাকে। তাই এখনই আপনার রাউটারের ফার্মওয়্যার লিখে গুগলে সার্চ করে দেখুন আপনার রাউটারের কোনো নতুন ফার্মওয়্যার বের হয়েছে কি না। অবশ্যই আপনার রাউটারের মডেল লিখে সার্চ করবেন। আর অফিসিয়াল সাইট থেকে ডাউনলোড করবেন।

৯। একটি ফায়ারওয়াল আপনার ওয়াফাই নেটওয়ার্ক কে নিরাপদ রাখতে পারেঃ

আমরা মনে করি যে, শুধু কম্পিউটারেই ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হয়। আসলে অনেক হার্ডওয়ারের ক্ষেত্রেও ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হয়।  এই ফায়ারওয়াল রাউটারের সাথে বিল্ট ইন অবস্থায় থাকে। তাই ফায়ারওয়্যাল ব্যবহার করলে আপনার সিস্টেম সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকে। যদি আপনার ডিভাইসের সাথে ফায়ারওয়াল বিল্ট ইন না থাকে তাহলে একটা ভাল ফায়ারওয়াল ডিভাইস ইন্সটল করে নিন।

১০।আপনি যেই ডিভাইসগুলো ঘন ঘন ওয়াইফাই এ কানেক্ট করেন ঐগুলিকে নিরাপদ রাখুনঃ

আপনি যেই ডিভাইস যেমন কম্পিউটার বা মোবাইল ইউজ করেন তাতে পর্যাপ্ত সিকিউরিটি সফটওয়্যার ও এন্টিভাইরাস দিয়ে রাখুন। যেন অনলাইন ক্রিমিনাল আপনার মোবাইলের মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্কের কন্ট্রোল না পেয়ে যায়।তাই আমি সাজেস্ট করবো আপনারা কোনো প্রিমিয়াম অনলাইন সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

আজ অনেক কথা বলে ফেলেছি। যেই টিপ্স গুলো দেয়া হয়েছে আশা করি এগুলো অনুসরণ করলে আপনি এত সহজে হ্যাকিং এর শিকার হবে না। অনেক কিছুই বিস্তারিত বলতে পারি নি।শুধু হিন্টস দিয়েছি। ঐগুলি গুগল থেকে জেনে নিন। আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু আপনাদেরকে সতর্ক করা আর উপায় বলে দেয়া। সেটা করে ফেলেছি। তাই আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।

পরিশেষে, ভাল থাকুন ,সুস্থ থাকুন, প্রযুক্তিকে ভালবাসুন আর প্রযুক্তির সাথেই থাকুন।

আল্লাহ হাফিজ।

 

 

8 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here