আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং ও কোটি মানুষের জীবনরক্ষাকারী পেনিসিলিনের গল্প!

26
510

প্রচণ্ড জ্বর হয়েছে? ঠাণ্ডা লেগেছে? কাশতে কাশতে জীবন যায় তবু থামার উপক্রম নেই? সাধারণ ঔষধে একদমই কাজ হচ্ছে না? কোনো ভয় নেই। এন্টিবায়োটিক আছে না! ৫ বা ৭ দিন নিয়ম করে খেলেই জীবাণু গোষ্ঠীসহ শরীর ছেড়ে পালাবে। কিছুকাল আগেও তো মানুষ ‘যক্ষা হলে রক্ষা নেই’ বিশ্বাস করতো। এখন? যক্ষা আবার কোনো রোগ নাকি! এসব তো খুব সাধারণ কিছু রোগের কথাই বলা হলো। আরো যত মারাত্মক রোগ ব্যাধি রয়েছে (কেবল জীবনঘাতি রোগ বাদে যেগুলোর চিকিৎসা আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি) সব কিছু থেকে পরিত্রাণের মহৌষধের নাম হচ্ছে পেনিসিলিন বা যাকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক বলে থাকি। আবিষ্কৃত হবার পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর লাখো মানুষের জীবন রক্ষা করে আসছে এই ঔষধ। এই প্রাণ রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক যে চিকিৎসাবিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন তার নাম আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং।৬ অগাস্ট ছিল  তার ১৩৬ তম জন্মদিন। তাই চলুন আজকের এই দিনে তার জীবনীতে সংক্ষেপে চোখ বুলিয়ে নিই।

জন্ম ও শৈশব

১৮৬১ সালের ৬ আগস্ট স্কটল্যান্ডের ছোট্ট শহর ডারভেলে জন্মগ্রহণ করেন আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং। পিতামাতা উভয়েই ছিলেন কৃষি পরিবারের সন্তান। ফ্লেমিং এর যখন ৭ বছর তখন তার বাবা হিউ ফ্লেমিং মারা যান। আর্থিকভাবে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হলেও ফ্লেমিং এর মা গ্রেস স্টার্লিং তার ছেলের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যত্নশীল ছিলেন যথেষ্ট।

ছয় বছর বয়সে একটি স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হন আলেক্সান্ডার। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি এই লাউডেন মুর স্কুলেই হয়। দুবছর পরই তিনি ভর্তি হন ডারভেল স্কুলে যা ছিল তার বাড়ি থেকে ৮ মাইল দূরে। এবং শিশু ফ্লেমিং সে পথটা প্রতিদিন হেঁটে যেতেন! ১১ বছর বয়সে তার অসাধারণ মেধার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে স্কলারশিপ দিয়ে কিলমারনক একাডেমিতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তিনি দুইবছর অধ্যয়ন করেন।

কিলমারনকে পড়ালেখা শেষ করে ফ্লেমিং চলে যান লন্ডন। ১৩ বছর বয়সী কিশোর ফ্লেমিং পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা তথা কমার্স বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। কিন্তু তার শিক্ষকরা দ্রুতই বুঝতে পারেন যে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। সমবয়সী ছেলেরা যে বিষয় বুঝতে খাবি খেতো, ফ্লেমিং এর কাছে তা যেন পানির মতো সহজ মনে হতো। শিক্ষকরা দেখলেন যে ফ্লেমিং তার মেধা মননে সমবয়সীদের চেয়ে ঢের এগিয়ে গেছেন। তখন তাকে তার চেয়ে দুই বছরের বড় শিক্ষার্থীদের সাথে একই ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো! একবার ভাবুন তো, আপনি যখন অষ্টম শ্রেণীতে সবে ভর্তি হয়েছেন তখন আপনাকে সেখান থেকে দশম শ্রেণীতে তুলে দেয়া হলো। কী অবস্থা হবে আপনার? ফ্লেমিং এর কিন্তু কিছুই হলো না। তিনি ১৬ বছর বয়সে স্কুলের পড়ালেখা অনায়াসে শেষ করে বেরিয়ে গেলেন।

মেডিক্যাল কলেজে ফ্লেমিং

ফ্লেমিং এর নিজের আপন কোনো ভাইবোন ছিল না। ছিল ৪ জন সৎ ভাইবোন। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাই থমাস ফ্লেমিং ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন ডাক্তার। আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং নিজের ভাইয়ের মতো হবার স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। ফ্লেমিং এর যখন ২০ বছর তখন তিনি তার চাচা জন ফ্লেমিং এর কাছে উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু অর্থ লাভ করেন। অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা পড়ার ফলে চাকরি পেতেও তার খুব একটা অসুবিধা হয়নি। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য অনেকগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো। ফ্লেমিং সেগুলো শুধু উত্তীর্ণই হলেন না, পুরো ব্রিটেনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ইতিহাসে সর্বোচ্চ নাম্বার পেলেন!

১৯০৩ সালে ২২ বছর বয়সী আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং লন্ডনের সেন্ট মেরি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৬ সালে তার এমবিবিএস পড়ালেখা শেষ হয়। সেবছরই তিনি একই মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনোলজি বিভাগে ব্যাকটেরিওলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯০৮ সালে তিনি ব্যাকটেরিওলজিতে স্বর্ণপদকসহ প্রথম স্থান অধিকার করে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। সেবছরই ফ্লেমিং সেন্ট মেরি মেডিক্যাল কলেজে ব্যাকটেরিওলজির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই বছর সারাহ নামক এক নারীকে বিয়ে করেন। শেষ বয়সে অবশ্য ফ্লেমিং দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন (১৯৪৯ সালে প্রথম স্ত্রী সারাহ এর মৃত্যুর পর)। এমেলিয়া ভাউরেকা নামক নিজের এক গবেষণা সহযোগীকে শেষ জীবনের সঙ্গিনী করেছিলেন ফ্লেমিং।

অ্যান্টিসেপটিক বিষয়ক গবেষণা এবং লাইসোজাইম আবিষ্কার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্লেমিং ‘রয়্যাল আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’ এর ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্রান্সে নিযুক্ত হন। আহত সৈন্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যান তিনি। এসময় তিনি আবিষ্কার করেন যে কার্বনিক এসিড, বরিক এসিড, হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মতো অ্যান্টিসেপটিক আহত সৈন্যদের ক্ষততে প্রয়োগ করলে তা কোনো উপকার তো করেই না বরং ক্ষতস্থানের ‘শ্বেত রক্তকণিকা’ ধ্বংস করার মাধ্যমে ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়! তিনি প্রমাণ করেন যে কেবল মাত্র ছোটোখাটো ক্ষতের জন্য এসব অ্যান্টিসেপটিক করা যেতে পারে। তবে গভীর ক্ষতে সেগুলো ব্যবহার অনেক সৈন্যের প্রাণ কেড়ে নেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্যান্য আর্মি ডাক্তাররা তাৎক্ষণিকভাবে তার কথা বিশ্বাস করতে না পেরে পুরোনো পন্থায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং অনেক সৈন্য অজ্ঞানতাবশত মারা যেতে  থাকে।

১৯১৯ সালে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং লন্ডনের ফিরে আসেন এবং সেন্ট মেরিতে নাকের শ্লেষ্মা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এই গবেষণায় তিনি ‘মাইক্রোকক্কাস লুটিয়াস’ নামক একটি নতুন ব্যকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। এ সময় ফ্লেমিং এর ও ঠাণ্ডা লেগে যায়। একদিন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তিনি যখন নতুন আবিষ্কৃত একটি ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন তখন তার নাক থেকে এক ফোঁটা তরল শ্লেষ্মা ব্যাকটেরিয়ার উপর পড়ে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে লক্ষ করলেন যে শ্লেষ্মা পড়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে!
এই ঘটনা থেকে বিস্মিত হয়ে ফ্লেমিং একই ব্যাকটেরিয়ার উপর রক্তের সিরাম, মুখের লালা, চোখের পানি ফেলে পর্যবেক্ষণ করলেন যেন প্রতিবারই ব্যাকটেরিয়া মরে যাচ্ছে। ফ্লেমিং বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করার পর সিদ্ধান্ত নিলেন যে এই প্রতিটি তরলের মধ্যেই একটি সাধারণ এনজাইম উপস্থিত রয়েছে যার জন্য ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছে। ফ্লেমিং এই এনজাইমের নাম দেন লাইসোজাইম। লাইসোজাইম হচ্ছে আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক রক্ষক যা কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। কিন্তু অধিকাংশ শক্তিশালী জীবাণুই লাইসোজাইমের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেদ করতে সক্ষম হয়।

পেনিসিলিনের বৈপ্লবিক আবিষ্কার

১৯২৮ সালের আগস্ট মাসে ফ্লেমিং এক মাসের পারিবারিক ছুটিতে যান। যাবার সময় তিনি কয়েকটি স্টেফাইলোকক্কাস ভর্তি পেট্রিডিশ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রেখে যেতে ভুলে যান। উপরন্তু তার ল্যাবের সহযোগি তো তার কক্ষের জানালাটাও বন্ধ করতে ভুলে গেলো। ফলে একমাসে খোলা পেট্রিডিশে উন্মুক্ত জানালা দিয়ে এসে বাসা বাঁধলো আরো কত জীবানু তার কোনো হিসেব নেই। এঘটনায় নিজের ও সহকারীর উপর বিরক্ত হলেন ফ্লেমিং। তিনি পেট্রিডিশ গুলো ফেলে দিতে যাবেন আর তখনই তার চোখে অদ্ভুত কিছু ধরা পড়লো। তিনি লক্ষ করলেন পেট্রিডিশের ব্যাকটেরিয়া গুলো সব মরে গেছে আর সেখানে জন্ম হয়েছে একপ্রকার ছত্রাক। আর এতেই হয়ে গেলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম বৈপ্লবিক এক আবিষ্কার।

ফ্লেমিং এর মনে নতুন ভাবনা খেলে গেল। তিনি লাইসোজাইমের চেয়ে আরো উন্নততর প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে ফেলেছেন তা বুঝতে পারলেন। সেই ছত্রাক নিয়ে দিনরাত গবেষণা শুরু করলেন ফ্লেমিং। গবেষণায় দেখা গেল ছত্রাকটি পেনিসিলিয়াম গণের একটি প্রজাতি। এর মধ্যে থেকে এক প্রকার তরল নির্গত হয় যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ১৯২৯ সালের ৭ মার্চ ফ্লেমিং এই জীবাণুরোধী তরলের নাম দেন ‘পেনিসিলিন’।

পেনিসিলিন নিয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য পান ফ্লেমিং। তিনি পেনিসিলিন বিষয়ক তার গবেষণায় প্রকাশ করলেন যে পেনিসিলিন শারীরের কোনো কোষের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং তা স্কারলেট জ্বর, মেনিনজাইটিস, ডিপথেরিয়া ও নিউমোনিয়ার মতো (তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে) মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।

পেনিসিলিন আবিষ্কার করে ফেললেও ফ্লেমিং কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এই যে তিনি ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন অধিক পরিমাণে আলাদা করতে পারছিলেন না। তাছাড়া সরাসরি পেনিসিলিন প্রয়োগে এর কার্যক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। খুব ধীরে কাজ করে। ফ্লেমিং বুঝতে পারছিলেন না কী করে পেনিসিলিন মানুষের শরীরে জীবাণু প্রতিরোধী হিসেবে প্রয়োগ করা যায়।

১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী, ফার্মাকোলজিস্ট ফ্লোরে এবং বায়োকেমিস্ট চেইন এর নেতৃত্বে পেনিসিলিনকে ঔষধে পরিণত করেন। ১৯৪৫ সালে ফ্লেমিং যৌথভাবে ফ্লোরে এবং চেইনের সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সেবছরই তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন এবং তার নামের পাশে বসে ‘স্যার’ শব্দটি। আত্মপ্রচারবিমুখ ফ্লেমিং তখন জনমানুষের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে যান। যেখানেই গিয়েছেন, পেয়েছেন অসামান্য সম্মান। আমেরিকার কেমিক্যাল কোম্পানিগুলো তার সম্মানে তাকে ১ লক্ষ ডলার পুরস্কার দেয়। তিনি সেই পুরস্কারের অর্থ পুরোটাই সেন্ট মেরিতে দান করে দিলেন যেখানে তিনি একজন সত্যিকারের গবেষক হয়ে উঠেছিলেন।

মৃত্যু

সালে দ্বিতীয় বিয়ের দুবছর পরই ১৯৫৫ সালের ১১ মার্চ আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সেন্ট পল’স ক্যাথেড্রালে সমাহিত করা হয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় প্রতি ৫ জনের ৪ জনই প্রতিবছর একবার হলেও পেনিসিলিন গ্রহণ করছেন। অন্যান্য দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এরূপ গবেষণা পরিচালিত হলে দৃশ্যপট বরং আরো বেশি অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভর হবে। প্রতিদিন বিশ্বে লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে পেনিসিলিন গ্রহণ করছে। আপনি-আমিও জীবনে একাধিকবার গ্রহণ করেছি অ্যান্টিবায়োটিক। অতএব এই জীবন রক্ষাকারী ঔষধ যিনি আবিষ্কার করছেন, সেই আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং এর কথা আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ না করলেই নয়। শুধু আজ কেন, অনাগত হাজার জন্মদিনেও ফ্লেমিং এর কথা স্মরণ করবে মানবজাতি।

তথ্যসূত্রঃ
১) https://www.biography.com/people/alexander-fleming-9296894
২)https://en.wikipedia.org/wiki/Alexander_Fleming
৩)www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1945/fleming-bio.htm
৪)www.thefamouspeople.com/profiles/alexander-fleming-151.php
৫)www.biographyonline.net/scientists/alex-fleming.html

26 COMMENTS

  1. Привет всем!
    Купить Диплом Спбгу
    Однако, с финансовой стороны поступление в вуз становится проблематичным.https://saksx-diploms-srednee24.com/ Для людей, у которых прекращено гражданство РФ – подтверждение гражданства другой страны, либо справку о выходе из гражданства России. Для желающих стать обладателем высшего образования мы предоставляем возможность выбрать Одесскую государственную академию строительства и архитектуры, международный гуманитарный университет, морскую академию НУ ОМА или академию связи им. Во время обучения по полноценному учебному плану эти навыки получить невозможно, поскольку работник на неполный рабочий день в данных отраслях никому не интересен. Когда вы ознакомитесь с ценами на документы, то поймете, что покупка документов это очень выгодное капиталовложение.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here