বাতাসে ভেসে থাকতে জানতে হবে। আর ভেসে থেকেই ছুটতে হবে অসম্ভব জোরে। এটাই মন্ত্র বুলেট ট্রেনের।
কিন্তু চাইলেই তো আর ভেসে থাকা যায় না পৃথিবীতে। ওজন থাকলে তো নয়ই। ওজনই ভেসে থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীর ‘মায়া’ মানে অভিকর্ষ বল (ফোর্স অফ গ্র্যাভিটি) তো কাউকেই বেশি ক্ষণ ভেসে থাকতে দেয় না বাতাসে। ওজন থাকলে তো আরওই দেয় না। সেই ভেসে থাকা বা ভেসে থাকতে চাওয়া বস্তুটিকে নীচে, পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে নামাবেই অভিকর্ষ বল। পৃথিবীর এই ‘মায়া’ কাটানো খুবই মুশকিল কোনও ওজনদার বস্তুর পক্ষে।
তাই বাতাসে অনেক ক্ষণ ধরে ভেসে থাকতে গেলে আগে পৃথিবীর ওই ‘মায়া’ কাটাতে হবে! সেই বস্তুটিকে এমন অস্ত্রে শক্তিশালী করে তুলতে হবে যাতে তা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে পুরোপুরি উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করতে পারে। ওজন থাকলেও যাতে সেই বস্তুটিকে পৃথিবীর অভিকর্ষ বল টান মেরে নীচে নামাতে না পারে।
তবে শুধু ভেসে থাকলেই তো হবে না। ভেসে থাকা অবস্থাতেই তাকে ঝড়ের গতিতে ছুটতেও হবে। সেই ছোটানোর জন্যেও ভাসমান বস্তুটিকে আরেকটি অস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে।
বাতাসে ভেসে থেকে ঝড়ের গতিতে ছোটার জন্য অবশ্য দশভূজার ১০ রকমের অস্ত্রের দরকার নেই বুলেট ট্রেনের। একটি কৌশলেই তাকে ভাসিয়ে রাখা আর ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় দীর্ঘ ক্ষণ। দীর্ঘ পথ।
জাপানের বুলেট ট্রেন বা শিয়ানকানসেন
সেই কৌশলেই চলে বুলেট ট্রেন। জাপানে, জার্মানিতে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ভারতেও সদ্য চালু হয়েছে। তবে সেই বুলেট ট্রেন কিন্তু ট্র্যাক ছুঁয়েই চলছে। ট্র্যাক ছেড়ে কিছুটা ওপরে ওঠার সাহস দেখাতে পারেনি!
প্রশ্ন উঠতে পারে, ট্র্যাক ছুঁয়েও কী ভাবে ভারতে ট্রেন ছুটছে বুলেট গতিতে?
উত্তরটা হল, জাপানে যে কৌশলে চালানো হয় বুলেট ট্রেন, ভারতে ঠিক সেই কৌশলেই তা চলছে না। যে কারণে বিমান আরও বেশি উচ্চতায় উঠে যেতে পারে তরতরিয়ে, কিছুটা সেই কৌশলেই বুলেট ট্রেন ছুটছে ভারতে।
‘ম্যাগলেভ’ কী জিনিস?
জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বুলেট ট্রেন চলে যে কৌশলে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলে ‘ম্যাগনেটিক লেভিটেশন’। সংক্ষেপে, ‘ম্যাগলেভ’।
কোনও কিছু ছুটছে মানে কোনও বাধা, কোনও প্রতিরোধকে ঠেলে এগচ্ছে। সামনে এগতে গেলেই বাধা কাটাতে হবে। কথাটা জীবনে যতটা সত্যি, ততটাই সত্যি প্রকৃতি, পরিবেশেও।
ম্যাগলেভ কী জিনিস? সহজে বুঝুন ভিডিওয়
সেই ছোটার বাধাটা কোথায়?
কোথায় নয়, বলুন তো! সর্বত্র। যার ওপর পা রেখে ছুটছি, তাতে পা ঘসটাচ্ছে। বিজ্ঞানে এটাকেই বলা হয় ফ্রিকশন বা ঘর্ষণ। মাটিতে পা রেখে ছুটতে গিয়ে পা ঘসটাচ্ছে বলেই আমাদের ছোটার দম, শক্তির কিছুটা ক্ষয় হচ্ছে সেই ঘর্ষণের ফলে। আরও যতটা জোরে ছুটতে পারতাম, মাটির সঙ্গে পায়ের ঘর্ষণের জন্য ঠিক ততটা জোরে ছুটতে পারছি না। ছোটার জোর কমে যাচ্ছে।
রাস্তায় ছুটলে সেই ঘর্ষণের পরিমাণ যতটা হয়, মাটি থেকে ওপরে বাতাসে ভাসলে বা ছুটে বেড়ালে ততটা হয় না। তাই গাড়িঘোড়ার চেয়ে বিমান বেশি জোরে ছুটতে পারে। আর সেই বিমান যত বেশি উচ্চতায় ওঠে, তত বেশি জোরে ছুটতে পারে। কারণ, মাটি থেকে যত ওপরে যাওয়া যায়, বায়ুমণ্ডল তত পাতলা হয়ে যায়। বাতাসের বাধা আরও কমে যায়। বেশি উচ্চতায় বাতাসের বাধা বা ঘর্ষণের পরিমাণ আরও কমে যায় বলে গতি আরও বাড়ানো যায় বিমানের।
ভারতে বুলেট ট্রেন ছুটছে কী ভাবে?
মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর) কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের ভাটনগর পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক প্রতাপ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘ভারতে বুলেট ট্রেন কিন্তু জাপানের মতো ট্র্যাকের ওপর বাতাসে ভেসে থেকে ছুটছে না। এ দেশে বুলেট ট্রেন ছুটছে ট্র্যাক ছুঁয়েই। তাই জাপানের বুলেট ট্রেনের মতো গতিবেগে ভারতে বুলেট ট্রেন ছুটতে পারছে না। ঘণ্টায় প্রায় ৩১০ কিলোমিটার গতিবেগে। জাপানে এখন যা ছোটে ঘণ্টায় ৬২০ কিলোমিটার গতিবেগে।’’
তিন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী। (বাঁ দিক থেকে) প্রতাপ রায়চৌধুরী, অরিন্দম ঘোষ ও প্রভাত মণ্ডল
প্রতাপবাবু জানাচ্ছেন, ভারতে বুলেট ট্রেন চালাতে অ্যারোডায়নামিক্সের একটি নীতির ব্যবহার করা হচ্ছে। বিমানের দু’টি ডানার নীচে থাকা বাতাসের চাপ যে ভাবে বিমানের ওজন আপেক্ষিক ভাবে কমিয়ে তাকে কিছুটা হালকা করে দেয়, সেই একই নীতিতে ভারতে ট্র্যাক ছুঁয়ে চলা বুলেট ট্রেনকে কিছুটা হালকা করে দেওয়া হচ্ছে ওজনে। অ্যারোডায়নামিক্সের নীতিতে বিমানের দুই ডানার নীচে থাকা বাতাসের চাপ যেমন বিমানের ওজনটাকে আপেক্ষিক ভাবে কমিয়ে দেয়, তেমনই বিমানটিকে ঠেলে আরও ওপরে উঠতে সাহায্য করে। ভারতে যে কৌশলে বুলেট ট্রেন চালানো হচ্ছে, তাতে ট্রেনের ওজন আপেক্ষিক ভাবে কমছে ঠিকই, কিন্তু ট্রেনটাকে ট্র্যাক ছেড়ে ওপরে উঠতে সাহায্য করছে না। ফলে, এখানে বুলেট ট্রেন ট্র্যাক ছুঁয়ে চললেও ওজনে হালকা হয়ে যাচ্ছে বলে ঝড়ের গতিবেগে ছুটতে পারছে। যেটা সাধারণ ট্রেনে আদৌ সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয় সাধারণ ট্রেনে?
সাধারণ ট্রেন, তা সে বিদ্যুতেই চলুক বা ডিজেলে, সব সময় ছোটে রেল বা ট্র্যাকের ওপর। ট্রেনের চাকাগুলো রেল বা ট্র্যাক ছুঁয়ে দৌড়য়। ফলে, ট্র্যাকের সঙ্গে সব সময় ঘর্ষণ হয় ট্রেনের চাকার। তাতে শক্তি ক্ষয় হয়। ফলে, একটা উর্ধ্বসীমার পর ট্রেনের গতি আর খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়। তা বাড়াতে গেলে ট্র্যাকের সঙ্গে ট্রেনের চাকার ঘর্ষণ এতটাই বেশি হবে যে, চাকা ও ট্র্যাক দু’টোই অত্যন্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে।
যে নীতিতে চলে ম্যাগলেভ ট্রেন। দেখুন ভিডিও
কিন্তু যদি সেই ট্রেনকে কোনও ভাবে ট্র্যাক থেকে কিছুটা ওপরে তুলে ছোটানো যায়, তা হলে ট্র্যাকের ছোঁয়া ট্রেনের চাকায় লাগছে না বলে ঘর্ষণ অনেকটাই কমে যায়। ফলে, তার গতিবেগও অনেক বেশি বাড়ানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু অভিকর্ষ বলকে উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করে তো আর ট্র্যাক থেকে সাধারণ ট্রেনের চাকাকে ওপরে তুলে রাখা যায় না।
অভিকর্ষ বলকে কী ভাবে উপেক্ষা, অগ্রাহ্য করা সম্ভব হতে পারে?
সেটা তখনই সম্ভব হতে পারে যদি ট্র্যাক আর ট্রেনের কামরার মধ্যে এমন কোনও বল বা শক্তি থাকে যা চাকাকে ট্র্যাক থেকে কিছুটা ওপরে তুলে রাখবে। ট্র্যাকের ওপর বাতাসে ভাসিয়ে রাখবে। আর সেটা করতে হলে সেই বলটাকে এমন শক্তিশালী হতে হবে, যা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে উপেক্ষা করতে পারবে। ফলে, তখন ট্র্যাক না ছুঁয়ে ট্রেনের চাকা বাতাসে ভেসে থাকতে পারবে। ট্র্যাক আর ট্রেনের চাকার মধ্যে সামান্য হলেও কিছুটা ফাঁক থাকবে। এটা সাধারণ ট্রেনে করতে গেলে ট্রেনটাই লাইনচ্যূত হয়ে যাবে।
সল্টলেকের সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের (এসআইএনপি) কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের অধ্যাপক প্রভাত মণ্ডল বলছেন, ‘‘বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রে এই কাজটা করা হয় চুম্বক দিয়ে। সেখানে চৌম্বক বল বা শক্তিই অভিকর্ষ বলকে অকেজো, দুর্বল করে দেয়। তাই বুলেট ট্রেনের চাকা ট্র্যাক ছোঁয় না।’’
বুলেট ট্রেনের কামরার ভিতরের তড়িৎ-চুম্বক
ট্র্যাক আর বুলেট ট্রেনের চাকার মধ্যে কিছুটা ফাঁক থাকে সব সময়েই। বুলেট ট্রেন যে পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়, তা হালকা হয় বলে বাতাসে তাকে ভাসিয়ে রাখার কাজটাও সহজ হয়।
প্রভাতবাবু জানাচ্ছেন, অকেজো, দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলেই অভিকর্ষ বল আর বুলেট ট্রেনের চাকাকে টেনে নামিয়ে ট্র্যাক ছোঁয়াতে পারছে না। ট্র্যাক আর ট্রেনের কামরার ভিতরে এমন ভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে, যা অভিকর্ষ বলকে অকেজো করে দিয়েছে।
বুলেট ট্রেনের ভিতরে আর ট্র্যাকে চুম্বকগুলি কী ভাবে সাজানো থাকে?
আমরা জানি, চুম্বকের দু’টি মেরু বা পোল থাকে। নর্থ (উত্তর) আর সাউথ (দক্ষিণ) পোল (মেরু)। এও জানি, এক ধরনের মেরু একে অন্যকে (নর্থ পোল নর্থ পোলকে বা সাউথ পোল সাউথ পোলকে দূরে সরায়) দূরে সরিয়ে দেয়। এটাকে বলে ‘ম্যাগনেটিক রিপালসন’ বা চুম্বকীয় বিকর্ষণ। আবার বিপরীত মেরু (নর্থ পোল সাউথ পোলকে বা উল্টোটা) একে অন্যকে কাছে টানে। আকর্ষণ করে। এটাকে বলে ‘ম্যাগনেটিক অ্যাট্রাকশন’ বা চুম্বকীয় আকর্ষণ।
বুলেট ট্রেনের ট্র্যাক আর কামরার ভিতরে যে ভাবে সাজানো থাকে চুম্বকগুলি
বুলেট ট্রেন যে কৌশলে চলে, সেই ম্যাগনেটিক লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ প্রযুক্তির ভিতটা হল ম্যাগনেটিক রিপালসন।
প্রতাপবাবু ও প্রভাতবাবু জানাচ্ছেন, বুলেট ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কামরায় যে তড়িৎ-চুম্বকটি (ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট) থাকে তার মেরু আর ট্র্যাকে যে চুম্বক রয়েছে, তার প্রত্যেকটি অংশের মেরুগুলি বিপরীত হয়। আর থাকে একে অন্যের ঠিক উল্টো দিকে। চুম্বকগুলি ওই ভাবে সাজানো থাকে বলেই ট্রেনটাকে ট্র্যাক তার দিকে টেনে রাখে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখে। মানে, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা বুলেট ট্রেনের কামরার তড়িৎ-চুম্বকের যে অংশে নর্থ পোল থাকে, সেই কামরার ঠিক নীচে থাকা ট্র্যাকের সেই অংশে রাখা থাকবে সাউথ পোল। এই ভাবে বুলেট ট্রেনের কামরার ভিতরে থাকা তড়িৎ-চুম্বক আর ট্র্যাকের চুম্বকগুলির নর্থ আর সাউথ পোলগুলিকে পর পর সাজিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু শুধু প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখলেই তো হবে না। বুলেট ট্রেনটাকে ছোটাতে হবে। তার জন্য ট্রেনের কামরার ভিতরে যে অত্যন্ত শক্তিশালী তড়িৎ-চুম্বক বা ইলেকট্রো ম্যাগনেট রাখা আছে, তার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠালেই তা কামরার ভিতরের তড়িৎ-চুম্বকের মেরুগুলিকে বদলে দিতে শুরু করবে। উত্তরটাকে দক্ষিণ মেরুকে বদলে দেবে। পাশে থাকা দক্ষিণ মেরুটাকে বদলে দেবে উত্তরে। সেটা যত তাড়াতাড়ি বদলাবে, তত জোরে ছুটতে পারবে বুলেট ট্রেন। তবে ট্র্যাকের চুম্বকের মেরুগুলি কিন্তু বদলাবে না।
ম্যাগলেভ ট্রেন চলে কী ভাবে? দেখুন অ্যানিমেশন
প্রভাতবাবু ও প্রতাপবাবু জানাচ্ছেন, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো অবস্থায় কামরার ভিতরের চুম্বকের নর্থ পোলের ঠিক উল্টো দিকে ছিল ট্র্যাকের সাউথ পোল। ফলে, একে অন্যকে টেনে রেখেছিল। ধরে রেখেছিল। এ বার বিদ্যুৎ পাঠানোর পর ট্র্যাকের চুম্বকের সাউথ পোলের ঠিক উল্টো দিকে কামরার ভিতরে চুম্বকের যে নর্থ পোলটা ছিল, তা বদলে গিয়ে সাউথ পোল হয়ে যাবে। ফলে, ট্র্যাকের চুম্বকের ওই অংশের মেরু উল্টো দিকে থাকা কামরার চুম্বকের ওই অংশের সম মেরুকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে। ফলে, ট্রেন আর থেমে থাকতে পারবে না। প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে এগতে শুরু করবে। যত তাড়াতাড়ি ট্রেনের কামরার চুম্বকের মেরুগুলিকে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে বদলে ফেলা যাবে, তত তাড়াতাড়ি বুলেট গতিতে ছুটতে শুরু করবে ট্রেন।
প্রতাপবাবুর কথায়, ‘‘কামরার ভিতরের তড়িৎ-চুম্বকের মেরুগুলি ঠিক সেই একই দূরত্বে থাকবে, যে দূরত্বে রয়েছে ট্র্যাকের চুম্বকের মেরুগুলি। আর চাকা ও ট্র্যাকে সেই পোলগুলি যত দ্রুত বদলাবে, ততই গতি বাড়বে বুলেট ট্রেনের।’’
শুধুই চুম্বক নয়, বুলেট ট্রেনকে ছোটানো যায় অন্য ভাবেও। সেটা কী রকম?
ট্র্যাক আর কামরা- দু’টোতেই চুম্বক না রেখে কোনও একটিতে চুম্বক আর অন্যটিতে সুপার কন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহী কোনও পদার্থ ব্যবহার করেও বুলেট ট্রেন চালানো যায়।
যে কোনও পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল করলে সেই বিদ্যুৎকে বিভিন্ন পদার্থে বিভিন্ন রকমের বাধা বা রেজিস্ট্যান্স পেতে হয়। যে সব পদার্থে সেই বাধা কম, তারা পরিবাহী (কন্ডাক্টর)। যে সব পদার্থে সেই বাধা খুব বেশি, তারা অপরিবাহী (নন-কন্ডাক্টর)। আর যে সব পদার্থে সেই বাধা প্রায় নেই বললেই চলে তারা অতিপরিবাহী বা সুপার কন্ডাক্টর। ১৯১১ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্যামেরলিন ওন্স এই সুপার কন্ডাকটার আবিষ্কার করেন। তিনি দেখেছিলেন খুব কম তাপমাত্রায় (৪.২ থেকে ৫ ডিগ্রি কেলভিন) সিসা, টিন, ইন্ডিয়াম ও নায়োবিয়ামের মতো পদার্থগুলি হয়ে ওঠে সুপার কন্ডাক্টর। পরে ১৯৩৩ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ালথার মেইসনার ও রবার্ট ওশেনফেল্ড দেখিয়েছিলেন, কোনও চুম্বককে সেই সুপার কন্ডাক্টরের কাছে আনলে তা একে অন্যকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। মানে, দু’টি চুম্বকের সম মেরু যা করে। এটাকে সুপার কন্ডাক্টরের ‘মেইসনার-ওশেনফেল্ড এফেক্ট’ বলা হয়।
চুম্বকের বদলে সুপার কন্ডাক্টর ব্যবহারের অসুবিধাটা কোথায়?
প্রতাপবাবু বলছেন, ‘‘কামরার মধ্যে তড়িৎ-চুম্বকের বদলে সুপার কন্ডাক্টর আর ট্র্যাকে চুম্বক রেখে, এই মেইসনার-ওশেনফেল্ড এফেক্টকে কাজে লাগিয়েই এখন পরীক্ষামূলক ভাবে বুলেট ট্রেন চালানো হচ্ছে জাপানে। খুব সামান্য দূরত্বে। বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়নি অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ বলে।’’
শুধুই কম তাপমাত্রায় নয়, উচ্চ তাপমাত্রাতেও যে কোনও কোনও পদার্থ সুপার কন্ডাক্টরের মতো আচারণ করে, তা প্রথম জানা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সেই তাপমাত্রাটা ছিল ৩৬ ডিগ্রি কেলভিন। এখন দেখা গিয়েছে ১০০ ডিগ্রি কেলভিনের মতো উচ্চ তাপমাত্রাতেও ল্যান্থানাম, বেরিয়াম, কপার ও অক্সিজেনের একটি জটিল যৌগও সুপার কন্ডাক্টর হয়ে ওঠে। বুলেট ট্রেন চালাতে দু’টি চুম্বক ব্যবহার না করে একটি চুম্বক আরেকটি উচ্চ তাপমাত্রার সুপার কন্ডাক্টরও ব্যবহার করা যেতে পারে।
জাপানে ম্যাগলেভ ট্রেনের ইতিহাস। দেখুন ভিডিও
প্রভাতবাবু ও প্রতাপবাবুর কথায়, ‘‘কম তাপমাত্রার সুপার কন্ডাক্টরের চেয়ে উচ্চ তাপমাত্রার সুপার কন্ডাক্টর দিয়ে বুলেট ট্রেন চালানোটা আরও ব্যয়সাপেক্ষ।’’
তবে উচ্চ তাপমাত্রার সুপার কন্ডাক্টর নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে ভারতেই
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস (আইআইএসসি)-এর কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের ভাটনগর পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক অরিন্দম ঘোষ বলছেন, ‘‘উচ্চ তাপমাত্রার সুপার কন্ডাক্টর নিয়ে কিন্তু পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে ভারতেই। দিল্লির ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে (এনপিএল)। এ দেশে আগামী দিনে অন্য রুটে বুলেট ট্রেন চালাতে এই কম খরচে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় কি না, তা পরখ করে দেখা যেতে পারে। তবে ভারতে বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রার তারতম্য একটা বড় ফ্যাক্টর। বুলেট ট্রেন চালানোর প্রযুক্তিকে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার গবেষণাটাও তাই খুব জরুরি।’’
চালানো যায় হাইপারলুপ পদ্ধতিতেও। তবে খরচ, ঝুঁকি অনেক বেশি
অরিন্দমবাবু জানাচ্ছেন, বুলেট ট্রেনের গতিবেগ বাড়িয়ে ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত করা সম্ভব যদি সেই ট্রেনটাকে তার গোটা পথটাতে একটা ভ্যাকুয়্যাম টিউবের মধ্যে রেখে ছোটানো যায়। এটাকে বলে হাইপারলুপ পদ্ধতি। তাতে অবশ্য প্রচুর খরচ। গোটা পথটাকে বাতাসহীন ভ্যাকুয়াম অবস্থায় রাখাটা একটু সমস্যারই। টিউব সামান্য ফুটো হয়ে গেলেই প্রচুর বাতাস ঢুকে গোটা ট্রেনটাকে পুড়িয়ে দেবে।’’
প্রতাপবাবুর কথায়, ‘‘মানসিক সমস্যাও হতে পারে। দীর্ঘ পথে বাতাসহীন, জানলাহীন অবস্থায় থাকতে অনেক যাত্রীরই মানসিক অসুবিধা হতে পারে। যে জন্য এমআরআই মেশিনে পরীক্ষা করাতে অনেকেই ভয় পান।’’
lipitor 80mg cost atorvastatin 10mg usa generic atorvastatin 40mg
atorvastatin 10mg us buy atorvastatin 20mg pills lipitor 10mg cost
ciprofloxacin 1000mg sale – baycip cost buy augmentin 1000mg online
buy cheap cipro – buy ethambutol pills buy augmentin 625mg generic
zidovudine 300 mg generic – buy generic biaxsig for sale order allopurinol 300mg online cheap
buy retrovir 300mg pills – zyloprim online buy order zyloprim 100mg generic
clozapine 50mg us – famotidine for sale online cost famotidine 20mg
buy generic clozaril 50mg – frumil cheap purchase pepcid sale