আমরা অনেকেই কথায় ‘জমিদারের পুত’ শব্দটা ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করি। জমিদারি সংক্রান্ত অনেক গল্প ও কৌতুক আমাদের জানা থাকলেও আজ বলি বাংলার জমিদারদের সিন্দুক ও হাতিডাক্তারের গল্প।
আগে একটু বলে নেই ১৭৯৩ সালে জমিদারদের সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পাদনে তাদের পদমর্যাদা ও ভূমিকা বেশ ভিন্ন রকম হয়ে ওঠে।জমিদার, তালুকদার সহ যারা ভূমির দখলিস্বত্ব ভোগ করছিলেন তাদের সকলকেই ঐসব ভূমির মালিক ঘোষনা করা হয়। জমিদাররা সম্পত্তির মালিক বনে যান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এসব অধিকার ও সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের খাজানায় নিয়মিত রাজস্ব ভরতে হতো।অন্যথায় ছিল জমিদারি নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা। অধিকাংশ জমিদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও দু’চার জনের নির্মম দমনে তাদের ভীতির সঙ্গে এই বিষ ট্যাবলেট গলধঃকরন ছাড়া আর উপায় ছিল না। এর ওপর মরার উপর খরার ঘাঁ হল সূর্যাস্ত আইন। মানে শর্ত ছিল রাষ্টীয় রাজস্ব বারোটি কিস্তিতে জেলা কালেক্টরেটে পরিশোধ করতে হবে। কোন জমিদারের প্রদেয় কিস্তি বকেয়া পড়লেই পরবর্তী মাসে ডিস্টিক্ট কালেক্টর সাহেব তালুকে এসে হাজির হতেন। বকেয়া কিস্তির সমমূল্যের জমি বিক্রি করে সেই টাকা উসুল করে তবেই বাড়ীর পথ ধরতেন।
এই অবস্হায় জমিদারদের আর কি বা করার ছিল? তাই কৃষিখাত ও বর্গাচাষীতে উচ্চহারে খাজনা আরোপের মধ্য দিয়ে প্রজাকুলে তা আদায়ে চালাতেন ষ্টিমরোলার। বিলাসী জীবন ও নিলামের ভয়ে তাদের খাজনা আদায় করে খাজাঞ্জি সিন্দুক পরিপূর্ণ রাখতে হত নগদ লক্ষ্মী দিয়ে। প্রজারা ছিল সর্ষের দানার মত। যত চিপবে ততই তেল বেরবে। নায়েবমশাই আর গোমস্তাদের কাচারিঘরের যেখানে সিন্দুকটা থাকত তার পেছনেই থাকত ছোট একটা ঘর। ঘরটাকে বলা হয় রগডানির ঘর। কৃপন প্রজারা যারা জমিদার মশাইয়ের সেবায় টাকা পয়সা ছাড়ের ব্যাপারে নয়-ছয় খেলতেন, তাদের জন্য ওই ঘর। বেশী কিছু না,ঘরে নিয়ে সামান্য একটু বুকে বাঁশডলা। একে বলা হত বাটনা-বাটা। আরেকটা দাওয়াই ছিল নাম কিচন বধ। দুজনে দু’পা ধরে দুপাশে ফেঁড়ে ফেলার চেষ্টা করত। বলা যায়, রোগীর সঙ্গে রোগীর মতই ব্যবহার। দাঁড় করে বা বসিয়ে রেখে কষ্ট দেয়া হত না। মেঝেতে সুন্দর করে শুইয়ে চিকিৎসা দেয়া হত। পানির তেষ্টায় কাহিল হলে পানিও দেয়া হত। জমিদারদের যত সব নিষ্ঠুরতার কথা সাতকাহন করে বলা হোক না কেন, তাদের দয়ালুতার কথা বলা হয় কই! সেকালে পুলিশ লকআপে চরিত্র সংশোধনের সময় পানি দেবার কোন রেওয়াজ ছিল না। পানি ছাড়াই অনেকটা রোগীকে ক্যাপসুল গেলানোর মতো।
জমিদারদের কাচারি ঘরগুলোতে নায়েব মশাই পাটি পাতা উঁচু চৌকির ওপর তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে থাকতেন। বেশীরভাগের পরনে ধুতি আর বেনিয়ান। সেটা বেশ মজার জামা। অনেকটা ফতুয়ার মতোই। পাশে ফিতে বাঁধা। যেন একটা ফাইল কভার। সামনে একটা ডেস্ক। তাতে দোয়াত-কলম, খেরোখাতা, টিপসই দেয়ার কালি। মাথার ওপর ঝুলত টানা পাখা। যার দড়িটা চলে গেছে বাইরের বারান্দায়। সেখানে দেখবেন দরজার পাশে জড়সড় হয়ে বসে একজন ক্রমান্বয়ে দড়ি টেনে চলেছে। ঝালর লাগানো পাখার বাতাস একমাত্র নায়েবমশাই আর গোমস্তাদের গায়েই লাগবে। খাজাঞ্জিরা এদের বলতেন ‘পাখারদার’ আর সাহেবরা বলতেন ‘পাংখা পুলার’। কাজটা এতই একঘেয়ে যে পাখারদাররা এক গুলি আফিম খেয়ে পাখা টানতে বসত। তা না হলে পারা যেত না। ঘোর লেগে যেত। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়লে হাত বন্ধ। সাথে পাখাও বন্ধ। তখন নায়েবমশাই ভরাট গলায় গর্জে উঠতেন -‘ইয়াও উল্লুক’। অমনি পাখা আবার জোরে জোরে চালু। বলা হত নায়েবমশাইদের বিচারে মানুষের জাত ছিল দুটো- হুজুরের জাত আর উল্লুকের জাত।
দেখুন, সিন্দুকের কথা বলতে গিয়ে জমিদারি নির্যাতনের কথা বলে চলেছি,হুম কি আর করা। যাক, এবার জমিদারের সিন্দুকের কথা বলি।জমিদারি মানেই সিন্দুক। সিন্দুক দেখেই সেসময় বোঝা যেত জমিদার বড় কি ছোট। বিলেতি তালা চাবি খুলে হাতলটা পড্ পড্ করে পনের বার ঘোরালেই তবেই কেল্লা ফতে। মানে দরজা খুলত। ভিতরটা একেবারে সলিড লোহার সব খুপরি। কি রাখবেন? রাখুন না, হীরে, জহরত, মোহর, থরে থরে নোট। তিন চার মন কয়েন রাখুন। দলিলপত্র সাজিয়ে রাখার সব আলাদা ব্যবস্থা। খাজাঞ্জিখানার চেহারা হতো গুদামঘরের মতো। ছোট ছোট পাতলা ইট দিয়ে বাড়ী তৈরী হতো সেকালে। মোটা মোটা সব দেয়াল। এত মোটা যে দেয়ালের মধ্যে জ্যান্ত মানুষ ঢুকিয়ে দেয়াল আবার গেঁথে প্লাস্টার করে দিলে বুঝতেই পারবেন না ভিতরে একটা মানুষ আছে, আর ধীরে ধীরে পরিনত হচ্ছে কংকালে! সেই দেয়ালে হয়তো মা কালির ছবি, নয়তো কোন সাহেব শিল্পীর আঁকা পুরনো ছবি ঝুলছে। খাজাঞ্জির কোন জানালা থাকত না। দেয়াল ঘেঁসে খুব লম্বা লম্বা চৌকি। প্রজার এসে দলবেঁধে পাশাপাশি বসতো। ইট,সিমেন্ট আর সুরকি বালি দিয়ে বেদি তৈরী করে সিন্দুকটাকে এমনভাবে বসানো হতো, যে হাজারটা লোক শত চেষ্টা করেও সিন্দুকটা সরাতে পারত না।
এইসব সিন্দুকে থাকত ইয়া বড় এক হাতল। এক এক জমিদারের হাতলে এক এক রকমের মুখ ঢালাই করা থাকত। হাতলে কিসের মুখ ঢালাই করা হবে তা সিন্দুক অর্ডার করার সময় বলে দিতেন তারা। সিংহ, বাঘ, মকর, সাপ, কুকুর, ভৈরবী, মা কালী, শিব, দূর্গা যার যা পছন্দ। বিলেতি চার্বস কোম্পানি এই সব সিন্দুক তৈরীতে ছিল সিদ্ধহস্ত। সাহেবি কোম্পানি হলে কি হবে, যা ছবি সাপ্লাই করা হতো সব ঢালাই করে দিত সুন্দর করে। এক একটা সিন্দুক একেবারে মাপমতো লোহা গলিয়ে ছাঁচে ফেলে তবেই ঢালাই হতো। বিশাল হাতির পিঠে চাপিয়ে এইসব সিন্দুক আনা হত। হাতির চেয়েও সিন্দুক ভারী। হাতির সঙ্গে আসত চার্বস কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার,মিস্ত্রি, কুলি আর ডাক্তার। ওজনের কারনে হাতির চারটে পা নাকি থরথর করে কাঁপতো। এক মাইল যাবার পরই চারজন লোক হাতির চার’টা পায়ে রসুন তেল মালিশ করতে হতো। তা না করলে হাতি যে এক পা-ও হাঁটবে না। ইঞ্জিনিয়ার আর ডাক্তার দুজনই হতেন লালমুখো সাহেব। মুখে বড় বড় চুরুট। রেলের ইঞ্জিনের মতো ভসভস ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আর পিডিং পিডিং ইংরেজী বলতে বলতে যেন চলছেন। এখন যেমন রাস্তায় চিত্র তারকাদের দেখলে ভিড় লেগে যায়, ঠিক তেমনি সেই সময় জমিদার বাড়ীর সিন্দুক দেখার জন্য ভিড় জমে যেত। কেউ গাছের ডালে কেউবা বাড়ীর চালে। হুলস্থূল এক এলাহি কান্ড! হাতির পিঠ থেকে কপিকলে করে সিন্দুক নামিয়ে পঞ্চাশ জন লোক গলদঘর্ম হয়ে খাজাঞ্জিখানায় এনে সেট করে দিয়ে যেত। আনার সময় তিন-চার জন যে আহত হতো এমন নয়। কেউ এক মাস বিছানায় তো কেউ চিরকালের মত পঙ্গু হয়ে যেত। যারা পঙ্গু হয়ে যেত বিলাতি কোম্পানি তাদের সারাজীবন পাঁচ সিক্কা হারে ভাতা দিতেন।
দেখুন তো! সাহেব ডাক্তারের কথা তো বলাই হলো না। সাহেব ডাক্তারের কাজ ছিল মাইলের পর মাইল হাতির তেল সেবার সময় স্টেটেসকোপ দিয়ে হাতির হার্ট পরীক্ষা করা। জানেন তো, হাতির হৃদয় কিন্তু বিশাল বড়। গোটা বুকটাই হৃদয়। এই পরীক্ষায় একটা কায়দা ছিল। এই স্টেটেসকোপ হতো বিশাল। কানে দেবার নল দুটো বিশ তিরিশ ফুট লম্বা। আর বুকে লাগাবার চাকতিটা ঠিক গামলার মতো। তেমনি তার ওজন। হাতির তলায় ঝোলায় বেঁধে একজন কুলিকে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। ব্যাটা মোটর মেকানিকের মতো পেটের তলায় চিত হয়ে ঝুলে ঝুলে চাকতিটা বুকে ঠেকাত। আর সাহেব ডাক্তার বিশ ফুট দূরে টুলে বসে কানে নল লাগিয়ে হৃদয়ের শব্দ শুনতেন। উনাকে দেখলে মনে হতে পারে সাহেব যেন জাহাজ চালাছেন। থেকে থেকে বলছেন, “থার্টি ডিগ্রি নর্থ,,ফিফটি ডিগ্রি সাউথ “। প্রায় এক ঘন্টা লেগে যেত হাতি হার্ট পরীক্ষা করতে। হার্টের শব্দও কিন্তু সেরকম। যেন তালে তালে ঢাক বাজছে। সাহেব ডাক্তার হার্ট পরিক্ষার পর ঝাড়া আধ ঘন্টা আর কোন কথা শুনতে পেতেন না।একেবারে কালা। একবার তো জমিদারের সিন্দুক আনার সময় হাতির হার্টের শব্দে এক ডাক্তারই হার্টফেল করলেন। একেবারে নতুন ডাক্তার। সবে দেশ থেকে এসেছেন। বড়জোর দু’একটা কুকুর টুকুরের হার্ট দেখার হাতেখড়ি। হাতির হার্ট সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। গর্দভটা আচমকাই দুম করে কানের ভিতর দিয়ে ঝেড়ে দিয়েছিল তোপ। যতটা দূরে বসা উচিত ছিল ততটা দূরেও বসেনি। দেখলেন তো, সাহেবরাও কত বোকা হয়?
buy lipitor 80mg pill cheap lipitor 80mg atorvastatin 10mg generic
order lipitor 20mg generic order atorvastatin 10mg generic buy atorvastatin 20mg without prescription
cipro 1000mg canada – buy cheap septra buy amoxiclav pills
glucophage 1000mg brand – buy glycomet generic order lincocin generic
purchase glucophage pills – buy bactrim 480mg generic buy generic lincomycin 500 mg
retrovir pills – allopurinol 100mg usa
buy zidovudine 300mg pills – cost glycomet 500mg order zyloprim 300mg online cheap
clozaril price – frumil brand pepcid 40mg drug
clozaril order – famotidine 40mg pills pepcid online buy