দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতু

5
352

পদ্মা নদীতে জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে। আর এতে প্রথমবারের দৃশ্যমান হলো বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু।

শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মাসেতুর দৃশ্যমান কাজের উদ্বোধন করেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন- সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য শাগুফতা এমিলিসহ অন্যরা।

এ সময় সাংবাদিকদের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে স্বপ্নের এই সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে।

তিনি জানান, স্প্যান স্থাপনের কাজ উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতিসংঘের অধিবেশনের কাজে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে আজকের এই কাজের অগ্রগতি উদযাপন করবেন।

আগের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৮ সালে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে কিনা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যথাসময়ে কাজ শেষ করতে আমরা আশাবাদী।

এদিকে, ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাজও শেষের পথে। এরই মধ্যে একটি স্প্যান মাওয়া থেকে পিলারের কাছে নেওয়া হয়েছে। এই দুই পিলারের ওপর খুব শিগগিরই স্প্যান বসানো হবে বলে আশা করছ্নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।

মোট ৪২টি পিলারের ওপর নির্মিত হবে পদ্মা সেতু। এর মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হবে নদীর বুকে। দুই প্রান্ত দুটি পিলার নির্মাণ করা হবে নদী তীরে। একটি পিলার থেকে আরেকটির দুরত্ব ১৫০ মিটার। নদীর বুকে যে পিলারগুলো বসবে, তার প্রতিটির জন্য ছয়টি করে পাইলিং করতে হবে। পাইলের গভীরতা হবে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার। মোট ২৪০টি পাইলের মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে; নির্মাণকাজ চলছে ১১৪টির। ১০৮টির কাজ এখনও শুরু হয়নি।

২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিরপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় আট বছর থমকে ছিল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনায় গতি আসে। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করায় পদ্মা সেতু প্রকল্প অনিশ্চয়তায় পড়ে। পরের বছর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঠিকাদার নিয়োগে চুক্তি হয়।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ করছে চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন। নদীশাসনের কাজ করছে আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে মাওয়া ও জাজিরায় নদী তীরে নির্মিত হচ্ছে ১২ কিলোমিটার বাঁধ।

সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক দশমিক ৪৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (ঝুলন্ত পথ) থাকবে। জাজিরা প্রান্তে ঝুলন্ত পথ থাকবে এক দশমিক ৬৭ কিলোমিটর। ভায়াডাক্ট সেতুকে যুক্ত করবে সংযোগ সড়কের সঙ্গে। পদ্মা সেতুর উচ্চতা হবে ১৩ দশমিক ৬ মিটার বা প্রায় ৪৪ ফুট। নীচতলায় (লোয়ার ডেক) চলবে ট্রেন। দ্বিতীয় তলায় (আপার ডেক) গাড়ি চলাচলের জন্য থাকবে চার লেনের সড়ক।

5 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here