এ জন্যই তিনি মাশরাফি

10
375

বাংলাদেশ জাতীয় দলে কয়েকজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার আছেন। তবে অধিনায়ক একজনই। তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। কেবল সাফল্য নয়; ব্যবহার, সৌহার্দ্য ও সবার সঙ্গে মিলে থাকার অসাধারণ গুণের কারণে জনগণের অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। মানুষকে আপন করে নেওয়ার বিশেষ গুণটির কারণেই তিনি সবার অধিনায়ক। কথাটা আরেকবার প্রমাণ করলেন ম্যাশ। বুধবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্স ও চিটাগং ভাইকিংসের মধ্যকার ম্যাচে বোলার শুভাশীষ রায়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অপরাধ শুভাশীষ করলেও এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চান মাশরাফিই। কেবল সেটাই নয়, ক্রিকেটভক্তদের প্রতি তরুণ শুভাশীষের অনিচ্ছাকৃত দোষকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধও করেন তিনি। সাধেই কি আর তাঁকে অধিনায়কদের অধিনায়ক বলা হয়!

ভাইকিংসের বিপক্ষে রংপুরের ইনিংসের সেটা ছিল ১৭তম ওভার। শুভাশীষের বলের বিপক্ষে ব্যাটিং করছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। চতুর্থ বলটা ইয়র্কার করেছিলেন শুভাশীষ। বলটা ঠেকিয়ে দেন ম্যাশ। এরপর নিজের বলে নিজেই ফিল্ডিং করে বল থ্রো করতে উদ্যত হন শুভাশীষ। তবে শেষ পর্যন্ত থ্রো করেননি তিনি। তবে শুভাশীষের আচরণটা ভালো লাগেনি মাশরাফির। তিনি বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন এতে। মুখ দিয়ে কিছু একটা বলেন রংপুরের অধিনায়ক।

মাশরাফির ক্রিয়ায় বেশ বাজে প্রতিক্রিয়া দেখান শুভাশীষ। তেড়ে যান জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দিকে। এ সময় বেশ উত্তেজিত ছিলেন এই বোলার। মাশরাফি অবশ্য শুভাশীষের আচরণে বেশ অবাক হন। পরে আম্পায়ার ও সতীর্থদের হস্তক্ষেপে শান্ত হন দুজন।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মাশরাফিভক্তরা। শুভাশীষকে গালাগাল করতে থাকেন তাঁরা। শুভাশীষের প্রতি দর্শকদের এমন বিরূপ মনোভাব মেনে নিতে পারেননি মাশরাফি। কারণ, কেবলই নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এই পেসার। ভক্ত-সমর্থকদের পাশে না পেলে মাঠে পারফর্ম করা মুশকিল, বিষয়টা মাশরাফির চেয়ে ভালো কেউ বোঝেন না।

ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দোষটা নিজের ঘাড়েই নেন মাশরাফি। বলেছেনও, ‘তেমন সিরিয়াস কিছু নয়। একটা ম্যাচে এ রকম কিছু হতেই পারে। তবে এর জন্য আমারই সরি বলা উচিত। ওর জায়গা থেকে হয়তো ঠিকই আছে। আমার আরেকটু মাথা ঠান্ডা রাখলে ভালো হতো। তবে জানি না ওর কী করা উচিত ছিল।’

এটুকু করেই ক্ষান্ত হননি জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। রাতে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় শুভাশীষের প্রতি বিরূপ আচরণ না করার অনুরোধ জানান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। শুভাশীষও বাংলাদেশের হয়ে খেলে। তারও ভালোবাসা প্রাপ্য। মাঠে যেটা হয়েছে, সে কারণে আমি দুঃখিত। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে আমার অমন প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি। শুরুটা আমার কাছ থেকেই হয়েছে। বলটা হয়তো সে থ্রো করতে চেয়েছিল। আমি যদি প্রতিক্রিয়া ওভাবে না করতাম, হয়তো বা ও চলে যেত। আমার জায়গা থেকে আমি দুঃখিত। আশা করি, আপনারা বুঝতে পারছেন। তখন দুই দলের জেতার সম্ভাবনা ছিল। একটাই অনুরোধ, এটা নিয়ে আর বেশি বাড়াবাড়ি না করে এখানেই শেষ হোক। মাঠে যা হয়, বাইরে এসে ভুলে যাই। সে আমার সতীর্থ, ছোট ভাই। অবশ্যই আমরা এটা মনে রাখব না। আপনারা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাবে।’

তবে সিনিয়র সতীর্থের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে মোটেও ভালো ছিলেন না শুভাশীষ। ম্যাচ শেষে মাশরাফির সঙ্গে দেখা করতে ছুটে যান তিনি। ক্ষমাও চেয়ে নেন। মাশরাফিও তাঁকে ক্ষমা করেন। তাসকিন আহমেদের উপস্থাপনায় এক ফেসবুক ভিডিওবার্তায় একই সঙ্গে ছিলেন মাশরাফি ও শুভাশীষ। মাশরাফি বলেন, ‘আমি আর ও (শুভাশীষ) পুরোপুরি ঠিক আছি। সবাই ভালো থাকেন, শান্তিতে থাকেন, আশা করি ইনশাআল্লাহ সামনে আবার দেখা হবে।’

10 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here