‘হুমায়ূন আহমেদ বাঙালি জাতির হৃদয়ে জায়গা করে আছেন’

8
541

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল সোমবার। এ উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে বিকেল ৩টায় ‘হুমায়ূনমেলা’র আয়োজন করা হয়।

মেলার উদ্বোধন করেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন, নাট্যজন সৈয়দ হাসান ইমাম, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, এসিআই সল্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, বাংলা প্রকাশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নুহাশ হুমায়ূনের কাছে জানতে চাওয়া হিমু সেজে যখন অনেকে নুহাশপল্লীতে যান তখন তাঁর কেমন লাগে। উত্তরে নুহাশ বলেন, ‘খুব ভালো লাগে। আমি আজকের আয়োজন দেখেও খুব অভিভূত।’

অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন, বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা কনা রেজা, শিল্পী ফেরদৌসী আরা, সময় প্রকাশের ফরিদ আহমেদ প্রমুখ।

ইমাদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আজকের দিনটা যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনার কারণ হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মধ্যে শারীরিকভাবে নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘লেখক ও সৃষ্টিশীল মানুষ সম্পর্কে আমার ধারণাটি হচ্ছে এ রকম, হয়তো মানুষটি শারীরিকভাবে থাকেন না; কিন্তু তিনি থেকে যান তাঁর কর্মে। সেভাবে হুমায়ূন আহমেদ বাঙালি জাতির হৃদয়ে জায়গা করে আছেন। আমি যেটা মনে করি, হুমায়ূন আহমেদ বহু ধরনের লেখা লিখেছেন। আমি ইদানীং খুব অবাক হয়ে লক্ষ করি একশ্রেণির পাঠক বা যাঁদের আমরা সাহিত্যের অভিভাবক মনে করি, তাঁদের মধ্যে কিছু কিছু মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে শুধু হিমু, মিসির আলী, শুভ্র কিংবা রুপার স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করেন। এই জায়গাটিতে কিছুটা আমার আপত্তি আছে। হ্যাঁ, হুমায়ূন আহমেদ হিমু, মিসির আলী, শুভ্র ও রুপা চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু এর পাশাপাশি যে অবিস্মরণীয় কাজগুলো তিনি করে গেছেন, আমি হুমায়ূনভ্ক্ত-পাঠকদের বলব তাঁরা যেন তাঁর সেই লেখাগুলো পড়েন।’

কথাসাহিত্যিক মিলন আরো বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। প্রায় প্রতিটা সন্ধ্যা আমরা একসঙ্গে কাটাতাম। একবার তিনি মধ্যাহ্ন উপন্যাস লেখার সময় আমাকে বলেছিলেন যে, এই উপন্যাসটি লিখতে লিখতে আমার অনেক কিছু ভাবতে হয়। লেখাটি নিয়ে আমার মাথাটি জ্যাম হয়ে আছে। আমি এখন একটি হিমুর গল্প লিখব। তাঁর অর্থটা হচ্ছে, যখন তিনি সাহিত্যের কঠিন সৃষ্টিশীলতা সৃষ্টি করতেন এবং ক্লান্ত হয়ে যেতেন, তখন তিনি মাঝে মাঝে হিমু, শুভ্র, রুপা বা মিসির আলী এই চরিত্রগুলোকে নিয়ে লিখতেন। এক ধরনর মানসিক তাৎক্ষণিক আনন্দের জন্য। যাঁরা হুমায়ূন আহমেদের পাঠক, যাঁরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন, তাঁদের আমি অনুরোধ করব, হুমায়ূন আহমেদ যে লেখাগুলোকে তিনি খুব ভালো মনে করতেন, যেমন—‘মধ্যাহ্ন’ বা ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘উতল হাওয়া’, ‘লীলাবতী’। প্রিয় পাঠক, আপনারা তাঁর এই লেখাগুলোর প্রতি মনোযোগী হবেন। তিনি তাঁর এই কাজগুলোকে শ্রেষ্ঠ কাজ মনে করতেন। এগুলো তাঁর মহৎ সৃষ্টি। হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতির প্রতি আবারও আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।”
অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী সেলিম চৌধুরী হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে একটি গান পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে হুমায়ূন আহমেদ এখনো আছেন। তাঁর জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা।’

শিশু সংগীতশিল্পী প্রান্তি হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘শোয়া উড়িল’ গানটি গায়।

এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রে ব্যবহার হয়েছে এমন গানগুলো পরিবেশন করেছেন ফেরদৌস আরা, তপন চৌধুরী, কিরণ চন্দ্র রায়, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ ও বাংলার গানের শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্য ও ফ্যাশন শো পরিবেশন করা হয়। হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম।

অন্যদিকে, মেলার স্টলগুলোতে ছিল হুমায়ূন আহমেদ ব্যবহৃত চায়ের কাপসহ হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিজড়িত হরেক রকমের সামগ্রী। চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে চিত্রাঙ্কন করেছে শিশুশিল্পীরা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন অপু মাহফুজ ও সাথি। পরিচালনা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান নান্টু ও জামাল রেজা।

8 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here