ডাইনোসরের ক্লোন সৃষ্টি কি আদৌ সম্ভব?

6
542

বহুকাল আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে প্রাগৈতিহাসিক দানব ডাইনোসর।ডাইনোসরের ক্লোন সৃষ্টি কি আদৌ সম্ভব? বিজ্ঞানীরা কখনোই এই প্রাণীর ডিএনএ সংগ্রহ করতে পারেননি। তাই এদের ক্লোন তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে ডাইনোসরের হাড় থেকে রহস্যময় ডিএনএ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চত নন, এটি ডাইনসরের ডিএনএ কিনা। অথবা অন্য কোনো প্রাণের ডিএনএ কিনা। হতে পারে কোনো জীবাণু কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর ডিএনএ। হতে পারে তা কোনো কীটের ডিএনএ।

নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার জীবশ্মবিদ মেরি শিউয়েৎজার জানান, এখন পর্যন্ত এই ডিএনএ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। কাজেই এক এখনো শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। তাই এখন পর্যন্ত রহস্যই থেকে গেছে।

ডাইনসরের ফসিলে ডিএনএ পাওয়ার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হাড়ে বিশেষ এক খনিজ থাকে যার নাম হাইড্রোক্সিঅ্যাপাটাইট। এতে বিশেষ কি বায়োমলিকিউল থাকে। যাদের একটি ডিএনএ। অনেক সময় বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে হাইড্রোক্সিঅ্যাপাটাইট পরিশুদ্ধ করে ডিএনএ বের করে আনেন।

এর পরিবর্তে শিউয়েৎজার ডাইনোসরের ফসিলের টিস্যু বিশ্লেষণ করতে চান। যেমন- রক্তবাহী নালী। ৮০ মিলিয়ন বছরের পুরনো একটি ডাক-বিলড ডাইনোসরের ফসিলে এটি পাওয়া গেছে।

ডিএনএ কতদিন বাঁচে? : এ যুগে আবারো ডাইনোসর জন্ম দিতে হলে ডিএনএ লাগবে। কিন্তু একটি প্রাণের ডিএনএ তার মৃত্যুর পর পরই ক্ষয় হতে শুরু করে। এর কারণ হলো মাটির জীবাণু, দেহের কোষ ইত্যাদি ডিএনএ ক্ষয় করতে থাকে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিও এ কাজ করে থাকে। এসব তথ্য দেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইকোলজি অ্যান্ড এভুলোশনারি বায়োলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ বেথ শাপিরো। এক সময় এটি নিঃশেষ হয়ে যাবে। এর আগে কানাডার ইউকনের বরফে ঢাকা নদী থেকে ৭ লাখ বছরের পুরনো ঘোড়ার ফসিল থেকে ডিএনএ পাওয়া যায়। কাজেই ডিএনএ কতদিন বাঁচে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে বহু বিজ্ঞানীদের মতে, ডিএনএ ১০ লাখ থেকে ৫০ বা ৬০ লাখ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। অবশ্য কেমন পরিবেশে তা সংরক্ষিত হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে।

ডাইনোসরের ডিএনএ : যে ডাইসরের হাড়ে ডিএনএ পাওয়া গেছে তা স্বভাবে ডাইনোসরের মতো কোনো প্রাণীর কিনা তা জানতে চান বিজ্ঞানীরা। সেই সময় ডাইনোসর গোত্রের পাখিও ছিল। দ্বিপদী ও চতুর্পদী ডাইনোসর ছিল। মাংসাশী ও নিরামিষভোজী ডাইনোসর ছিল। ডাইনোসরটির মৃত্যুর পর মাটিতে তার হাড়ে অন্য কোনো প্রাণী বা জীবাণুর ডিএনএ লেগে যেতে পারে।

রোমাঞ্চকর ক্লোনিং : ধরা যাক, বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ পেয়ে গেলেন। গোটা জেনোম তারা শনাক্ত করতে পারলেন। তারা তথাকথিত জাঙ্ক ডিএনএ এবং ভাইরাল ডিএনএ’র হিসাব মিলিয়ে জেনেটিক কোড পেয়ে গেলেন। এরপর বিজ্ঞানীদের এমন একটি প্রাণের সন্ধান করতে হবে যেখানে এই ডিএনএ স্থাপনের মাধ্যমে ডাইনোসরের ক্লোন সৃষ্টি হবে। একটি মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রাণের উৎস পেলেই চলবে না। মায়ের গর্ভে শিশু ডাইনোসর বৃদ্ধির সময় জেনেটিক ও প্রোটিনের বিভিন্ন অবস্থার সময়কাল মেলাতে হবে।

ধরা যাক, জন্মদানের জন্যে একটা প্রাণ পাওয়া গেলো। ডিএনএ প্রয়োগে একটি অর্ধেক পাখি বা অর্ধেক ডাইনোসরের সৃষ্টি হতে পারে।

এর পরে আসে নৈতিকতার কথা। কেবলমাত্র বিলুপ্ত প্রাণীটিকে দেখার জন্যে বা আনন্দ পাওয়ার জন্যে একটিমাত্র ডাইনোসরকে জন্ম দেওয়া ঠিক হবে না। তবে জেনেটিক বৈচিত্র্যের সেই সময়কার পূর্ণতা ফিরিয়ে আনতে হয়তো ৫ হাজার প্রাণী সৃষ্টি করতে হবে। যদি ৫ হাজার ডাইনোসর ক্লোন করা হয়, তবে এদের কোথায় রাখা হবে? এরা কি ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে?

আসলে একটিমাত্র ডাইনোসর ক্লোন করতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে। বহু বাধা অতিক্রম করতে হবে। তার আগে অবশ্যই এদের ডিএনএ সংগ্রহ করতে হবে। যা এখনো পর্যন্ত করা যায়নি।

6 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here