প্রথম আলোর মুখোমুখি কপিল শর্মা

11
434

আপনার অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি ‘ফিরাংগী’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২৪ নভেম্বর। কিন্তু ছবিটি ১ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে। দীপিকার ‘পদ্মাবতী’র জায়গা দখল করলেন?

আমার ছবির ভাগ্যে বোধ হয় এই দিনটাই লেখা ছিল। প্রথমে ফিরাংগী মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১০ নভেম্বর। তারপর পিছিয়ে ২৪ নভেম্বর করা হয়। আবার পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর মুক্তির দিন স্থির করা হয়। আর দীপিকার জায়গা আমি ছাড়া কেই বা নিতে পারে (সশব্দে হেসে)। তবে আমার খুবই খারাপ লাগছে পদ্মাবতী ছবিটি নির্ধারিত দিনে মুক্তি পাচ্ছে না বলে। আর আমি মোটেই খুশি নই যে পদ্মাবতীর স্লট আমরা নিয়েছি।

‘পদ্মাবতী’কে ঘিরে এত উত্তেজনা, এত অস্থিরতা। এমনকি দীপিকার নাক, গলা কাটার হুমকি। এ বিষয়ে আপনার কী অভিমত?

এ ধরনের হুমকি কখনোই কাম্য নয়। দীপিকার জন্য আমার অত্যন্ত খারাপ লাগছে। তবে সত্যি বলতে, পদ্মাবতী-কে ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এক দলের অভিযোগ, ছবিতে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। আবার পদ্মাবতীর নির্মাতাদের বক্তব্য, ছবিতে এমন কোনো দৃশ্য নেই যে তাকে ঘিরে এত জল ঘোলা করা হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সেন্সর বোর্ডই দিতে পারবে। তবে একটা ছবি নির্মাণের পেছনে অনেক মানুষের অনেক পরিশ্রম থাকে। আমি নিজে এই ছবি করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি। তাই পদ্মাবতীর জন্য খুবই খারাপ লাগছে। আর এটি অনেক বড় মাপের ছবি। যখনই ছবিটি থিয়েটারে আসবে, তখনই বাজিমাত করবে।

 ‘কিস কিসকো প্যায়ার করু’র পর আপনাকে দেখা গেল নিজের প্রযোজিত ছবিতে। এর মধ্যে কোনো ছবির প্রস্তাব কি পাননি?

প্রায় ৪০টার মতো ছবি আমি ছেড়েছি। আসলে নিজের টেলিভিশন শো নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে ছবির জন্য সময় বের করতে পারতাম না। এমনকি কমল হাসানের পুস্পক ছবির পরিচালক আমাকে ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি জানতামই না তিনি কে। আমি তাঁকে না করে দিই। পরে জানতে পেরে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল। দুই বছর আগে ডেভিড ধাওয়ান স্যার তাঁর ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। মুবারকাঁ ছবিতে কাজ করার প্রস্তাবও আমার কাছে এসেছিল। খুব ভালো লেগেছিল মুবারকাঁর চিত্রনাট্য। কিন্তু তখন একটা শো লঞ্চ করার ব্যাপার ছিল, তাই খুবই ব্যস্ত ছিলাম। আসলে কিস কিসকো প্যায়ার করু ছবির পর অনেকেই আমাকে ওই ঘরানার ছবিতে বাঁধতে চেয়েছিলেন। আর আমি কখনোই চাইনি ‘টাইপ কাস্ট’ অভিনেতা হতে। তাই অনেক ছবির কাজ ফিরিয়ে দিই।

‘ফিরাংগী’র ট্রেলার দেখে মনে হলো এবার এক অন্য কপিলকে পাওয়া যাবে।

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। ছবিটা কমেডি মেজাজে শুরু হলেও ধীরে ধীরে সিরিয়াস হয়ে উঠবে। আমার এই ছবি দেশভাগের সময়কালের ওপর। আর দেশভাগের সব থেকে বেশি যন্ত্রণা বহন করেছে পাঞ্জাব। সাধারণত এই সময়ের ওপর নির্মিত ছবিতে রক্তাক্ত ইতিহাস এবং যন্ত্রণার কথা তুলে ধরা হয়। আমি একটু হালকা মেজাজে পরিবেশন করেছি। দেশভাগের এক অন্য দিক তুলে ধরেছি। আমার দাদাজির কাছ থেকে পার্টিশনের অনেক গল্প শুনতাম। বলা যায়, সেই সব গল্প দ্বারা আমি প্রভাবিত। আমি একটা এমন ছবি করতে চেয়েছিলাম, যা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারি। আজও আমার মায়ের পাশে বসে চুম্বনের দৃশ্য দেখতে অস্বস্তি হয়। কোনো একটা ছবি মাকে নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, আর তাতে ছিল চুম্বনের দৃশ্য। লজ্জায় আমি কোথায় মুখ লুকাব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

‘ফিরাংগী’ ছবির দৃশ্য

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ থেকে ‘ফিরাংগী—চড়াই-উতরাইয়ে ভরা এই লম্বা সফর কী রকম ছিল?

খুবই ভালো সফর। একটা সফরে চড়াই-উতরাই থাকবে তা স্বাভাবিকই। আমি কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখেছি। ঘষামাজা করে নিজেকে অনেক চকচকে করেছি। ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার’ শোর সময় আমাকে বলা হতো চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়ে নিজের থেকে কিছু করতে। কিন্তু তখন আমার ব্যাপারটা বোধগম্য হতো না। ভাবতাম, মহড়ার বাইরে কীভাবে কাজ করব? এরপর ‘কমেডি সার্কাস’, ‘বড়ে মিয়াঁ ছোটে মিয়াঁ’সহ পরপর একাধিক শো করি। নিজে শো প্রযোজনা করি। ধীরে ধীরে শিখি কীভাবে মঞ্চে চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়ে উপস্থাপনা করতে হয়। আমার শোতে ৩০ শতাংশ চিত্রনাট্য অনুযায়ী হতো। আর বাকি অংশটা নিজের থেকে করতাম।

টেলিভিশন না সিনেমা, আপনার কাছে কোনটার গুরুত্ব বেশি?

অবশ্যই টেলিভিশন। আজ আমি যা, তা টেলিভিশনের জন্যই। টিভির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যায়। ছোট পর্দার রেঞ্জ অনেক বেশি। সিনেমা দেখার জন্য পকেটে টাকা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু টিভির ক্ষেত্রে তা লাগে না। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। পুস্করে আব্বাস-মাস্তান স্যারের ফিল্মের শুটিং করার সময় কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কারণ জায়গাটা ছিল জনমানবশূন্য। দূর-দূরান্তে কোনো বসতি ছিল না। কিন্তু আমার নাম শুনে ১০ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে প্রচুর মানুষ শুটিংস্থলে ভিড় করে। আর এটাই হলো টেলিভিশনের শক্তি। আমার যা পরিচিতি, তা ছোট পর্দার জন্যই। আমার প্রথম ছবির মার্কেটিং টিম বলেছিল, ৪ কোটির ওপেনিং হলেই আমরা লাভবান হব। আমি বলেছিলাম, কেন ৬ কোটিও হতে পারে। কিন্তু ১০ কোটির বেশি ওপেনিং হয়। আর এসব মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নয়।

‘কিস কিসকো প্যায়ার করু’ ছবির দৃশ্য‘ফিরাংগী’ ছবির একটি গানে আপনার মা, বোন ও ভাবি অভিনয় করেছেন। কী রকম লাগল নিজের প্রিয়জনদের ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসতে?

দারুণ লেগেছে। আমার মা তো শুটিংয়ের কিছুই বোঝেন না। রোল, ক্যামেরা, অ্যাকশন তাঁর বোধগম্যের বাইরে। আমি মাকে বলি শুধু হাত নেড়ে মেয়েটাকে ডাকতে। মাকে খুব সাধারণভাবে সবকিছু বোঝাতে হতো। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে মা নিজেকে বড় পর্দায় দেখতে পাবেন।

বলিউডের প্রায় সব বড় অভিনেতা আপনার শোতে অতিথি হয়ে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চ আপনি শেয়ার করেছেন। বলিউডের কোন কোন তারকার সঙ্গে আপনি বড় পর্দায় অভিনয় করতে চান?

অনেকে আছেন। আমার যেমন আরশাদ ওয়ারশির কাজ দারুণ লাগে। আরশাদ ভাই ও নাসিরুদ্দিনের ইশকিয়া ছবিটি আমার খুব ভালো লেগেছিল। ছবিতে তাঁদের দুজনের রসায়ন দুর্দান্ত ছিল। তাই আরশাদের সঙ্গে এ রকম কোনো ছবি করতে চাই। শাহরুখ ভাইয়ের টাইমিংও আমার ভীষণ ভালো লাগে। ওনার সঙ্গে যদি ছবি করার সুযোগ পাই, তো দারুণ হবে। আর অমিতজির সঙ্গে অভিনয় করা তো যেকোনো অভিনেতারই স্বপ্ন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।

আর কোন অভিনেত্রীকে নায়িকা হিসাবে পেতে চান?

(লাজুক হেসে) দীপিকা পাড়ুকোন।

আপনার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ শোনা যায়। শাহরুখ, অক্ষয়, অনিলসহ একাধিক বড় অভিনেতাকে শুটিংয়ের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখেছেন। এমনকি অনেক তারকা আপনার ওপর নাকি বেজায় চটে ছিলেন?

আমিও শুনেছিলাম, সালমান ভাই আমার ওপর রেগে আছেন। অক্ষয় পাজিকেও আমি নাকি দুঃখ দিয়েছি। এসব গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই তো অক্ষয় পাজির সঙ্গে শুটিং করলাম। আর তারকাদের আমি নাকি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখি। আপনি আমার শুটিং স্পটে এলে বুঝতে পারবেন, এসব অভিযোগ একদম অর্থহীন। আমি নাকি শাহরুখ ভাইকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখেছিলাম। সেদিনও আমি ২টার সময় স্টুডিওতে পৌঁছে যাই। আর শাহরুখ ভাইয়ের আসার কথা ছিল সন্ধ্যা সাতটায়। উনি আটটা নাগাদ আসেন। তাহলে ওনাকে কোথায় অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম?

আপনার বিরুদ্ধে এ-ও অভিযোগ আছে যে আপনি দিনের পর দিন শুটিং বাতিল করেছেন। শাহরুখের সঙ্গে শোর শুটিংও বাতিল করেন। এই অভিযোগও কি ভিত্তিহীন?

একদমই নয়। আসলে আমি তখন শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলাম। মাঝেমধ্যে আমার নার্ভাস সিস্টেম ব্রেকডাউন হয়ে যেত। মনে হতো আমি মঞ্চে উঠতে পারব না। আর শাহরুখ ভাইসহ আরও অনেক তারকার শো বাতিল করতে হয়। আমি অসুস্থ হওয়ার পর শাহরুখ ভাই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। উনি আমাকে পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমার ওপর ক্ষুণ্ণ হলে কি ভাই দেখা করতে আসতেন?

আপনার কি মনে হয় না, হলিউডের চেয়ে বলিউডে কৌতুক অভিনেতাদের কদর কম?

বলিউডেও এখন কমেডিয়ানদের কদর ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগে একজন কমেডিয়ানকে ১০ হাজারের বেশি দেওয়া হতো না। কিন্তু আমি কমেডি শোর জন্য এক বছরে ১০০ কোটি টাকা নিয়েছি। কমেডিয়ানদের সম্মান বলিউডেও ক্রমশ বাড়ছে।

কিন্তু অভিনেতা শেখর সুমন আপনাকে উঁচুমানের কমেডিয়ান বলে মনে করেন না। আপনি যে কমেডি করেন, তা নাকি সম্মানজনক নয়। এ ক্ষেত্রে আপনার কী মতামত?

তাই নাকি! উনি এ কথা বলেছেন? এ ক্ষেত্রে আমার কি মতামত থাকতে পারে? আমি কিন্তু পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন, সম্মান পাই। কিছুদিন আগেই আমেরিকায় আমার শো হাউসফুল ছিল। দুবাইতে বিয়ঁনসের শোর কদিন আগে আমার শো ছিল। এক দিনের মধ্যে আমার শোর সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।

আপনার আশপাশে সব সময় ছোটবেলার বন্ধুদের দেখা যায়। পরিচালক রাজীব ধিংরাও আপনার ছোটবেলার বন্ধু। আপনার আরেক বন্ধু সুনীলকে কবে আবার আপনার পাশে দেখা যাবে?

এই প্রশ্নটা আপনি ওকেই করুন। আমি তো ওকে অনেকবারই ডেকেছি। আমার ছবি ফিরাংগীট্রেলার লঞ্চের সময় ওকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তখন সুনীল কানাডায় ছিল। এখন ও বাহরাইনে। তাই কথা হয়নি। দেখুন, আমার সঙ্গে রাজীবের ৪০ বারের মতো ঝগড়া হয়েছে। আজও আমরা একসঙ্গে আছি। বন্ধুত্ব মানেই তাই। একবার লড়াই হলে যদি বন্ধুত্ব ভেঙে যায়, তাহলে বলব সেখানে বন্ধুত্ব ছিল না, বা একতরফা সম্পর্কটা ছিল।

বলিউডের অনেকে টুইট করে আপনার ছবিকে শুভকামনা জানাচ্ছেন। কী রকম লাগছে?

খুবই ভালো লাগছে। তবে আমি অমিতজির কাছে কৃতজ্ঞ। উনি নিজের এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমার ছবিতে কণ্ঠস্বর দিয়েছেন। অমিতাভের মধ্যে আমি ঈশ্বরকে দেখি। কারণ সেই সব মানুষ আমার কাছে ভগবান, যাঁরা নিজেদের চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও অন্যের জন্য সময় বের করেন। অমিতজির মতো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব আমার মতো সাধারণ মানুষের জন্য এতটা করেছেন। খুবই লজ্জা লেগেছিল অমিতজিকে এই কাজের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিতে। উনি মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে কাজ সেরে ফেলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছবিটিকে আরও অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি গতকালই অমিতজিকে মেসেজ করি। ইংরেজদের ওই একটা শব্দ ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ছাড়া আর কিই বা বলতে পারি!

টেলিভিশনে আবার কপিল শর্মা কবে ফিরে আসছেন?

এখন তারই প্রস্তুতি পর্ব চলছে। আগামী বছর শুরুর দিকে আবার ছোট পর্দায় ফিরে আসব।

11 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here