লঞ্চ প্যাডে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সম্ভাব্য উৎক্ষেপণ ২৪ এপ্রিল

26
345

নির্মাণকারী কোম্পানি ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়ার প্লান্ট হতে বুধবার ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাডের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।

এবার ২৪ এপ্রিল দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইটের সম্ভাব্য উৎক্ষেপণ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিটিআরসির সূত্র ও আমেরিকা স্পেসের টুইট থেকে জানা গেছে, স্যাটেলাইটটি নির্মাণ প্লান্ট হতে বের হয়ে ফ্র্যান্সের নাইস বিমানবন্দরে আসবে। এখান হতে অ্যানতোনাভ কার্গো উড়োজাহাজে করে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা হতে ৮টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পথে যাত্রা করবে।

একই দিন বোস্টনে যাত্রা বিরতির পর শুক্রবার এটি ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত স্পেস এক্সের লঞ্চ প্যাডে নামবে ।

এখানেই এটিকে স্পেস শাটলের কার্গো বে ফ্যালকন-৯ এ ইন্ট্রিগ্রেশন, টেস্টিং এবং ফুয়েলিং করা হবে। ফ্যালকন-৯ এর আপগ্রেডেড ব্লক-৫ ভার্সনে প্রথম উৎক্ষেপণ হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের।

এর আগে এটির উৎক্ষেপণ তারিখ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এবং ৫ এপ্রিল হতে পিছিয়েছে।

আমেরিকা স্পেস এবং থেলেস এলেনিয়ার টুইট ও স্পেসফ্লাইটনাউ ডটকমের স্পেস সিডিউল হতে এসব তথ্য জানা গেছে।

এটি উৎক্ষেপণকালে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন হতে ফ্লোরিডার লঞ্চিংয়ে সরাসরি সংযুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এখানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীরও উপস্থিত থাকার কথা শোনা গেছে। আর ক্যাপ ক্যানাভেরালে উপস্থিত থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

বাংলাদেশের ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে । গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় এই গ্রাউন্ড স্টেশন। বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনটি ব্যাকআপ স্টেশনে হবে। মূলত কাজ হবে জয়দেবপুরের স্টেশনেই।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট অরবিটে পাঠানোর পর থ্যালাস সেটি পর্যবেক্ষণ করবে। তবে সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এই গ্রাউন্ড স্টেশনে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এটি উৎক্ষেপণের পর  ইন-অরবিট টেস্ট বা আইওটি শেষে ৩ মাস পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হতে সেবা পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে সেবা বিপণনে প্রচার-প্রচারণা ও যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট কোম্পানি উদ্যোগ নিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিগুলো অন্যান্য দেশের কাছে বিক্রি করা হবে। অব্যবহৃত এই অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা যাবে।

এখন দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন ও রেডিও বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়ায় ব্যবহার করে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১১০ কোটি টাকা ভাড়া গুনতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে দেশে এ বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে।

সেইসাথে ব্যাপকভাবে স্যাটেলাইটে  মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস,টিভি বা রেডিও চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি, নেভিগেশন বা জাহাজের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনায়, পরিদর্শন – পরিক্রমা (সামরিক ক্ষেত্রে শত্রুর অবস্থান জানার জন্য) এটি দারুণ কাজে আসবে।

এ ছাড়া দূর সংবেদনশীল তথ্যে, মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা যাবে এ স্যাটেলাইট। মহাশূন্য এক্সপ্লোরেশন, ছবি তোলার কাজে, হারিকেন-ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস, গ্লোবাল পজিশনিং বা জিপিএস, গামা রে বারস্ট ডিটেকশনের কাজে লাগবে এটি।

একই সঙ্গে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পেতে, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনি সনাক্তকরণ, ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করাসহ অত্যাধুনিক অনেক কাজেই স্যাটেলাইটের সুফল পাবে বাংলাদেশ।

26 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here