১৯৬৫ সালে, ১৭ বছর বয়সী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র, র্যান্ডি গার্ডনার
২৬৪ ঘন্টা জেগে ছিলেন।সে না ঘুমিয়ে কীভাবে মোকাবিলা করবে তা দেখার জন্য প্রায় ১১ দিন জেগে ছিল।
দ্বিতীয় দিনে, তার চোখ ফোকাস করা বন্ধ করে দেয়।
তৃতীয় দিন, গার্ডনার সমন্বয়হীন ছিলেন।
এরপর, তিনি স্পর্শ করা ছাড়া বস্তু সনাক্ত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
না ঘুমিয়ে থাকার পরীক্ষা শেষে, তিনি তার মনোনিবেশ ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছিলেন,
স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেল, এবং তার মধ্যে বিভ্রান্তি মূলক আচরণ দেখা গেল ।
যদিও র্যান্ডি গার্ডনার দীর্ঘমেয়াদী মনস্তাত্ত্বিক অথবা শারীরিক ক্ষতি ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে ।
অন্যদের ক্ষেত্রে না ঘুমানোর, ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে,
অসুস্থতা এবং, চরম পরিণতি হিসেবে মৃত্যু হতে পারে।
উপরের ঘটনার মাধ্যমে আমরা কেবল বুঝতে শুরু করেছি কেন আমরা ঘুমাই । ঘুম আমাদের জন্য অপরিহার্য একটা বিষয় ।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রাতে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন, এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রায় দশ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন ।
আমরা ঘুমিয়ে পড়ি কারণ আমাদের শরীর থেকে মস্তিষ্কে সংকেত প্রদান করা হয়, যে আমরা এখন ক্লান্ত এবং পরিবেশ থেকে সংকেত পাই যে বাহিরে অন্ধকার ।
ঘুমানোর মাধ্যমে প্ররোচিত রাসায়নিকের বৃদ্ধি ঘটে, সেগুলো হলো অ্যাডিনোসিন এবং মেলাটোনিন ।
যা আমাদের হালকা ঘুমে প্রেরণ করে এবং আস্তে আস্তে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত করে, আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দন ধীর করে দেয় এবং আমাদের পেশী শিথিল হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে,যে প্রাপ্তবয়স্কদের ৩০% এবং কিশোরদের ৬৬%
নিয়মিত ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়। এটি কেবল একটি সামান্য অসুবিধা নয়।জেগে থাকলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
আমরা যখন পর্যাপ্ত ঘুমাই না, তখন এটা শেখা, স্মৃতিচারণ করা, মেজাজ এবং প্রতিক্রিয়ার সময় প্রভাবিত হয় । নিদ্রাহীনতা চোখের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, ভ্রম, উচ্চ রক্তচাপ,এবং এমনকি ডায়াবেটিসের মত নানান রোগ হতে পারে ।
২০১৪ সালে, একজন ফুটবল ভক্ত, বিশ্বকাপ দেখার জন্য ৪৮ ঘন্টা জেগে থাকার পর মারা যান ।
তার এই না ঘুমিয়ে খেলা দেখার ফলে হটাৎ স্ট্রোকের কারণে অকাল এ মৃত্যু হয়েছিল ।
এক গবেষণায় দেখায় যে, দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাতে ছয় ঘন্টার কম ঘুমালে যারা ধারাবাহিকভাবে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমায় তাদের তুলনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি সাড়ে চার গুণ বৃদ্ধি পায় ।
ঘুমের অভাব কীভাবে এত অপরিসীম দুর্ভোগের কারণ হতে পারে?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের জেগে থাকার সময় মস্তিষ্কে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় পদার্থ উৎপন্ন হয় ।
আমাদের কোষগুলি দিনের বেলায় মস্তিষ্কে শক্তির উৎসগুলি ব্যবহার করতে ব্যস্ত থাকে,
যা বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে ভেঙে যায়, যেমন অ্যাডেনোসিন তৈরি হয়,
এটি ঘুমানোর তাগিদ বাড়ায়, যা ঘুমের চাপ নামেও পরিচিত।
আসলে, ক্যাফিন অ্যাডেনোসিনের রিসেপ্টর পথ গুলি ব্লক করতে কাজ করে।
অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ও মস্তিষ্কে তৈরি হয়,
এবং যদি তা পরিষ্কার না হয় তবে তারা সম্মিলিতভাবে মস্তিষ্ককে ওভারলোড করে দেয় ।
ঘুমের অভাবের অনেক নেতিবাচক উপসর্গের দিকে পরিচালিত করে বলে মনে করা হয়।
সুতরাং, যখন আমরা এটি প্রতিরোধ করতে ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে কী ঘটছে?
বিজ্ঞানীরা গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম নামে কিছু খুঁজে পেয়েছেন,
এটি একটি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া যা অপসারণ করে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ।
এবং আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন অনেক বেশি সক্রিয় থাকে।
এটি বিষাক্ত উপজাতগুলি দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সেরিব্রোস্পাইনাল তরল ব্যবহার করে কাজ করে
যা কোষের মধ্যে জমা হয়।
গ্লিম্ফ্যাটিক, যা ইমিউন কোষের জন্য পথ হিসাবে কাজ করে,
সম্প্রতি মস্তিষ্কে আবিষ্কৃত হয়েছে যে,
এরা মস্তিষ্কের দৈনন্দিন অপ্রয়োজনীয় পদার্থ গুলি পরিষ্কার করতে কাজ করে থাকে ।
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের স্বাস্থ্য এবং আমাদের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে।