জীবিত অবস্থায় তোলা হিটলারের সর্বশেষ ছবিটির গল্প!

9
271

হিটলারের সর্বশেষ ছবি

মিত্রবাহিনীর বিমান সেনাদের মূহুর্মূহ বোমা হামলায় বার্লিনের রাইখ চ্যান্সেলরী পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তপে। সেই ধংসযজ্ঞের দিকে চেয়ে আছেন দুজন মানুষ; একজনের নাম জুলিয়াস স্কাহাব, হিটলারের সহকারী। ডানপাশে কালো পোশাক পরিহিত মানুষটা স্বয়ং অ্যাডলফ হিটলার। নিজের বানানো গর্তে নিজেই পড়ে আছেন, এমনটাই বোধহয় ভাবছিলেন তখন এই স্বৈরনায়ক। ১৯৪৫ সালের আটাশে এপ্রিল তোলা এই ছবিটিই অ্যাডলফ হিটলারের জীবিত অবস্থায় তোলা সর্বশেষ স্থিরচিত্র। এর দুদিন পরেই পরাজয় আসন্ন জেনে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন হিটলার। মৃত্যুর ঘন্টা চল্লিশেক আগে বিয়ে করেছিলেন দীর্ঘদিনের বান্ধবী ইভা ব্রাউনকে, সহমরণের পথ ধরেছিলেন দুজনে। হিটলার নিজেকে শেষ করেছিলেন সায়ানাইড পিল আর পিস্তলের গুলিতে, আর ইভার জন্যে সায়ানাইডের বিষই যথেষ্ট ছিল। যন্ত্রণাবিহীন মৃত্যুর জন্যে শল্যচিকিৎসকের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন যুদ্ধবাজ হিটলার, চিকিৎসকই তাকে বলেছিলেন, সায়ানাইড পান করলে ব্যথার অনুভূতি কমে যায়, তেমনটাই করেছিলেন হিটলার। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগ্রারে চাপ দিয়েছিলেন, চেম্বার থেকে বুলেটের ধাক্কায় মগজ ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল। মৃত্যুর যন্ত্রণা কি হিটলার টের পেয়েছিলেন পুরোটা? তার আঙুলের ইশারায় ঝরে গেছে কত তরতাজা নীরিহ প্রাণ, তাদের কষ্টটা কি সামান্য হলেও অনুধাবন করেছিলেন এই ফ্যানাটিক লোকটা?

হিটলারের উইল

কৃষ্ণকান্তের উইল তো পড়েছেন অনেকেই, বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ এক সৃষ্টি, জন্ম হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের হাতে। কিন্ত হিটলারের উইলের কথা ক’জনে জানেন? মৃত্যুর আগে নিজের অপরাধ স্বীকার না করে নাজী পার্টির জন্যে একটা উইল করে গিয়েছিলেন হিটলার, পাঠকদের জন্যে সেটা বাংলায় তুলে দেয়া হলো-

আমার মনে হয় না কোনকিছুর দায়ভার নেয়ার দরকার আমার আছে। যুদ্ধের এই ক’বছরের কষ্টসাধ্য পথচলা আর বহুদিনের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পৃথিবীতে আমার আয়ুকাল শেষ হয়ে যাবার আগে সেই মেয়েটিকেই আমি জীবনসঙ্গীনি হিসেবে বেছে নিচ্ছি, যে আমার সাথে তার গন্তব্য এক করে নিতে পারে। এবং সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ইচ্ছেতেই সে আমার সাথে শেষযাত্রায় রাজী হয়েছে, তার ব্যক্তিস্বাধীনতা মোতাবেক। এই সিদ্ধান্ত আমাদের দুজনের সেই অপ্রাপ্তিগুলো দূর করে দিচ্ছে- বহু বছরের ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে যেগুলো ধীরে ধীরে তৈরী হয়েছিল, দেশ আর মানুষের জন্যে কাজ করতে গিয়ে আমরা যা হারিয়েছিলাম।

এত বছর ধরে আমাদের যা কিছু সঞ্চয়ে বা অধিকারে ছিল, সব কিছু পার্টির জন্যে বরাদ্দ। হয়তো এই পার্টি আর থাকবে না, সেক্ষেত্রে সেগুলো দেশের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। আর যদি ওরা দেশটাকেও না রাখে, সেক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্তের কোন প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।

আমার সংগ্রহশালায় যে ছবিগুলো আছে, যা এতকাল ধরে আমি কিনেছি বা উপহার পেয়ে সঞ্চয় করেছি, সেগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে ছিল না কখনোই। আমি চেয়েছি, এগুলো দিয়ে আমার শহর লিনঝের দোনাও তে সংগ্রশালাটা বিশালাকারে গড়ে তোলা হোক। আমার আবেদন থাকবে, আমার অবর্তমানে এই কাজটা যেন করা হয়।

আমি আমার সম্পত্তির নির্বাহক হিসেবে পার্টির বিশ্বস্ত কমরেড মার্টিন বোরম্যানকে মনোনীত করে গেলাম। আইনত তাকে এ সকল বিষয়ে সর্বময় সিদ্ধান্ত গ্রহনের অধিকার প্রদান করা হলো। প্রয়োজন পড়লে তিনি তার এবং আমার ভাই-বোনের জীবনধারনের সর্বময় ব্যয় এই সম্পত্তি থেকে খরচ করতে পারেন। এবং আমার স্ত্রীর মা, আমার বিশ্বস্ত সহকর্মীরা যারা তার পরিচিত, বিশেষ করে আমার পুরাতন সচিব ফ্রাউ উইন্টারসহ যারা বহু বছর তাদের কাজ ও সেবা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন, তাদের মধ্যে বণ্টন করতে পারেন।

পালিয়ে যাওয়া বা আত্মসমর্পণ করা আমাদের জন্যে অপমানজনক ও অবমাননাকর হবে বিধায় আমি ও আমার স্ত্রী আত্মহননের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমি চাই মৃত্যুর পরে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেহকে এই চ্যান্সেলর ভবনের প্রাঙ্গনে আগুনে ভস্মীভূত করা হোক, যেখানে দীর্ঘ বারোটি বছর বছর আমি কাজ করেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, দেশের মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি।

বার্লিন, ২৯/০৪/১৯৪৫, সময় রাত ৪:০০।

সাক্ষর- অ্যাডলফ হিটলার।

সাক্ষীদের সাক্ষর-
ড. জোসেফ গোয়েবলস, মার্টিন বারম্যান, কর্ণেল নিকোলাস ভন।

পরিশেষ

যুগে যুগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সবাই বোধহয় শেষ দিনগুলোতে মহৎ সাজার একটা ভান করেন, অন্তত তাদের সবার কথাবার্তার ধরণটা প্রায় একই ধরনের। কেউ ধর্মকে পুঁজি বানান, কেউ বা নিজেদের হিংস্র জাতীয়তাবোধে ভরা মিথ্যে দেশপ্রেমকে। খুনী হিটলার বলুন আর কসাই কাদের মোল্লা বলুন, নিজেদের সাফাই তারা গেয়েই যান। ভাগ্যিস হিটলার নিজেই মরণের পথ বেছে নিয়েছিলেন, নইলে হয়তো কোন একদিন তাকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হলে তার অন্ধ সমর্থকেরা রব তুলতো, এই হিটলার সেই হিটলার নন। কিংবা যুদ্ধের সময় হিটলার ছিলেন দুধের শিশু! যেমনটা আমাদের দেশে হয়েছে।

ছবি ও তথ্যসূত্র- rarehistoricalphotos.com/last-picture-adolf-hitler-1945

9 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here