এখন থেকে হয়তো মোটা আর ভারি পোশাকে মহাকাশে পাড়ি দিতে হবে না মহাকাশচারীদের। কারণ চমৎকার সাদা রংয়ের পাতলা স্পেসস্যুট বানিয়েছে স্পেসএক্স। আগামী বছর তাদের যে নভোচারীরা মহাশূন্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন, তারা আরাম-আয়েশ করে এই পোশাক পরেই রওনা দেবেন। প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ ইলোন মাস্ক এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। ছবি স্পেসএক্স এর নতুন পোশাক পরে একজন প্রকৌশলীকে দেখা যাচ্ছ। নাসার মহাকাশচারীদের জন্য স্পেসএক্স ড্রাগন কার্গো ক্যাপসুল বানাচ্ছে। মার্কিন মহাকাশচারীদের পৃথিবী গ্রহের মাটি ছাড়তে অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে বোয়িং নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল থেকে মার্কিন নভোচারীরা শেষবারের মতো নিজেদের যানে চড়ে মহাকাশে গেছেন। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যেতে তখন থেকে রাশিয়ান রকেটই ব্যবহার করেন তারা। ইতিমধ্যে পৃথিবীতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে স্পেসএক্স এর নতুন পোশাক। এটা যাবতীয় দায়িত্ব দারুণভাবে সম্পন্ন করেছে বলেই জানানো হয়। সূত্র : এমিরেটস

25
369

এক সময় যাত্রী ছাউনির এক কোণে আস্তাকুঁড়ের মধ্যে পড়ে থাকতো সে। ছেঁড়া জামাকাপড় পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। কেউ কোনো খোঁজ খবর নিতো না। খেতেও দিতো না। রোগে-শোকে ভোগলেও কেউ এগিয়ে আসতো না। তার শারীরিক অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। মানসিক ভারসাম্যহীন এই তরুণী নিজের নাম পারুলি বলে দাবি করলেও তার কথাবার্তা ছিল অসংলগ্ন। আর এখন সেই পারুলি সবার সঙ্গে কথা বলছেন, হাসছেন, পরিবারের অনেকের নামও বলতে পারছেন। অনেকটাই সুস্থ!

শুধু মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুখুরিয়া যাত্রী ছাউনির এই পারুলি নয়, রাজধানীর পল্টনের আদুরি, ফরিদপুরের ডোমরাকান্দির কহিনুর, হবিগঞ্জের আউশকান্দির রানি, বান্দরবানের অন্তরও এখন অনেকটাই সুস্থ!

এই পারুলিদের সুস্থ করার মধ্য দিয়ে যিনি সুখ খুঁজে পেয়েছেন তিনি হলেন ব্যাংকার শামিম আহমেদ। পাগল খুঁজে বেড়ান তিনি, পাগল খুঁজে ভালো করাই তার নেশা। নেশার টানে ছুটে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে।

কখনো মানিকগঞ্জ, কখনো হবিগঞ্জ, কখনো ফরিদপুর, কখনো বা ময়মনসিংহ। আবার ছুটে যান সাভার। রাস্তায় পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীনদের পরম মমতায় আগলে ধরেন। তাদের সেবা ও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে পরিবারের হাতে তুলে দেন।

এ ব্যাপারে তিনি তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা একটি গ্রুপ গঠন করেছেন। এ গ্রুপের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছেন শামিম আহমেদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমার বন্ধু ও অফিস কলিগ আলী সাব্বির আমাকে সহায়তা করছেন। এছাড়া, ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু বন্ধু এ কাজে মানসিক, লজিস্টিক সাপোর্ট ও সহযোগিতা করছেন। ফেসবুক বন্ধুদের অনুপ্রেরণা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করে।

শামিম আহমেদ কালের কণ্ঠকে আরও বলেন, একজন ভিক্ষুক আমাদের কাছে টাকা অথবা কিছু খাবার চাইতে পারে। কিন্তু একজন পাগল কিছু চাইতে পারে না। তারা খুবই অসহায়। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি আমার কাজের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যদি সবাই রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের পাশে এগিয়ে আসি তাহলে হয়তো একদিন একজন মানুষও রাস্তায় পড়ে থাকবে না।

হাসি মুখে আদুরি

২০১৫ সালের ঘটনা। একদিন রাজধানীর পল্টন এর মোড়ে রাস্তার পাশে একটি জরাজীর্ণ ছেরা কাপড়ে পরে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে দেখতে পান। মেয়েটাকে কিছু টাকা দিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে পল্টন এর মোড়ে দেখে আসা সেই মেয়েটার প্রতি। পরের দিন অফিসে এসে তার সহকর্মী আলি সাব্বিরের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন। পরবর্তীতে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে আরো কিছু বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার করেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন মেয়েটিকে যে ভাবেই হোক সাহায্য করতে হবে। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ।

শামিম আহমেদ পরবর্তীতে পল্টন মডেল থানা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে যোগাযোগ শুরু করেন। পরবর্তীতে সহকর্মী আলি সাব্বিরকে নিয়ে পল্টন থানা পুলিশের সহায়তায় মানসিক ভারসাম্যহীন সেই মেয়েটিকে নিয়ে ভর্তি করান জাতীয় মানসিক হাসপাতালে। সে সময় শামিম আহমেদ তার নাম রাখেন আদুরি। চিকিৎসার পর আদুরি সুস্থ হলে জানতে পারেন তার বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদীতে। পরে তার পরিবার খুঁজে বের করে আদুরিকে হস্তান্তর করা হয়।

এই পারুলি সেই পারুলি!

২০১৬ সালের ঘটনা। মানিকগঞ্জের জিকু নামের এক লোকের সঙ্গে বাসে পরিচয় হয় শামিম আহমেদের।  তার কাছে জানতে পারেন, ঘিওরের পুখুরিয়া বাস স্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনীতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। মানিকগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় শামিম আহমেদ তার বন্ধু আলি সাব্বিরকে নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

শামিম আহমেদের চেষ্টায় মানিকগঞ্জের অঙ্গাতপরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী পারুলি অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। দুই মাস আগে যিনি ছেঁড়া জামাকাপড় পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন, আজ তিনি পেয়েছেন নতুন জীবন। ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসার পর পারুলিকে ঢাকার আদাবর এলাকার জরিনা বেগম নামে এক নারীর তত্বাবধায়নে রেখে অনেকটাই সুস্থ করেছেন ব্যাংকার শামিম আহমেদ।

কহিনুর পাগলির গল্প    

ফরিদপুরের ডোমরাকান্দি কৃষি কলেজের রাস্তার পাশে যাত্রী ছাউনির ভেতরে উলঙ্গ কহিনুর পাগলীকে দেখে কেউ এগিয়ে আসেনি। এগিয়ে এসেছেন শামিম আহমেদ। তিনি রুহুল আমিন নামের এক দন্ত চিকিৎসকের কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে পাগলির বিষয়ে জানতে পারেন। একদিন ঠিকই গিয়ে হাজির হন রুহুল আমিনের বাসায়। তারপর কহিনুর পাগলিকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। ভর্তি করান মানসিক হাসপাতালে।

কোহিনুরকে ঢাকায় নিয়ে আসার আগে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে যান শামীম আহম্মেদ। জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করে ওই নারীর জন্য কিছু কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর শরীরে কিছু আঘাত ও ক্ষত থাকায় প্রাথমিক চিকিসার জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন জেলা প্রশাসক।

বদলে গেল রানি

দীর্ঘ তিন বছর ধরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে পড়েছিলো মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। শামিম আহমেদ তাকে উদ্ধার করে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করান। নাম রাখেন রানি। বর্তমানে সেখানে তিনি ৩০৮ নম্বর রুমের ৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

এর আগে রানিকে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে এক আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এসময় সেখানে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা সারওয়ারসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও উপজেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে কখনও টাঙ্গাইল, কখনও আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরার কথা বলেন রানি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী যে একজন শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য সেটি বোঝা যায় তার কথা শুনেই। কারও সঙ্গে কথা বলার পর ধন্যবাদ দিতেও ভুলেন না তিনি।

যেভাবে শুরু

২০১৪ সালের ঘটনা।  শামিম আহমেদ বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে থানচি এলাকায় দেখতে পান এক পাগলিকে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকাস্থ শেরে বাংলা নগর জাতীয় মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান। নাম রাখেন অন্তর। তাকে দেখা-শোনা করার জন্য জরিনা বেগম নামের একজন আয়া রেখে দেন তিনি। অন্তর সুস্থ হলে জানতে পারেন তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহজাদাপুরে। পরে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মানবিক ও প্রতিবেদনটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ তে প্রচারসহ শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকগুলিতে প্রকাশিত হয়।

কে এই শামিম আহমেদ?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান শামিম আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাসিন্দা। তার দুই মেয়ে। একজন চতুর্থ শ্রেণি ও অন্যজন প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে যমুনা ব্যাংকের ঢাকা হেড অফিসে আছেন। সেখানে তিনি আইসিটি ডিভিশনে সিনিয়র এক্সিকিউটিব অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শামিম আহমেদ, আলি সাব্বিরসহ তার বন্ধুরা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক এ কাজটি পরিচালনা করে আসছেন। মানবতার এই মহৎ কাজে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযোগিতা পেলে মানবিক কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে রাস্তা ঘাটে অসহায় মানুষগুলি আরো বেশি সেবা পেয়ে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হতো।

এ বিষয়ে শামিম আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে একটি মানসিক হাসপাতাল ও পূণর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা আছে। যেখানে রাস্তায় পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ গুলোর বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে। এর পাশাপাশি সেখানে গড়ে তোলা হবে একটি পূণর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে থাকবে সুস্থতায় ফিরে আসা মানসিক রোগী। সেখানে আরো পূণর্বাসিত হবে, অবহেলিত পরিবার পরিত্যক্ত পথশিশু ও বৃদ্ধ বৃদ্ধা। তবে এই ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্ববান রইলো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে পথশিশু, হিজরা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। অথচ এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদেকে নিয়ে কেউ কাজ করছেন না। সব কিছু সরকার করবে এমনটাও ভাবা ঠিক না। আসুন সবাই মিলে এসব ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদের সুস্থ করে স্বজনদের মাঝে ফিরিয়ে দেই।

স্বীকৃতি

মানসিক ভারসাম্যহীনদের সুস্থ জীবনে ফিরে আনার এমন মহত উদ্যোগের জন্য শামিম আহমেদ পেয়েছেন সম্মাননা স্মারক।  বাংলা সঙ্গীত নামের একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মাননার আয়োজন করা হয়। গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এ পদক তুলে দেন।

25 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here