ডিজিটাল মুদ্রা বিট কয়েন কি এইটার সর্ম্পকে আমরা অনেকে জানি না এটার কাজ সর্ম্পকে আজ জানাবো। এটি কিভাবে ব্যবহার করা হয়

27
338

ধরুন, আপনার অর্থ আছে, কিন্তু পকেটে নেই। ব্যাংকে বা সিন্দুকেও সেই অর্থ রাখা হয়নি। রাখা হয়েছে ইন্টারনেটে। কোনো দিন ছুঁয়েও দেখতে পারবেন না অনলাইনে রাখা ওই অর্থ। শুধু ভার্চ্যুয়াল জগতের এ মুদ্রাকেই বলা হয় ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা।

ডিজিটাল মুদ্রার আদান-প্রদান হয় অনলাইনে। বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে, বেশির ভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। এ ধরনের মুদ্রার বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ভাষা বা সংকেতে লেখা তথ্য এমন একটি কোডে লেখা হয়, যা ভেঙে তথ্যের নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী ছাড়া অন্য কারও কোনো কেনাকাটা বা তহবিল স্থানান্তরের তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন।

এরপরও ডিজিটাল মুদ্রার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা ঘটে গেছে গত শুক্রবার। টোকিওভিত্তিক ডিজিটাল মুদ্রার বিনিময় প্রতিষ্ঠান কয়েনচেকের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হ্যাক করে মোট ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যমানের ডিজিটাল মুদ্রা খোয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক। তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের খোয়া যাওয়া অর্থের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ফেরত দেওয়ার আশ্বাস জানিয়েছে কয়েনচেক। হ্যাকিংয়ে অর্থ চুরির ঘটনায় নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিয়ে তোপের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোপনে ও নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল। গাণিতিক তত্ত্ব ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টোগ্রাফিরও উন্নতি হয়েছে। এতে অনলাইনে ডিজিটাল মুদ্রা সংরক্ষণ ও আদান-প্রদানের বিষয়টি আরও নিরাপদ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।কঠোর গোপনীয়তা থাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট লেনদেনে পছন্দের শীর্ষে ক্রিপ্টোকারেন্সি। ছবি: এএফপি

অবশ্য এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে ডিজিটাল মুদ্রার বিভিন্ন বিনিময় প্রতিষ্ঠানে বেশ কটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানে ইন্টারনেটে এক হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে। কয়েনচেক থেকে চুরি হয়েছে স্বল্প পরিচিত মুদ্রা এনইএম। গত বছরের ডিসেম্বরে নাইসহ্যাশ নামের স্লোভেনিয়ার একটি কোম্পানির মাত কোটি ডলারের বিটকয়েন চুরি হয়। বিটকয়েন চুরির ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালেও। এরও আগে ২০১৪ সালে মুদ্রা চুরির শিকার হয়েছিল আরেক বিনিময় প্রতিষ্ঠান এমটিগক্স। তাদের নেটওয়ার্ক থেকে ৪০ কোটি ডলার চুরি গিয়েছিল। চুরির ঘটনা স্বীকার করার পর ওই প্রতিষ্ঠান শেষে বন্ধই হয়ে যায়।

ডিজিটাল মুদ্রা কোনগুলো?
বিশ্বে এখন হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু আছে। তবে বিনিময় মূল্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নিচের ডিজিটাল মুদ্রাগুলো:

বিটকয়েন: এখন পর্যন্ত চালু থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন। এর বিনিময় মূল্যও সবচেয়ে বেশি। সাতোশি নাকামোতো ২০০৯ সালে বিটকয়েন তৈরি করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিটকয়েনের বাজার পুঁজির পরিমাণ ছিলে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলার। কিছুদিন আগে একটি বিটকয়েনের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২০ হাজার ডলার। তবে চলতি বছরে বিনিময় মূল্যের এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়।

এথেরিয়াম: ২০১৫ সালে তৈরি হয় এথেরিয়াম। বিটকয়েনের মতো এই মুদ্রারও নিজস্ব হিসাবব্যবস্থা আছে। বিনিময় মূল্যের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিটকয়েনের পরই আছে এথেরিয়াম। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার বাজারে পুঁজির পরিমাণ প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০১৬ সালে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার পর এটি দুটি মুদ্রায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এর বিনিময় মূল্য ৮৪০ ডলারে পৌঁছেছিল। তবে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার পর প্রতিটি এথেরিয়াম মুদ্রা ১০ সেন্টে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছিল।

রিপল: ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রিপল। শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, অন্যান্য ধরনের লেনদেনও করা যায় এই ব্যবস্থায়। প্রচলিত ধারার বিভিন্ন ব্যাংকও এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করছে। বাজারে ১০ বিলিয়ন ডলারের পুঁজি আছে রিপলের।

লাইটকয়েন: বিটকয়েনের সঙ্গে বেজায় মিল আছে লাইটকয়েনের। তবে বিটকয়েনের চেয়ে দ্রুত লেনদেন করা যায় লাইটকয়েনে। এর বাজার মূল্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।‘মাইনিং’ নামের একটি জটিল গণনা-পদ্ধতিতে প্রতিটি ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত ‘ব্লকচেইন’ নামের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতিটি লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হয়। ছবি: রয়টার্স

কীভাবে কাজ করে ডিজিটাল মুদ্রা?
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের বিকেন্দ্রীকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে নিরাপদে অর্থ পরিশোধ করা যায়। আমানতকারীর নাম গোপন রেখে এবং ব্যাংকে না গিয়েই অর্থ জমা রাখা যায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার মতো সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মুদ্রা ছাপায় না। ‘মাইনিং’ নামের একটি জটিল গণনা পদ্ধতিতে একেকটি ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত এক বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতিটি লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘ব্লকচেইন’। এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ লেনদেনসহ বন্ড, স্টক ও অন্যান্য আর্থিক সম্পদের কেনাকাটাও করা যায়।

ব্যবহারকারীরা অনলাইনে ব্রোকারদের কাছ থেকেও বিভিন্ন ডিজিটাল মুদ্রা কিনতে পারেন। অনলাইনে ‘ক্রিপ্টোগ্রাফিক ওয়ালেট’ নামক নিরাপদ স্থানে রাখা যায় এই মুদ্রা।

নির্দিষ্ট ডিজিটাল মুদ্রা যত বেশি মানুষ কেনে, সেই মুদ্রার বাজার দর তত বাড়ে। এভাবেই শেয়ার বাজারের মতো নিয়মিত ওঠানামা করে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময় মূল্য। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারী পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে বলে অনেক সময় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বেশি দেখা যায়।বিশ্বে এখন হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু রয়েছে। তবে বিনিময় মূল্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বিটকয়েন। ছবি: এএফপি

কেন ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি?
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিচয় গোপন ও লেনদেন ব্যবস্থায় কঠোর নিরাপত্তা—এই দুটি বিষয়ই হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রাব্যবস্থায় আকৃষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ। এই ব্যবস্থায় একবার লেনদেন হওয়ার পর তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। একই সঙ্গে লেনদেনের খরচ কম হওয়ায় এটি গ্রাহকদের কাছে বেশি নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করেছে। এর প্রযুক্তিব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকৃত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, সবার হাতের কাছেই থাকে ডিজিটাল মুদ্রা। যেখানে প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থায় ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট না খুললে সেবা পান না কোনো গ্রাহক।

ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে আকৃষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এতে কম বিনিয়োগ করেই ব্যাপক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ, প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার তুলনায় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর বিনিময় মূল্যের ওঠা-নামা বেশি। তাই রাতারাতি ধনী হওয়ার সুযোগও থাকে। ঠিক এই কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিটকয়েন বা অন্যান্য শীর্ষ ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে।

তবে এর কিন্তু উল্টো দিকও আছে। অর্থাৎ দর বেড়ে গেলে যেমন ধনী হওয়ার সুযোগ আছে, তেমনি হুট করে দর নেমে গেলে রাস্তাতেও নামতে পারেন। আবার কঠোর গোপনীয়তা থাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট লেনদেনে পছন্দের শীর্ষে আছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। তাই বিনিয়োগকারীদের এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে।

27 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here