চলুন জেনে নিই কিভাবে পারফেক্ট ইয়ারফোন চয়েজ করবেন?

4
507

আস সালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। তবে শুনলাম অনেকের নাকি ইয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে কানের ১২টা বেজে গেছে? আসলে ইয়ারফোন যদি পারফেক্ট না হয় তাহলে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেখা গেছে অনেক সময় বেশি দাম দিয়ে ইয়ারফোন কিনলেও সেই সমস্যাগুলো থেকেই যায়। আসলে কেন এমন হয়? আর কোন ধরণের ইয়ারফোন কিনলে এই রকম সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন তা আজকের টিউন থেকে আসা করি জেনে নিতে পারবেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের মূল টপিক্স এ।

ইয়ারফোনের স্পেসিফিকেশন জানার আগে আমাদের যেটা জানা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, ইয়ারফোন আসলে কত ধরণের হয়ে থাকে। তো চলুন একটূ জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।

ইন ইয়ার ইয়ারফোন

ইন ইয়ার ইয়ারফোন দুইপ্রকার । একটা হচ্ছে কানের গর্তের সামান্তরাল , যা গোলাকৃতির শক্ত প্লাস্টিকের তৈরি।  আর অন্যটা হচ্ছে, নরম সিলিকনের আবরণ থাকে যা আপনার কানের ক্যাভের চারপাশের অংশে চেপে রাখে।

Example for earbuds

এদের মধ্যে প্রথম প্রকারের ইয়ারফোনটির কন্স এর সাইজ যদি কানের সাথে ম্যাচ না করে অর্থাৎ বেশি বড় হয় তাহলে সেটা কানে ব্যাথার সৃষ্টি করে। কারণ কানের ভাজে অথবা গর্তে অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়। আর দ্বিতীয়টি ঐটার থেকে অনেক ভালো। কানের হোলের সাইজ সমান হলেও তেমন ব্যথা করে না। এইটার কন্সের সাইজ বড় বা ছোট হলে ওইটার মত তেমন বিরক্তিকরও লাগবে না। কারণ এটা চাপ দিলে সংকোচিত ও ফাকা পেলে প্রসারিত হয়।

তবে হ্যা যদি আপনার ইয়ারবাড বা কানের হোলের সাইজের সাথে যদি প্রথম ইয়ারফোনটির কন্সের(কানে যেটা লাগানো হয়)  মাপ মিলে যায় তাহলে অবশ্যই সেটা আপনার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ভাল হবে। কেন হবে সেটা একটূ পরই বুঝতে পারবেন। এখন বাজারে বিভিন্ন সাইজের ইয়ারফোন পাওয়া যায়।তাই অবশ্যই সেটা আপনার কানের হোলের সাইজের সাথে ম্যাচ করে কি না সেটা দেখে কিনুন।

দ্বিতীয় যে ইয়ারফোনটি দেখতে পারতেছেন এটাই মানুষ ব্যবহার করে বেশি।কারণ এতে নয়েজ রিডিসিং ডিজাইন করা। মানে বাইরের শব্দ একেবারেই কম শোনা যায় । কিন্তু এটা একদিকে সুবিধা হলেও অন্য দিকে বিপদ। যেমন, আপনি রাস্তায় হাটতেছেন, রিক্সা বা বাস বা যেকোনো ধরণের গাড়ি হর্ণ দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সেই সাউন্ড আপনার কানে নাও পৌছাতে পারে উচ্চসরে গান শোনার কারণে ।

তাই সেই ক্ষেত্রে প্রথম প্রকারের ইয়ারফোন ব্যবহার করা উচিত। কারণ দ্বিতীয় প্রকারের ইয়ারফোনটি আপনি ব্যবহার করলে আপনার চারপাশের অবস্থার সাথে আপনার কান কমিউনিকেট করতে পারবে। বাইরে কি ঘটছে সেটা সম্পর্কে সে জানতে পারবেন। তবে অতিরিক্ত শব্দ আবার আপনার গান শোনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই এমন হেডফোন কিনুন যেটা বাইরের অতিরিক্ত সাউন্ডকে রিডিউস করতে পারে।

তাই যেই জায়গায় যেই ইয়ারফোন ব্যবহার করা সুবিধাজনক সেটা ব্যবহার করুন। আর রাস্তায় ব্যবহার করলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন।

অন ইয়ার ইয়ারফোন

অন ইয়ার ইয়ারফোন বলতে হেডফোন বলতে হেডফোনকে বুঝায় কারণ এর একটি হেডব্যান্ডস রয়েছে।  এটাও আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। প্রথমটি একটু সরু আকৃতির হয়ে থাকে যা কানের উপর থাকে আর দ্বিতীয়টি সম্পূর্ণ কানকে ঢেকে রাখে।

Example for headphones

প্রথমটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওজনে হাল্কা, ছোট কান ও মাথার জন্য উপযুক্ত। আর দ্বিতীয়টি হাল্কা এবং ভারী দুই ধরণেরই পাওয়া যায়। কিন্তু এর হাল্কা ওজনের টা আবার বড় কানকে সম্পূর্ণরুপে ঢাকতে নাও পারে।

যেটা ওজনে হাল্কা সেটা বহন করা যেমন সহজ তেমনি এর প্যাডিং আপনাকে ব্যথা দিবে না যদি আপনার হেডব্যান্ড পারফেক্ট হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য দ্বিতীয় প্রকৃতির হ্যাডফোন ভাল। তবে অবশ্যই আপনাকে এমন হেডফোন কিনতে হবে যা কি না আপনার কানের ৯৫% অংশকে ঢেকে রাখতে পারে। তাহলে আপনি অনেক আরামদায়কভাবে দীর্ঘ সময় হেডফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

দুটি হেডফোনই কাজের জন্য বা ভিডিও দেখার জন্য ভাল। তারা উভয়েই বাইরের নয়েজ ব্লক করতে সক্ষম।  তারা আপনার কানের কোনোরুপ ক্ষতি করবে না। ঠিক যতটুকু প্রেসার প্রয়োজন ততটুকু প্রেসারই প্রদান করবে।  তবে হ্যা অবশ্যই আপনার হেডফোনটি সঠিক মাপের কিনবেন।

ওয়্যারলেস ইয়ারফোন

সব ধরণের ইয়ারফোনেরই এখন ওয়্যারলেস অপশন থাকে কিন্তু আপনাকে এর জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকা ব্যায় করতে হয়। তাহলে কি আপনার এই ওয়্যারলেস ইয়ারফোন কেন উচিত?

Example for wireless earphone

যদি আপনি ইয়ারফোনকে পোর্টেবল ডিভাইসের সাথে ব্যবহার করতে চান ।যেমন ধরেন, লেপটপ এবং ফোনে তাহলে অবশ্যই আপনার ওয়্যারলেস ইয়ারফোন ব্যবহার করা উচিত। আপনি ব্যায়াম করার সময় এই ইয়ারফোন ব্যবহার করা সুবিধা জনক। তবে রাস্তা পার হওয়ার সময় এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

আর হ্যা আপনার সাউন্ড কোয়ালিটি হয়ত পুরোপুরি পাবেন না। কারন এটা ওয়্যারলেস । তবে ভাল ফোনগুলোতে এই সমস্যার সমাধান করা আছে।

ইয়ারফোন স্পেসিফিকেশন্স 

ম্যাগনেট থেকেই ওয়্যারলেস টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। তাদের কয়েকটি স্পেসিফিকেশন রয়েছে ইয়ারফোনের জন্য। আসলে তারা এর মাধ্যমে কি বুঝানোর চেষ্টা করতেছে? আসলে এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় যে, কোন ইয়ারফোনটির দাম কেমন হবে।

Acoustic system

ইয়ারফোনের স্পেসিফিকেশনে acoustic বলতে বুঝায় একটি ইয়ারফোনের ডিজাইন। একটি ক্লোজ acoustic সিস্টেম বাইরের নয়েজকে বাইরে যেতে  বাধা দেয় । যেমন , Sony MDR-ZX110AP. আর অন্যদিকে ওপেন acoustic সিস্টেম কোনো নয়েজকে প্রতিরোধ করে না। মানে আপনি ইয়ারফোনে কি শুনতেছেন তা বাইরের লোক শুনতে পারবে না।

মনে রাখবেন closed acoustics কখনোই নয়েজ ক্যান্সেলেশন এর সমান হতে পারে না। মানে ১০০% নয়েজ প্রোফ কখনো হবে না। যদি আপনি অনেক উচ্চসরে গান শুনেন তাহলে সেটা তো বাইরে যাবেই। তবে হ্যা সেটা খুবই অল্প যাবে। বর্তমানে অধিকাংশ ইয়ারফোনই closed acoustics  সিস্টেম ব্যবহার করে। আর আপনিও এই সিস্টেমের হ্যাডফোনই ব্যবহার করতে পারেন।

Frequency response

ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স বলতে বুঝায় আপনার ইয়ারফোন কত ফ্রিকোয়েন্সির কভার করতে পারে।  যদি বেশি রেঞ্জের হবে ততবেশি ভাল।

উদাহারণস্বরুপ Sony MD-RXB50AP  4-24000hz এর ফ্রিকোয়েন্সি কভার করে। অন্যদিকে  Audio-Technica SPORT2BK 15-24000hz এর রেঞ্জ কভার করে। এর ভিতরে যেটা বেশি বড় ভেলু সেটাই ভাল।

Impedance

ইম্পিডেন্স বলতে বুঝায় ইয়াফোনের সার্কিটে ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল প্রবাহিত হতে কতটা বাধা পায়। ইম্পিডেন্স যত বেশি হবে সিগনাল তত কম যাবে আর সাউন্ডও তাই কম যাবে।সাধারণ ফোনে বিল্ট ইন অ্যামপ্লিফায়ার থাকে না। তাই ২৫ওহমের কম রেজিস্ট্যান্স এর ইয়ারফোন কিনুন। যেমন ,  Philips SHP2600/27

আর যদি আপনার ডিভাইসে বিল্ট ইন অ্যামপ্লিফায়ার থাকে তাহলে ৩৫ওহমের উপরের ইয়ারফোন ব্যবহার করুন। যেমন,  Audio-Technica PRO700MK2

আজকের মত এই পর্যন্তই দেখা হবে পরবর্তী টিউনে । আশা করি এখন থেকে বুঝে শুনে ভাল ইয়ারফোন কিনবেন।

আল্লাহ হাফেজ।

প্রয়োজনীয় হলে পোস্টটি শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ, itdoctor24.com এর সাথেই থাকুন।

4 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here