ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংস্কার

8
304

দুনিয়ায় যখনই দুনিয়াবাসী মহান রাব্বুল আলামিনের কুরআনুল কারিমের মূল শিক্ষা থেকে বের হয়ে দূরে চলে যান, তখন তাদের আলোকিত করতে মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে একজন ইমামের আগমন ঘটে থাকে। যিনি পথহারা মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম তথা সরল পথ দেখাতে থাকেন। তাঁর আহ্বানে যারা সাড়া দেন তাঁরা আলোকপ্রাপ্ত হয়ে পড়েন। আর যারা তার ডাকে সাড়া দিতে পারেন না দুর্ভাগ্য তাদের পেয়ে বসে। এমনই এক মহাপুরুষ ইমাম তাইমিয়া রহ:। ১২৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোটকাল থেকেই অজানাকে জানার আগ্রহ দেখাতে থাকেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি দেখতে পান চার পাশের মানুষ কুরআনের মূল শিক্ষা থেকে দূরে চলে গেছে। তখন তিনি তাদের কুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাতে থাকেন। তাঁর সময় একদল সুফির আবির্ভাব ঘটেছিল। যারা কুরআনুল কারিমকে অনুসরণ না করে মনগড়া মতবাদ প্রচার করত। তিনি তাদের সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাতে থাকেন। যারা প্রকৃতপক্ষে সুফি তারা কুরআনুল কারিমকে অনুসরণ করবেন এটাই ইসলামের মূল শিক্ষা। কিন্তু তাঁর সময় সুফিবাদের অনুসারীরা কুরআনের শিক্ষাকে অনুসরণ না করে শিরক্কে আপন করে নিয়েছিল।

মহান আল্লাহ শিরক্ করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একা ছিলেন কিন্তু তাঁর সাথী ছিল কুরআনুল কারিমের শিক্ষা ও মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর আদর্শ। এর বাইরে তিনি কোনো কিছু ভাবতে পারতেন না। তিনি ভণ্ড, প্রতারকদের বিরুদ্ধে বারবার সাধারণ মানুষকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাতেন। তার বক্তব্য কেউ বুঝত, কেউ বুঝত না। তিনি ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। হিজরি ৭০০ সালের তাতারি আক্রমণ রোধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি মিসরে গিয়ে একপর্যায়ে কুরআনের আলোর পথে সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানাতে থাকেন। তৎকালীন মিসরের শাসকেরা তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে গিয়ে তিনি কয়েদিদের মধ্যে কুরআনের আলো ছড়াতে থাকেন। যেসব কয়েদির কারার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল তারাও কারাগার থেকে বের না হয়ে ইমাম তাইমিয়ার রহ:-এর ছাত্র হয়ে কারাগারে থাকাকে উত্তম মনে করতেন।

তাঁর সময় ব্যাঙের ছাতার মতো বাতিল মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার কাছে সব বাতিল আকিদাকে পরাস্ত হতে হয়েছিল। তাঁর বিখ্যাত একজন ছাত্র হচ্ছে ইবনুল কাইয়ুম। তাঁর এই ছাত্রের লেখা আর রূহ পুস্তকটি সারা পৃথিবীতে অনুবাদ করা হয়েছে। যত দিন পৃথিবীতে শিরকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে, কুরআনের পথে মানুষকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হবে, নবীজি সা:-এর আদর্শকে অনুসরণ করতে বলা হবে তত দিন ইমাম তাইমিয়ার কথা শ্রদ্ধার সাথে, কৃতজ্ঞতার সাথে মুসলিম বিশ্ব স্মরণ করবে। এই মহাপুরুষ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে ৭২৮ হিজরি মোতাবেক ১৩২৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।

8 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here