এক ফুটবল ভক্ত বলছিলেন—তিনি আমাদের সার্জিও বুসকেটস।
কেউ বলছেন, জাবি আলোনসো। আবার কেউ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলছেন—না, সে আমাদের জ্যাভিয়ের ম্যাশেরানো। শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাপার সত্যি যে, এমন চরিত্র ক্রিকেটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ম্যাশেরানো হোক আর বুসকেটস; ফুটবলেরই দ্বারস্থ হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, তিনি ফুটবলের ওই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের মতোই এক আনসাং হিরো।
হ্যাঁ, বাংলাদেশের সবচেয়ে অনালোচিত নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেও মাঝে মাঝে চমকে উঠতে হয়। বছরের পর বছর বিশ্বের সেরা সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হয়ে থেকেছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। আবার সেরা পাঁচ বা ছয় নম্বর বোলারও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এসব স্রেফ কাগুজে পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবদান বোঝা যাবে না।
হ্যাঁ, বিশ্বকাপে জোড়া সেঞ্চুরি বা এরকম কিছু কীর্তি তাকে আলোচনায় আনে বটে। বিপিএলে অসামান্য অধিনায়কত্বও কিছু আলো ফেলেছিলো তার ওপর। কিন্তু আসল যে কাজটা রোজ দিন নিয়ম করে করছেন, সেটা চোখেই পড়তে চায় না—ডুবতে বসা দলকে একটু ব্যাটের বাতাস দিয়ে টেনে তোলা কিংবা হতাশা তৈরি করে বাড়তে থাকা প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দলকে আবার খেলায় ফেরানো।
এই আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচটা ধরুন না কেনো।
মোহাম্মদ মিঠুনের জোড়া জীবন পাওয়া ৪৭ রানের পরও বাংলাদেশ বেশ বেকায়দায় ছিলো। সাকিব-মুশফিক-সাব্বির ব্যর্থ হয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়ে রিয়াদের ২৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। ইনিংসটা বুঝতে পারবেন না, যদি না শেষ ওভারের খেলা দেখে থাকেন।
শেষ ওভারে এলো ১৭ রান। তাও আবার কিভাবে? ১৯তম ওভারের শেষ বলটায় সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে এলেন। তারপর শেষ ওভারে একটা চার, একটা ছয় ও তিনটি ডাবল!
শেষ ওভারের পরিকল্পনাটা একটু আগেই করে রেখেছিলেন বলে জানান রিয়াদ নিজেই, ‘প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল আসলে ১৯তম ওভারেই। শেষ বলে যে করেই হোক সিঙ্গেল নেব বলে ঠিক করেছিলাম। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে চাইছিলাম খুব করে।’
অথচ রিয়াদ ঠিক ‘ব্লাইন্ড হিটার’ নন। তারপরও দলের চাহিদায় শেষ সময়ে গিয়ে এই চালানোর কাজটা করতে হচ্ছে তাকে। রিয়াদ এখন এটাই উপভোগ করছেন বলে দাবিও করলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে অনেকটা ফিনিশারের ভূমিকাই নিতে হচ্ছে। ৬-৭ নম্বরে নামলে এটাই করতে হয়। আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন নিজের জোনে বল পাই। জানতাম পেলে আমি মারতে পারব।’
শেষমেশ রিয়াদের ব্যাটিং চরিত্র যাই হোক, অধিনায়কের ধারণা এই মানুষটা জানে, মাঠে তাকে কী করতে হবে। তার কাজটা প্রায়শ খুব কঠিন হয়ে যায়। তারপরও যেভাবে রিয়াদ টপকে যান, সেটা মাশরাফিকেও মুগ্ধ করে, ‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) জানে তার ভূমিকা কি। তবে মাঝে-মধ্যে তার জন্য কাজটা খুব কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে টপ অর্ডার রান না পেলে ওকে অনেক দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হয়। সে সময় নিজের সেরাটা দিতে না পারলে অনেক সময় ওকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।’
সেই করনিকের গল্প যেনো!