আবারও চিলির হাসি, আর্জেন্টিনার কান্না

23
509

আবারও লিওনেল মেসির মাথায় হাত রেখে, হতাশায় মাঠ ছেড়ে বের হওয়া। আবারও চিলির উত্সব। গোলশূন্য ম্যাচের ফল নির্ধারিত হলো টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতল চিলি। আর বিশ্বকাপসহ টানা তিনটি ফাইনালে উঠেও শিরোপাটা দূরের ব্যাপারই হয়ে রইল আর্জেন্টিনার জন্য।

আর্জেন্টিনার গোলকিপার সার্জিও রোমেরো প্রথম শট ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে যে সুবিধা এনে দিয়েছিলেন, মেসির নেওয়া আর্জেন্টিনার প্রথম শটের ব্যর্থতাতেই তা শেষ হয়ে গেল। হাভিয়ের মাচেরানো আর্জেন্টিনাকে আবারও এগিয়ে দিলেও পরে বিলিয়ার শট ঠেকালেন ব্রাভো। চার শটের দুটিতেই ব্যর্থ আর্জেন্টিনার তাই শেষ শটটি নেওয়ার দরকারই পড়ল না। নিলেও ফল হতো বড়জোর ৪-৩। তার আগেই তো চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত! চ্যাম্পিয়ন চিলিই।

২৩ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িতই হলো। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে মায়ের কোলে ছোট্ট শিশুর হু হু কান্না। মা, হয়তো তাঁর সেই শৈশবে আর্জেন্টিনাকে কিছু জিততে দেখেছেন। নিজের মতো ছেলেকে আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা জার্সি পরিয়ে এনেছিলেন এই আশায়, ছেলেটা বুঝতে শেখার সময়েই তো প্রিয় দলকে ট্রফি নিয়ে উত্সব করতে দেখবে। সেই ছেলেটা, চার কি পাঁচ বছর বয়স হবে, সে তখন হু হু কাঁদছে। এ কান্না খেলনা না পাওয়ার কান্না নয়। এ কান্না অন্য এক আবেগের। মা সান্ত্বনা দেবেন কী, তিনি যে কাঁদছেন আরও বেশি।

আর মেসি? ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে থাকাই বুঝি যাঁর নিয়তি। চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। পাঁচটি ব্যালন ডি’অর। কিন্তু? বাকি সব পাওয়াই যে হয়ে উঠছে অর্থহীন। মাঠে মেসিকে এত কাঁদতে কেউ দেখেনি! ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে না। গত কোপা আমেরিকাতেও না। মেসিকে কে দেবে সান্ত্বনা। আর্জেন্টিনা দলের হয়ে কাঁদছে না কে! চিলিরই এক দুজনকে এগিয়ে আসতে হলো বুক পেতে দিতে, মাঠে এতক্ষণ যাদের বিপক্ষে তারা লড়েছে জান বাজি রেখে!

ম্যাচের শেষটার মতো ম্যাচের ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের গল্পটাও আগের মতোই। গত দুটি ফাইনালের মতো এবারও গঞ্জালো হিগুয়েইন শিশুর মতো ভুল করলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির রক্ষণের ভুল পাস থেকে পাওয়া বলটায় গোলকিপার ম্যানুয়েল নয়্যারকে একা পেয়েও কেন গোল করতে পারেননি, এটা এখনো রহস্য হয়ে আছে আর্জেন্টিনার কাছে। হিগুয়েইন যেন দুই বছর আগের সেই অমার্জনীয় ভুলেরই ‘ডেমো’ করে দেখালেন। চিলির ম্যারি মেডালের ভুল পাসে বল এল পায়ে। সামনে শুধু ব্রাভো, আর ফাঁকা পুরো জাল। হিগুয়েইন যেন বোঝাতে চাইলেন, দেখো, আমি এভাবেই ফাইনালে মিস করি!

কী এক আলতো চিপ করলেন, যেটা তাঁর শক্তির জায়গাই নয়। জোরালো শটের বদলে সেই চিপ করতে গিয়েই শেষ। ফাইনালের মতো ম্যাচে দুই দলই যেখানে ভীষণ সতর্ক হয়ে খেলে, গোলের সম্ভাবনা যেখানে তৈরি হয়ে কদাচ, সেখানে হাফ চান্সগুলো মুঠোয় পুরে নিতে হয়। হিগুয়েইনে ফুল চান্সও কাজে লাগাতে ব্যর্থ।

ফাইনাল বলেই আজ দুই দলই সতর্ক হয়ে খেলে। ফাইনালে উঠে আসার পথে দুই দল মিলে ৩৪ গোল করেছে। কিন্তু এবার যেন গোল করাতেই দুই দলের ছিল অনীহা। ম্যাচটি আরও বিচ্ছিরি হয়ে গেল রেফারির নির্বুদ্ধিতায়। প্রথমে ২৮ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে বের করে দিলেন চিলির দিয়াজকে। দিয়াজ মেসিকে ফাউলই করেছিলেন। অন্যায়ভাবে ব্লক করেছেন। কিন্তু আগেই একবার হলুদ কার্ড দেখা খেলোয়াড়কে এই ফাউলের কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো একটু বাড়াবাড়িই।

নিজের ভুল হয়তো রেফারি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু সেটা শুধরে নিতে করে বসলেন আরও বড় ভুল! এবার হলুদ কার্ডই হয় না এমন এক নিরীহ ফাউলের জন্য মার্কোস রোহোকে সরাসরি দেখিয়ে দিলেন লাল কার্ড। প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে আর্জেন্টিনা হারিয়ে ফেলল তাদের ফুল ব্যাক। ক্ষতিটা আর্জেন্টিনারই হলো বেশি। রোহো রক্ষণের পাশাপাশি বাঁ প্রান্তে দিয়ে উঠে আক্রমণে সহায়তা করেন। ফিউনেস মরি সেটা করতেই পারলেন না। আর্জেন্টিনার আক্রমণ হয়ে গেল একেবারেই ভোঁতা।

হিগুয়েইনকে তুলে নেওয়ার পর তবু ধার বাড়ল। ম্যাচের সবচেয়ে পরিষ্কার গোল সম্ভাবনা তৈরি করলেন বদলি হিসেবে নামা আগুয়েরো। ম্যাচের তখন ৮৪ মিনিট। মেসির ফ্রি কিক দুর্দান্ত হেডে জালের দিকে পাঠালেন আগুয়েরো। ক্রসবার ঘেঁষে বল ঢুকে যাচ্ছে জালে। ব্রাভো, পৃথিবীর সাহসীতম গোলরক্ষক, কী অবিশ্বাস্যভাবেই না ঠেকিয়ে দিলেন সেটি! আর ম্যাচ যখন টাইব্রেকারে, স্বাভাবিকভাবেই ব্রাভোর চিলিই তো এগিয়ে থাকে মানসিকভাবেই।

শুধু ব্রাভোর উপস্থিতিই একমাত্র কারণ নয়। গতবারের টাইব্রেকারের হারের মানসিক ধাক্কাটাও যেন চেপে বসেছিল আর্জেন্টিনাকে।

এই পরিস্থিতি বদলাতে যা করতে হলো, রোমেরো তা-ই করলেন। চিলির সবচেয়ে নিখুঁত শটের অধিকারী ভিদাল নিতে এলেন টাইব্রেকারের প্রথম শট। ডানে জোরালো কিকও নিলেন। কিন্তু দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে সেভ করে দিলেন রোমেরো। এগিয়ে থেকেই টাইব্রেকারের লটারিতে নামল আর্জেন্টিনা।

 

আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শটটি নিতে এলেন মেসি। গতবার ফাইনালেও প্রথম শট নিয়েছিলেন। অধিন

23 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here