ফ্রিল্যান্সরদের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশি সালাউদ্দিন

23
356
ফ্রিল্যান্সরদের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশি সালাউদ্দিন
সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সার ডটকম তাদের শীর্ষ স্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই  তালিকায় সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশি সালাউদ্দিন ইশাদের নাম। বর্তমানে তিনি একজন খ্যাতনামা ফ্রিল্যান্সার। আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার সংগঠন ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মাধ্যমে তার জীবনে চলে আসে ব্যাপক সফলতা। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে বর্তমানে ২৫ মিলিয়ন সদস্য রয়েছে যারা এই সাইট থেকে নিয়মিত কাজ করছেন। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে আজ একটি গৌরবময় অবস্থানে পৌঁছেছেন। যারা ফ্রিল্যান্সার কাজে নিজেকে জড়াতে চান তারা ইশাদের দেওয়া কিছু কৌশল মেনে চলতে পারেন। ইশাদের সফলতা ও নতুনদের জন্য দেওয়া কিছু কৌশল নিয়ে লিখেছেন মাহবুব শরীফ
বাংলাদেশের ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইশাদ সালাউদ্দিন। ২০০৮ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি, ২০১২ সালে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি ও একই কলেজ থেকে তিনি পরবর্তীতে বিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কর্মজীবনের সূচনা হয় একটি অ্যাড ফার্মে চাকরির মধ্যদিয়ে। সেখানে তিনি অন্যের করা কাজ দেখে দেখে কিছু কৌশল আয়ত্ত করেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে গ্রাফিক্স কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। ২০০৮ সালে তিনি ক্রিয়েটিভ আইটিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালে তার আর এক ধাপ পদোন্নতি হয়। এ হিসেবে তিনি গত আট বছর ধরে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি একটি প্রজেক্টের কাজ করছেন। প্রতিবারই কাজে তিনি সঠিক সফলতা লাভ করেন। তিনি এই প্রকল্পকে শিল্পীর মতো গড়ে তোলার সম্ভাবনাও দেখছেন।
অন্যদের মতো ইশাদও এই কাজটিকে নবাগত হিসেবেই শুরু করেছিলেন যা, গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের শেখার জন্য অগ্রগণ্য হিসেবে কাজ করবে এমন কিছু আইডিয়ার কথা বলেন তিনি। যখন তিনি এই কাজ শুরু করেন তখন তার কাজের প্রতি যে বিশ্বাস তাতে ফাটল ধরতে দেয়নি। তিনি নিখুঁত কাজের জন্য অগণিত ঘণ্টা সময় ব্যয় করে সফলতা অর্জন করেছেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইনে তার দক্ষতা অর্জন করার পর, ইশাদ এই প্রকল্পটিতে কাজ করার জন্য অনুসন্ধান শুরু করেন। তিনি প্রথমে একটি স্বল্পমেয়াদী কোর্সে ভর্তি হন  যা তাকে অনলাইন ফ্রিল্যান্স কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ঠিক তখন থেকেই তিনি ফ্রিল্যান্সার কাজে পার্ট টাইমার হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
সফলতার পিছনে
ইশাদের পরিবারকে সহায়তা বা সাহায্য করার জন্য অনেক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। যখন তিনি পুরো টাইম কাজ করতেন তখন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করে পরে বাসায় ফিরতেন। বাসায় ফিরে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমিয়ে পার্টটাইম কাজের জন্য জেগে থাকতেন। প্রায় এক বছর ধরে এই রুটিন মোতাবেক চলেছেন তিনি। ইশাদের টার্গেট ছিল- তিনি নিয়মিত যে চাকরিটি করতেন পার্টটাইম কাজ করে তার চেয়ে বেশি উপার্জন করা।
ইশাদ বলেন,‘আমি আমার নিয়মিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্স কাজে সময় দিতে শুরু করলাম। যেহেতু আমার দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ছিল তাই আমি এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিত ছিলাম’। যখন ইশাদ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সম্পূর্ণ কাজ শুরু করেন, তখন তিনি তার প্রজেক্টের কাজগুলোর প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। একবার একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করেন সেখানে তিনি একটি কাজ খুব দ্রুত শেষ করে জমাদিয়ে ছিলেন। শেষের তিন বছর তিনি অভিজাত শ্রেণির ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দাপটের সঙ্গে কাজ করেন। বর্তমানেও তিনি নি:সন্দেহে অভিজাত শ্রেণির ফ্রিল্যান্সার।
তিনি বর্তমানে  ফ্রিল্যান্সার ডটকমের  একজন সদস্যও বটে যে সংগঠনটি শুধুমাত্র বিশ্বের বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সারদের সমন্বয়ে গঠিত। এই সংগঠনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৫ মিলিয়ন। গত একবছর আগে তার বাবার অবসর গ্রহণের পর তার পরিবারের জন্য ইশাদের সাহায্য একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠে। তিনি তখন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন কাজের প্রতি। কাজ আরও বাড়িয়ে দেন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু করেন।
সময় ও বিভিন্ন জটিলতা থাকার পরও ইশাদ তার কাজের প্রতি ভালোবাসা কমাননি এবং তার করা কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নেন। পরিবারের প্রতিও ভালোবাসার কমতি ছিল না তার। ইশাদ তার ফ্যিল্যান্সার কাজের মধ্যে সকল প্রকার কঠিন পরিশ্রমই করেছেন। বর্তমানে তিনি তার পরিবারের চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ সক্ষম। এমনকি তার ছোট বোনের স্কুলের খরচও তিনিই বহন করেন। তিনি তার বাসায় স্মার্টফোন, গেমিং এর জন্য গেমিং কম্পিউটার ও বাসার যাবতীয় আসবাবপত্র জুটিয়েছেন। সুতরাং, ইশাদ আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছেন!
শীর্ষে পৌঁছতে
ফ্রিল্যান্সাররা ইশাদের দুই একটি সফলতা সম্পর্কে জানেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফলতা পেতে হলে যা করতে হবে সে সম্পর্কে ইশাদের পরামর্শ হলো-
একটি পেশাদারিত্ব তথ্য (কভার লেটার)
ইশাদ বিশ্বাস করে চাকরি প্রজেক্ট দাতারা তার দেওয়া এই তথ্যের উপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ব্যাকগ্রাউন্ড ও প্রকল্প সম্পর্কে ফ্রিল্যান্সারের বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকা উচিত। প্রজেক্ট দাতারা ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগের দিকে একটি প্রবণতা থাকে তা হলো- কভার লেটারে আপনি প্রজেক্ট সম্পর্কে  কী কী জানতে চেয়ে তাদের চাহিদার কাছাকাছি চলে গেছেন। এই প্রসঙ্গে ইশাদ বলেন,‘প্রজেক্ট দাতারা যখন কোনো কাজের জন্য অফার দিয়ে থাকেন তখন কোনো আগ্রহী যদি সেই কাজটি পেতে চায় তাহলে তাকে প্রথমে সেই কাজটি সম্পর্কে ভালো কারে বুঝতে হবে। কভার লেটার দেওয়ার সময় প্রথম  দুই থেকে তিন লাইনের মধ্যে তার ঐ কাজ সম্পর্কে আকর্ষণীয় কিছু প্রশ্ন তুলে ধরতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে যে, আপনি ঐ কাজটির প্রতি আগ্রহী এবং আপনি কাজটি করতে পারবেন।’ তিনি  আরও বলেন,‘প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় কভার লেটারে একই ধাঁচের লেখা থাকে অর্থাৎ অন্যের দেওয়া একটি কভার লেটার থেকে কপি পেস্ট করে পোস্ট দেয়। এই ধরনের অভ্যাসকে পরিহার করা উচিত। প্রজেক্ট দাতারা এই বিষয়গুলো খুব আমলের সঙ্গে লক্ষ্য করেন।’
আপনার আপডেট পোর্টফলিও দিন
প্রজেক্ট দাতাদের  মধ্য থেকে হয়তো একজনে আগ্রহী আপনার পূর্বের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে আপনার আপডেট করা একটি পোর্টফলিও জমাদিন অথবা আপনার ফ্রিল্যান্স কাজের একটি লিংক দিন। স্বেচ্ছায় প্রদান করা এই প্রচেষ্টায় আপনাকে অনেক দূর দিয়ে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে ইশাদ বলেন,‘ আপনি হয়তো অনেক ডিজাইন বা গ্রাফিক্সের কাজ করেছেন। প্রজেক্টদাতা আপনার সম্পর্কে অনলাইন থেকেই জানছে তাই আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটা কাজের লিংক বা ছবি দিতে পারেন। এতে আপনার প্রতি তাদের ধারনা সৃষ্টি হবে এবং কাজ প্রজেক্ট প্রাপ্তিতে অনেক সহায়তা হবে।’
প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
প্রজেক্ট দাতারা যখন প্রজেক্টের জন্য প্রস্তাব দেন তখন তা  হয় পেশাদারিত্ব ও যোগাযোগ থেকে। আপনি প্রকল্পটি গ্রহণ করেন আর না-ই করেন, প্রজেক্টদাতাদের  সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ইশাদ তার এই তিনটি মন্ত্র দিয়েই কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করছেন যা, অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তার স্বপ্ন ছিল তিন একদিন নামকরা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবেন। গৌরবের সঙ্গে তিনি একজন ফ্রিল্যান্সারও। তিনি তার মনকে এভাবেই সেট করে নিয়েছেন যে তার স্বপ্নপূরণের সব কাজ করতে তিনি বাধ্য।
সালাউদ্দিন ইশাদ বলেন,‘ফ্রিল্যান্সার কাজ করে আমি আমার জীবনকে আরও ভালো করে বদলাব এবং আমি অন্যদেরকে এই খাতে কাজ করার জন্য পরামর্শ উৎসাহিত করি।’

23 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here