ইসলামই প্রগতিশীলতা

24
314

আধুনিককালে কিছু মুক্তচিন্তার মানুষ মন্তব্য করেন ইসলামী জীবন মানে ধর্মান্ধতা, বর্বর যুগে এবং তাঁবুর যুগে ফিরে যাওয়া, জীবনকে সামনে না নিয়ে পেছনের দিকে টেনে নেয়া। তবে কোন বিচারে বা যুক্তিতে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এই সন্দেহ তা স্পষ্ট নয়। ইসলাম সম্পর্কে তারা কতটা জ্ঞান রাখেন তা-ও পরীক্ষিত নয়। ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকলেও এই বিষয়টি বুঝা যায় যে, ইসলাম সভ্যতার উন্নতি ও প্রগতির পথে কখনো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি।

ইসলামের বাণী গ্রহণের দায়িত্ব প্রথম যে জাতির ওপর বর্তেছিল তারা বেশির ভাগই ছিল যুদ্ধবাজ যাযাবর এবং অপসংস্কৃতির আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা একটি জাতি। সহজাত কারণেই তারা ছিল নির্মম ও কঠোর প্রকৃতির। ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো এসব উগ্র ও পাষাণ প্রকৃতির লোকেরা ইসলামের প্রভাবে একটি মানবিক গুণসম্পন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছিল। তারা কেবল নিজেরাই সুপথপ্রাপ্ত হয়নি বরং মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালনা করার নেতৃত্বও লাভ করেছিল। মানুষের জন্য একটি উন্নত সভ্যতা তৈরি এবং উন্নত সভ্যতার পরিচালনাকারী মানুষের আত্মার বিকাশ সাধন ছিল ইসলামের অলৌকিক ক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম কেবল আত্মিক উন্নতি সাধন করেই ক্ষান্ত হয়নি। সভ্যতার অগ্রগতি, বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার, যেগুলোকে বর্তমানে প্রগতির সোপান বলে মনে করা হয়, তথ্যপ্রযুক্তির যে অগ্রসরতা মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং যাকে অনেকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করেন, ইসলাম তার সবটা গ্রহণ করেছে, ব্যবহার করেছে জীবনের সাবলীল ছন্দে। মুসলিমরা সব দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, এমনকি ইসলাম সেই সভ্যতাকে বিলুপ্ত বা প্রভাবিত করেনি- যা ইসলামের মূলনীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক ছিল। ভারতবর্ষে মুসলিমরা শত শত বর্ষব্যাপী শাসন করার পরও কখনো অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইসলাম সব সময়ে গভীর ও একনিষ্ঠ প্রেরণা জোগায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলছেন, ‘তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টিকর্মে কোনো ধরনের অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি?’ (সূরা. মূলক : ১১)। সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সব মানুষের প্রতি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন মানুষকে বারবার অনুসন্ধান করতে বলছে। মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অনুপ্রেরণা তৈরির জন্য এই আয়াতটিই যথেষ্ট।

ইসলাম মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয় এমন কোনো কিছুর বিরোধিতা করে না। ইসলাম সভ্যতার মহৎ অবদানগুলো গ্রহণ করে আর ক্ষতিকর দিকগুলো পরিহার করে। সভ্যতার নতুন নতুন আবিষ্কার, নবপ্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগের নিত্যনতুন পন্থা- এসব কিছুই যতক্ষণ পর্যন্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ ইসলাম তার বিরোধিতা করে না। জোয়ারের সাথে যেমন পলি আসে, তেমনি আসে রোগজীবাণু। একইভাবে আধুনিক সভ্যতার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের বিভিন্ন উপাদানের সাথে আসে এমন কিছু উপাদান যা সমাজে বিশৃঙ্খলা, অনৈতিকতা ছড়ায়। যেমন : মদপান।

ইসলাম এগুলোকে প্রতিরোধ করে, প্রতিকার করে আক্রান্তের। ইসলাম সভ্যতায় অনুপ্রবেশকারী রোগজীবাণুর বিষাক্ত ছোবল থেকে মানবতাকে রক্ষার জন্য যথাসম্ভব কর্মপন্থা গ্রহণ করতে অনুসারীদের অনুপ্রেরণা জোগায়। কাজেই যারা প্রগতিশীলতার নামে ইসলামের বিরোধিতা করেন তারা আসলে প্রগতিশীল নাকি ইসলামের বিরোধিতার নামে নিজেকে প্রচারের একটি সাইনবোর্ড তৈরি করেন সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

– See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/96773#sthash.NTc1Dyul.dpuf

24 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here