৬৮—শুধু একটি সংখ্যা নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক রূপকথার শিরোনাম। এ পর্যন্ত উঠে আসা সংগ্রামের অতীত, আজকের সাফল্য, আগামী রঙিন ভবিষ্যতের হাতছানি—সবই লুকিয়ে আছে এই ‘ছয় আর আট’-এর মধ্যে। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়কেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁক বদলের বিন্দু ধরা হয়। আর সেই আইসিসির ফাইনালে বাংলাদেশ যেতে পেরেছিল হল্যান্ডের বিপক্ষে আকরাম খান ৬৮ রানের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছিলেন বলেই।
সে ম্যাচে মাত্র ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। ডাচ পেসার লেফেব্রের তোপে রীতিমতো কাঁপছিল দল। সেদিন অধিনায়ক আকরাম এভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই না করলে, কে জানে, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসই হয়তো অন্য রকমভাবে লেখা হতো! কে জানে, আজকের এই বাংলাদেশকে পেতে হয়তো আরও আরও কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হতো!
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির সেই খান পরিবারের সঙ্গে ডাচ যোগসূত্র কী আছে কে জানে। চাচা আকরাম খানের সেই উত্তরসূরি আজও বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টিতে তামিমের গড় যেখানে ২১.৯০, হল্যান্ডের বিপক্ষে সেটি কিনা ২০২! হল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। তিনটিতেই ফিফটি। আরও স্পষ্ট করে বললে, তামিমের ক্যারিয়ারের চার ফিফটির তিনটিই ‘টোটাল ফুটবল’-এর দেশের বিপক্ষে। কী বলবেন এই পারফরম্যান্সকে? ‘টোটাল ব্যাটিং’!
২০১২ সালে হেগে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রথমটিতে অপরাজিত ৬৯ করার পর পরের ম্যাচে ৫০। এতপর গতকাল অপরাজিত ৮৩। তিন ম্যাচে ২০২ রান। দুটিতে অপরাজিত ছিলেন বলে গড়ও ২০২!
তুলনাটি আসতই। অতীত ইতিহাসের কারণে। এলও। তবে তামিম কিছুতেই চাচার সেই ৬৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে তুলনায় যেতে রাজি নন। সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন ধরনের ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক তামিম আরও অনেক অসাধারণ ইনিংস খেলবেন। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে কেউ ট্রিপল সেঞ্চুরিও এনে দেবে। তবু আন্তর্জাতিক ইনিংসের স্বীকৃতি না-পাওয়া সেই ৬৮ রানের ইনিংসটি আলাদা গৌরবেই ভাস্বর হয়ে থাকবে।
তামিম বললেন, ‘আকরাম চাচা যে ইনিংসটি খেলেছিলেন, বাকি সব ইনিংসের চেয়ে সেটি সব সময় এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ, সেই ইনিংসটির কথা যারা জানে, সবাই বোঝে সেটি আমাদের জন্য কত বড় ছিল।’ সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু তিনি যে টি-টোয়েন্টিতে হল্যান্ডকে পেলেই ফিফটি করবেন বলে পণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে! এখানেও তামিমের উত্তর, ‘আমার ক্ষেত্রে কোন দলের বিপক্ষে খেলছি সেটা বড় কথা নয়। আমি ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও রান করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা, ওদের বিপক্ষে আগের দুই ম্যাচেই দুটি ফিফটি করেছিলাম, সেটিও মনে ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল, বোধ হয় একটা ফিফটি করেছি।’
আগামীকাল প্রতিপক্ষ আরেক ‘ল্যান্ড’—আয়ারল্যান্ড। দেখা যাক, এবার কী করেন তামিম।