চুইংগাম যে মানুষ এত মজা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিবাতে পারে, তা এই রাশিয়ান মেয়েটাকে না দেখলে হয়তো অজানাই থাকত।
জার্মান ওই বয়স্ক নারী আসার পর থেকেই দেখছি একটা বই খুলে এমনভাবে পড়ছেন তাতে মনে হলো, আজ বিমান উড়াল না দিলেও তাঁর কিছু যায় বা আসে না। পাশে তাঁর কিশোরী কন্যা নাকি নাতনি বোঝার উপায় নেই, সে তাঁর আইফোনের ওপর একরকম অত্যাচার চালাচ্ছে। সেই শুরু থেকেই দেখছি। আমার এক পাশে বসে থাকা জাপানি ছেলেটা তার চশমা পরা ঘুম ঘুম চেহারায় একটু পরপর ঘড়ি দেখছে। রাজ্যের বিরক্তি তার পাশে বসে থাকা ঘানার ওই মোটাসোটা লোকটার চেহারায়! এই যখন অবস্থা, তখন হন্তদন্ত হয়ে মাঝবয়সী আরেক নারী কী জানি বলতে বলতে আমার পাশে এসে বসলেন। তারপর তিনি কী বলছিলেন, তা বুঝতে না পারলেও একটা শব্দ বুঝলাম। ‘হাংরি’ মানে ক্ষুধার্ত। আমি তো অবাক, তাড়াহুড়ো করে খুব ভোরে বাসা থেকে না খেয়ে বের হয়েছি, অনেক ক্ষুধা লেগেছে! এই নারী বুঝতে পারছেন ভেবে চেহারা যথাসম্ভব মলিন করে উনার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমি আসলেই ক্ষুধার্ত! মনে মনে ভাবলাম, আহা…আজ বুঝলাম মেয়েরা মায়ের জাত, কেমন চেহারা দেখেই বুঝে গেছে আমার যে খিদে লেগেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই উনার হাতে দেখা টিকিট দেখিয়ে যখন আবার বলে যাচ্ছিলেন ‘হাংরি’ ‘হাংরি’। আবিষ্কার করলাম, আমার খিদে লেগেছে কি লাগেনি, তাতে উনি মোটেও চিন্তিত নন। উনি চিন্তায় আছেন ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য! তিনি ঠিকঠাক জায়গায় এসেছেন কি না, তাই হয়তো জানতে চাইছেন হাঙ্গেরির ভাষায়!
মেহেদী
মিউনিখ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স, জার্মানি