ছোট মাথায় বড় প্রযুক্তি ভাবনা
ভারী চশমাটা যেন আর চোখে থাকতে চাইছে না। কিছুক্ষণ পরপর গুরুগম্ভীর ভঙ্গিতে সেটাই ঠিক করছে মেয়েটি। চশমা বিরক্ত করলেও মোটা কাচের ভেতরে চোখ দুটি তার চকচক করছে। যেন খুব বুঝছে এমনই সমঝদার ভঙ্গিতে দুই বেণি দুলিয়ে একের পর এক টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কথা বলছে, মাথা নাড়ছে আবার এগিয়ে যাচ্ছে। বোঝা গেল সঙ্গে থাকা বাবাকে অনুকরণ করছে ছোট্ট মেয়েটা। নাম জানতে চাইলে ‘রিনা’র বেশি যেন আর শব্দ কিংবা সময় খরচ করতে চাইল না। রিনা এসেছিল এক বিজ্ঞান মেলায়।
৮ এপ্রিল রাজধানীর সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প প্রদর্শনী ‘সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন ফেয়ার ফর স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ (এসআইএফএসবি) ২০১৬’ অনুষ্ঠিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ারের (ইন্টেল আইএসইএফ) অধিভুক্ত সাইফেয়ারবিডির উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী সব প্রকল্প প্রদর্শন করে। এই মেলায় দেখানো তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কিছু প্রকল্প নিয়ে এই প্রতিবেদন।
রোবোটিক হ্যান্ড
রোবোটিক হাত তৈরিতে উন্নত বিশ্বেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, সেখানে দশম শ্রেণির চার শিক্ষার্থী স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে নিজেদের মতো করে তৈরি করেছে এক রোবটিক বাহু। লাবিব খান, মো. নাহিদ খান, সামির আহমেদ ও মো. রাইয়ান খান চৌধুরী সবাই রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরি’স উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ছে। আরডুইনো বোর্ড আর ফ্লেক্স সেন্সর নিয়ে তাদের প্রধান কাজ। চার মাসের চেষ্টায় তারা যা দাঁড় করিয়েছে, তার দুটি অংশ। এক অংশে সেন্সরসহ এক দস্তানা হাতে পরতে হয়। এরপর সে হাতের নড়াচড়া অনুযায়ী রোবটিক বাহুটি নড়াচড়া করে। অর্থাৎ, যেখানে রক্ত-মাংসের হাত পৌঁছানো সম্ভব নয়, কিন্তু সে রকম হাতের দক্ষতা প্রয়োজন, সেখানে এটি দিয়ে কাজ করা সম্ভব।
মাইন্ড ৪
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র কাজী মাশরুর হক ‘মাইন্ড ৪’ নামের প্রকল্প দেখিয়েছে। মূলত ড্রোনে নতুন যন্ত্রাংশ যোগ করে আবহাওয়া, তাপ, চাপ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য দেবে তার এই প্রকল্প। সে এর আগে ড্রোন বানিয়েছে বলে জানাল।
রোবট লার্নিং
মনে করুন আপনি কাউকে মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। সেটির ভিডিও ধারণ করে কিংবা তা যদি সরাসরি রোবট দেখে, তবে ভিডিও থেকে শিক্ষা নিয়ে তা অনুকরণ করতে পারবে। রোবটকে শিক্ষা দেওয়ার এই প্রযুক্তি বানিয়েছে রাজধানীর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শরিফুল ইসলাম এবং সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শায়েক মো. শিথিল। দুজনেই একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। প্রকল্পটির নাম দিয়েছে ‘রোবট লার্নিং: থ্রিডি অ্যাকশনস বাই ওয়াচিং টুডি ইউটিউব ভিডিওস।
ভূমিকম্পে নিরাপত্তাব্যবস্থা
ভূমিকম্পে নিরাপত্তাব্যবস্থা নামের প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. আব্দুর রহমান। সেন্সরে কম্পন লিপিবদ্ধ করতে থাকে একটি যন্ত্র। কম্পনের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার ঊর্ধ্বে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস পানির মতো সংযোগগুলো বন্ধ করে দেবে আব্দুর রহমানের তৈরি এই ব্যবস্থায়।
এনি সারফেস ওয়াকিং রোবট
মিরপুর বাংলা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির তিন ছাত্রী এমন এক রোবট তৈরি করেছে, যা যেকোনো পৃষ্ঠে চলতে পারবে। আরিফা আক্তার, রুমি আক্তার ও খাদিজা আক্তার রোবটটি নিয়ে আরও কাজ করা দরকার বলে জানালেন। দুর্গম অঞ্চল বিশেষ করে যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব না, সেখানে এই রোবটটি পাঠানো যেতে পারে।
স্মার্ট রেলওয়ে ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম
সাম্প্রতিক সময়ের রেল দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তোলে সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মুস্তাকিম আবতাহি ও সাকিব হাসানকে। রেলপথ নিরাপদ করার তাদের প্রকল্প স্মার্ট রেলওয়ে ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেমের তিনটি ধাপ। সাকিব জানাল, প্রথমে এটি পরীক্ষা করে দেখবে রেললাইনে কোথাও কোনো বিচ্ছিন্নতা আছে কি না। থাকলে সবচেয়ে কাছের স্টেশনে তা জানিয়ে দেওয়া হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। রেললাইনের ওপর কোনো যানবাহন যদি আটকে যায় তবে দূর থেকেই সংকেত দিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এতে।
গোল্ডবার্গ মোবাইল এই বিজ্ঞান মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এ ছাড়া আয়োজনে সহযোগিতা করেছে অ্যাডক্লাব, সার্কেলস ও কনসিটো পিআর।