ধনী হওয়ার পথে সবাই দৌড়াতে চান। নিজের প্রচেষ্টায় ধনী হয়েছেন যারা তারা বিশেষ কিছু অভ্যাস, বিশ্বাস বা বৈশিষ্ট্য ধারণ করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এমন কিছু অভ্যাসের কথা তুলে ধরেছেন যার কারণে ধনী হওয়ার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না।
১. সাধ্যের বাইরে কিছু কেনার অভ্যাস অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলবে আপনাকে। যদি বেতন বা ব্যবসায় লাভ বৃদ্ধি পায়, তবুও বহু হিসাব করে বাড়তি খরচ করা দরকার। আয় বৃদ্ধি মানেই তাৎক্ষণিকভাবে জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি নয়। মিলিয়নিয়ার গ্রান্ট কার্ডোন জানান, আমি এখনো একাটা সাধারণ গাড়ি ব্যবহার করি। কর্ম আদর্শটাই বড় কথা যা আপনার জীবনযাপন গড়ে দেবে।
২. অনেকে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। মনে করেন, ধনী হওয়ার যোগ্যতা তার নেই। অথবা এটা তিনি আশা করতে পারেন না। পুঁজিবাদী সমাজে যে কেউ ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন বলে মনে করেন মিলিয়নিয়ার স্টিভ সিবোল্ড। কাজেই আমি কেন ধনী হবো না?- এই প্রশ্নটি বহুদূর এগিয়ে নেবে।
৩. আয়ের একটি উৎসের ওপর নির্ভর করে থাকাটাও সম্পদশালী হওয়ার পথকে সরু করে দেয়। ধনীদের নিয়ে গবেষণা করেন থমাস সি কোরলে। তার মতে, বড়লোকরা আয়ের নানা উৎস সৃষ্টি করেন। ধনীদের ৬৫ শতাংশের উপার্জনের কমপক্ষে ৩টি উৎস রয়েছে। যার মূল ব্যবসা রিয়েল এস্টেট, তিনি পাশাপাশি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ বা অন্য একটি ব্যবসাও করতে পারেন।
৪. যা জানেন ও শিখেছেন তা নিয়ে পড়ে থাকা ধনীদের স্বভাব নয়। যারা ক্রমাগত ধনী হয়ে চলেছেন তারা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু না কিছু শিখে চলেছেন। আত্মোন্নয়ের চেষ্টা ধনীদের মূল লক্ষ্য। যত জানা যাবে, এগিয়ে যাওয়ার পথ ততই উন্মুক্ত হবে। নতুন কিছু শেখা ধনীদের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ধনী উদ্যোক্তা ড্যানিয়েল অ্যালাইয়ের মতে, এ জন্যে নিজের চেষ্টায় শিখতে হবে। অন্য কারো ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
৫. ভুল মানুষের চারপাশে থেকে কোনো লাভ নেই, বরং ক্ষতি। সিবোল্ডের মতে, ধনীরা এমন মানুষের চারপাশে থাকেন বা এমন মানুষদের রাখেন যারা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পথ চলছেন। উদ্দীপ্ত মানুষের সঙ্গে থাকলে নিজেরও উদ্দীপনার অভাব ঘটে না।
৬. অবসর সময়ে কাজ থেকে দূরে থাকেন সবাই। এটা প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনার অন্যতম উপায়। কিন্তু যারা ধনী, তারা এ সময় কেবলমাত্র বিনোদনের কাজেই ব্যয় করেন না। বিনোদম এমন উপায়েও হতে পারে যা আপনাকে আরো উন্নত করে। ধনীদের ৯০ শতাংশ অবসরে বই পড়েন এবং টিভি দেখেন। তবে প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখেন না তারা।
৭. বহু দম্পতি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলাপ করেন না। এতে এক সময় দুজনের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থ বিষয়ে নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঙ্গী-সঙ্গিনীর কাছে খোলাসা না করলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মন কেরে অ্যালই।
৮. তরুণ বয়স সঞ্চয়ের আদর্শ সশয়। উপার্জন যাই হোক না কেন, সঞ্চয় করতে হয়। সম্পদ তাই যা আপনি নিজের কাছে রেখেছেন। ধনী হতে হলে আগে নিজেকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। সঞ্চয়কৃত অর্থ নিরাপদে রাখতে হবে। এক সময় দেখবেন, এটাই আপনাকে ধনী করে দিয়েছে।
৯. আবার খুব বেশি সঞ্চয়ের দিকে মন দিলেও হিতে বিপরীত হয়। কারণ এ কাজে খুব বেশি আগ্রহ থাকলে উপার্জনের প্রতি উদাসীনতা চলে আসে। সিবোল্ডের মতে, ধনীরা উপার্জন করতে ঝুঁকি নেন। আর সঞ্চয়টা হিসাবমতোই থাকে।
১০. কেবল অর্থের জন্যে শ্রম দিয়ে থাকেন, তবে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আসবে না। কিন্তু যদি অর্থ আপনার জন্যে প্রবাহিত হয় তবে সব মিলবে। আপনার হাতে আসবে নিয়ন্ত্রণ। শ্রমের বিনিময়ে কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে সহজ। এই শিক্ষাই আমরা পেয়ে থাকি। কিন্তু যে অর্থ আপনার আছে তা যদি নিজের জন্যে ক্রিয়াশীল হয়, তবেই আপনি ধনী হতে পারবেন।
১১. ঝুঁকি কেউ-ই নিতে চান না। আবার সব সময় শতভাগ নিরাপত্তার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে ঝুঁকি নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। জীবনের কিছু ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই বড় ঝুঁকি নিতে হবে। সব সময় ঝুঁকিবিহীন কাজের মাধ্যমে বড় কিছু কখনোই মিলবে না।
১২. যে কাজটি করছেন তার প্রতি ঘৃণা চলে আসলে আপনার আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সেই কাজটি করতে হবে যা আপনি আবেগের সঙ্গে করতে পারেন। কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কখনোই তার চূড়ায় ওঠা যাবে না। তাই যে কাজই করেন না কেন, তার কিছু ভালো দিক অবশ্যই রয়েছে। এগুলো খুঁজে বের করুন এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা আনুন।
১৩. একাকী সব কাজ করা যায় না। অন্যদের সহায়তা প্রয়োজন হয়। সবকিছু একা পেতে চাইলে ধনী হওয়া সম্ভব নয়। কোরলে লিখেছেন, একটা দল বা যৌথ কাজ ছাড়া সফলতা কখনোই উপভোগ করা যায় না। কাজের খাতিরে অন্যদের সঙ্গে জোট গড়া বা নিজের প্রতিষ্ঠানে আরো কর্মী আনাতেও সফলতা মিলবে। যারা অহংবোধের কারণে অন্যের সহায়তা চাইতে পারেন না, তারা কখনোই এগোতে পারেন না।
১৪. নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজে অগ্রগতি আনা যায় না। যেকোনো কাজে সফল হওয়ার ইতিবাচক মানসিকতা থাকতে হবে। যারা হতাশ হয়ে পড়েন এবং আশাবাদী থাকতে পারেন না, তারা কখনোই দ্রুতগতিতে এগোতে সক্ষম হন না। গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মানসিকতার মানুষরা সুখী হন এবং যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। নিজের প্রচেষ্টায় যারা ধনী হয়েছেন তাদের সবাই ইতিবাচক মনের অধিকারী।
১৫. ব্যর্থতা এড়িয়ে যাওয়া ধনীদের লক্ষ্য নয়। তারা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বেশিরভাগ মানুষ ধনী হওয়ার দৌড়ে ব্যর্থ হন। কারণ তারা ব্যর্থতাকে মেনে নেন, এ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন না। বিশেষজ্ঞ কিয়োসাকি তার ‘রিচ ড্যাড পোর ড্যাড’ বইয়ে লিখেছেন, মানুষের শিক্ষা অর্জনের উপায় যদি দেখেন, তবে দেখবেন ভুলের মাধ্যমেই মানুষ শিক্ষা পায়। কাজেই ধনীরা ভুল থেকে শিক্ষা নেন যার মাধ্যমে পরবর্তিতে বড় ভুল এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
Trickbdno1.com এর সাথেই থাকুন।
আমি
আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের সাকিব
আবার আসিবো ফিরে
trickbdno1.com এ আপনাদেরই ভিরে।