ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস এ জায়গা করে নিন যেভাবে

12
262
businessman showing a signboard with the word freelance written in it

ইন্টারনেটে জনপ্রিয় অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলো আউটসোর্সিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এসব সাইটকে বলা হয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস।

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস সাইটে দুই ধরনের ব্যবহারকারী থাকেন। এসব ওয়েবসাইটে যারা কাজ জমা দেন তাদেরকে বলা হয় Buyer বা Client এবং যারা এই কাজগুলো সম্পন্ন করেন তাদেরকে বলা হয় Freelancer, Provider, Seller অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে Coder। একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য একাধিক ফ্রিল্যান্সার আবেদন করেন, যাকে বলা হয় Bid করা। বিড করার সময় ফ্রিল্যান্সারেরা কাজটি কত টাকায় সম্পন্ন করতে পারবেন, তা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উল্লেখ করেন। এদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচন করতে পারেন। সাধারণত কাজের পূর্ব-অভিজ্ঞতা, টাকার পরিমাণ এবং বিড করার সময় ফ্রিল্যান্সারের মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারকে নির্বাচন করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করার পর প্রজেক্টভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট প্রজেক্টের সম্পূর্ণ টাকা ওই সাইটগুলোতে Escrow নামের একটি অ্যাকাউন্টে জমা করে দেয়, যা কাজ শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সারের পাওনা পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ফ্রিল্যান্সারকে সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি ওই সাইটে জমা দিতে হয়। এরপর ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারের কাজটি যাচাই করে দেখে। সবকিছু ঠিক থাকলে ক্লায়েন্ট তখন সাইটে একটি বাটনে ক্লিক করে কাজটি গ্রহণ করেন। সাথে সাথে এস্ক্রো থেকে অর্থ ওই সাইটে ফ্রিল্যান্সারের অ্যাকাউন্টে এসে জমা হয়। অন্যদিকে ঘণ্টা হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কমপিউটারে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে কত সময় ধরে কাজ করা হচ্ছে তার হিসাব রাখা হয়। সম্পূর্ণ সার্ভিসের জন্য ফ্রিল্যান্সারকে কাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ (১০ বা ১৫ শতাংশ) ওই সাইটকে ফি বা কমিশন হিসেবে দিতে হয়। এরপর মাস শেষে সাইটটি ফ্রিল্যান্সারের আয় করা অর্থ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তার কাছে পাঠায়।

নিচে কয়েকটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস সাইটের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

ফ্রিল্যান্সার : http://www.freelancer.com

এই সাইটে রেজিস্ট্রেশন করা মোট প্রোভাইডার বা ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৩৩ লাখের ওপর। এ পর্যন্ত সাইটটিতে দেড় লাখের ওপর প্রজেক্ট পোস্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধার ওপর ভিত্তি করে এই সাইটে চার ধরনের মেম্বারশিপ ব্যবস্থা রয়েছে : ফ্রি, বেসিক, স্ট্যান্ডার্ড এবং প্রিমিয়াম। ফ্রি এবং বেসিক মেম্বারদের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদেরকে প্রতিটি কাজের মোট আয়ের ১০ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ও প্রিমিয়াম মেম্বারদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫ ও ৩ শতাংশ ফি দিতে হয়। এ সাইটের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে বিভিন্ন ফাইল ও সার্ভিস কেনা-বেচার করার জন্য একটি মার্কেটপ্লেস রয়েছে। এই সাইটে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যা ফ্রিল্যান্সারদেরকে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।

ওডেস্ক : http://www.oDesk.com

এক সাইটের প্রোভাইডারকে একটি প্রজেক্টে প্রতিঘণ্টা কাজের জন্য অর্থ দেয়া হয়। ক্লায়েন্ট সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের জন্য এক বা একাধিক প্রোভাইডারকে নিয়োগ দেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রজেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করতে হয়। কাজ করার মুহূর্তে প্রোভাইডারের ব্যয় করা সময় নির্ধারণ করার জন্য প্রোভাইডারের কমপিউটারে একটি সফটওয়্যার চালু রাখতে হয়, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর তার ডেস্কটপের স্ক্রিনশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পাঠায়। ফলে ওই সময় তিনি কাজ করছেন কি না ক্লায়েন্ট সহজেই যাচাই করতে পারেন। এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন হিসেবে দিতে হয়। যেহেতু প্রতিঘণ্টা কাজের জন্য মূল্য পরিশোধ করা হয়, তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব। এখানে অনেক প্রজেক্ট পাওয়া যায়, যাতে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য মূল্য পরিশোধ করা হয়। ফলে যারা ঘণ্টা ধরে কাজ করতে পছন্দ করেন না, তারাও এই সাইট থেকে কাজ করতে পারবেন।

ইল্যান্স : http://www.elance.com

এই সাইটটি আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানে ১৩ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।

* গত ত্রিশ দিনে সাইটটিতে ৬৮ হাজার প্রজেক্ট এসেছে। এখানে ওডেস্কের মতো Hourly এবং Fixed price এই দুই ধরনের প্রজেক্টই পাওয়া যায়। এ সাইটেও চার ধরনের মেম্বারশিপ রয়েছে। সার্ভিস ফি হচ্ছে ৬.৭৫ থেকে ৮.৭৫ শতাংশ।

ভিওয়ার্কার : http://www.vworker.com
যদিও এই সাইটিতে নতুনদের প্রথম কাজ পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য, কিন্তু এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এই সাইটে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সাইটটির সার্ভিস চার্জ অন্যান্য সাইট থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রজেক্টের ধরনের ওপর ভিত্তি করে এখানে ৭.৫ থেকে ১৫ শতাংশ ফি দিতে হয়। এস্ক্রোতে অর্থ জমা রাখা এই সাইটে বাধ্যতামূলক। কাজ শুরুর আগে বায়ার প্রজেক্টের সম্পূর্ণ অর্থ এস্ক্রোতে জমা রাখেন, যা কাজ শেষে অর্থ পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়। নতুনদের জন্য এই সাইটে আলাদা কোনো সুবিধা নেই, ফ লে প্রথম কাজ পাওয়াটা এই সাইটে তুলনামূলকভাবে সময়সাপেক্ষ।

পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব – ফ্রিল্যান্সিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , অর্থ উত্তোলনের উপায়, ফ্রিল্যান্সিং এবং কর্মসংস্থান, যেসব দক্ষতা প্রয়োজন ইত্যাদি নিয়ে ।

12 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here