24
322
businessman showing a signboard with the word freelance written in it

ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হওয়ার পেছনে যে মৌলিক বিষয়গুলো রয়েছে তাদের মধ্যে বিড করার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। মনে করি এই কারনে যে , ফ্রিল্যান্সিং আপনার গৎবাধা কাজের মত নয়।এখানে আপনাকে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে , প্রতিযোগিতা করতে হবে ও সর্বোপরি সময়ের সাথে সাথে নিজের কোয়ালিটিকে আরও উন্নত করতে হবে। এখন , কথা হল আপনি তখনই আপনার দক্ষতা , সময়ানুবর্তিতা ও কাজের প্রতি আপনার ডেডিকেশান দেখানোর সুযোগ পাবেন শুধুমাত্র যখন আপনার হাতে কাজ থাকবে।আপনার হাতে যদি কাজ নাই থাকে তাহলে সেখানে সফলতার জন্য দরকারি অন্য ব্যাপারগুলো অর্থহীন হয়ে যায়।আর কাজ পেতে হলে ভালো বিডিং অপরিহার্য বিশেষত যখন আপনি নতুন শুরু করতে যাবেন কিংবা কোন নতুন বায়ারের সাথে কাজ করতে যাবেন। আমার আগের পোস্টের মত এখানেও আমি শুধু নিজের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার চেস্টা করব।গতানুগতিক উপদেশ আসলে কোন ভালো পদ্ধতি বলে মনে হয়না আমার কাছে।

আমি প্রথম কবে বিড করেছিলাম সেটা ঠিক মনে নেই।সম্ভবত ২০০৯ এর কোন এক সময়ে হবে।আর প্রথম কাজ পেয়েছি ২০১১ এর সেপ্টেম্বর মাসে।অর্থাৎ যদি আক্ষরিক অর্থে সময় হিসাব করেন তাহলে তাহলে দুই বছর।যদিও মাঝের এই সময়টা আমি এই ব্যাপারে মোটেও সিরিয়াস ছিলাম না।তবে মাঝে মধ্যে কোন ওডেস্ক জাতীয় কোন সাইটে গেলে হয়ত টুকটাক বিড করেছি কোন কোন সময়। তবে যেহেতু আমি লিখতে বসেছি , 🙂 ধরি আমি সেই দুই বছর জানপ্রাণ দিয়ে চেস্টা করেছি কাজ পাবার।কিন্তু কোন কাজ পাইনি।সত্যি কথা হল কোন বায়ার কখনই আমার বিডের উত্তরই দেয়নি , কাজ পাওয়া তো পরের ব্যাপার। এই প্রসঙ্গ টেনে আনার কারন হল , হয়ত আপনি বিড করেই যাচ্ছেন কাজ পাওয়ার জন্য কিন্তু বায়ারের কাছ থেকে সাড়াই পাচ্ছেন না কাজ তো দূরের কথা।কিন্তু কেন ?? উত্তরটা পেয়েছি বা বলতে পারেন ঠেকায় পড়ে বুঝেছি গত কয়েক মাসে।একটু তুলে ধরি ,

আমার মোটামুটি পার্মানেন্ট একজন বায়ারের কথা বলি।ওনার সাথে আমি বেশ কয়েকটা প্রজেক্টে কাজ করেছি।আমি যখন একটা কাজ সফলভাবে শেষ করি এরপর তার সাথে আমার পরবর্তি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা ও টাকাপয়সা ফাইনাল হয়।এরপর উনি সাইটে গিয়ে প্রজেক্ট পোস্ট করেন ও আমি সেখানে বিড করি।তার মানে টা তাহলে কি দাঁড়ালো ভাবুন তো।দেখেন , তিনি যেহেতু প্রজেক্ট পোস্ট করেছেন অবশ্যই সেখানে অন্ত:ত ১০-১৫ জন বিড করে থাকে।তিনি তাদের ভিতর অনেকের ইন্টারভিউও নেন।কিন্তু কাজ কে পাবে আর কত টাকায় পাবে সেটা কিন্তু আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে।বাকিটা লোক দেখানো। কাজেই আপনি ধরে রাখতে পারেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কারনে আপনার বিডের কোন জবাব আপনি পাচ্ছেন না।আর এটা যদি কারন না হয় অর্থাৎ বায়ার যদি নতুন কাউকে দিয়ে কাজ করাবেন বলে ঠিক করে থাকেন তাহলে আপনার চেয়ে ভালো রেটিং আছে এমন কেউ আপনার চেয়ে ভালো বিড করে বায়ারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন এটা ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।অন্ত:ত এটা ভেবে আপনি নিজের কভার লেটারকে আরো ভালো করতে চেস্টা করবেন।

মনোযোগ আকর্ষণের ব্যাপারটা কভার লেটার লেখার ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।খুব ভালো হত যদি অংকের মত কোন সূত্র থাকতো এটার :)। দুর্ভাগ্যবশত সেটা নেই কারন এখানে কোন “সায়েন্স” নেই , সোজা বাংলায় বলতে গেলে আমি বলব কভার লেটার বা বিডিং হল একটা “চাপাবাজি”।আর জানেনই তো, “চাপাবাজি” একটা শিল্প যদি ধরা না পড়েন :)।কাজেই যেহেতু , সোজাসাপ্টা কোন নিয়ম নেই যে , সেই ফরম্যাটে কভার লেটার লিখলে আপনি সাড়া পাবেনই পাবেন। তাই আমরা যেটা করতে পারি তা হল নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারি।গুড প্র্যাকটিসগুলো আলোচনা করতে পারি।অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা আশা করি এখানে তাদের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন যাতে আমাদের সবার উপকার হয়।আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় নিচের পয়েন্টগুলো আমার কাছে ইফেক্টিভ মনে হয়েছে।

১ . প্রথম কাজ হল যে কাজে বিড করবেন সেটার ডেসক্রিপশান ভালোমত খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ুন।পুরোটা বুঝতে চেস্টা করুন বায়ার কি চেয়েছে।এটা যখন পড়বেন অবশ্যই কিছু প্রশ্ন আপনার মনে জাগবে।কারন কাজের পুরো বর্ণনা খুব একটা থাকেনা।যে প্রশ্নগুলো বা পয়েন্টগুলো আপনার ক্লিয়ার হওয়া দরকার সেগুলো মনে মনে ঠিক করুন বা আরও ভালো হয় লিখে ফেলুন।

২ . কভার লেটারে আমি মূলত এমন কথাবার্তার প্যাটার্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করি।প্রথমে একটা ভালো সম্ভাষণ জানিয়ে শুরু করুন ও নিজের পরিচয় দিন। এরপর সংক্ষেপে বলুন যে , আপনার প্রজেক্টের ব্যাপারে পড়লাম , আমি আগ্রহী এ ব্যাপারে , কিন্তু এই পয়েন্টগুলিতে আমার কিছু জানার ছিল যে আপনি আসলে কি চাচ্ছেন। এরপর আপনার আগের ঠিক করা প্রশ্নগুলো সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখুন। সবশেষে লিখুন আপনি কতদিন সময় নিতে চান কাজ শেষ করতে এবং টাকাপয়সা কত নিতে চান 😛 এরপর হালকা তৈলমর্দন সহকারে শেষ করুন।

৩ . যদিও বলেছি কভার লেটার পুরাই একটা চাপাবাজি কিন্তু মনে রাখবেন কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না।দেখা গেল অতিরিক্ত তেল দিতে গিয়ে বায়ারকে বোঝালেন যে আপনি অমুক এক্সপার্ট , তমুক এক্সপার্ট এই পারেন সেই পারেন , এই কাজ আপনার বাম হাতের কাজ ইত্যাদি।বায়ার হয়ত আপনাকে বিশ্বাস করে আপনাকে কাজ দিয়ে দেবে কিন্তু ফলাফল ভালো নাও হতে পারে।এই কাজ করে আমাকে একবার কমপক্ষে ৩০০ ডলারের কাজ মাত্র ৫০ ডলারে করতে হয়েছিল , ভাব নিতে গিয়ে প্রজেক্টের কাজের এস্টিমেশান ভুল করেছিলাম।পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।শুধু রেটিং পাবার জন্য সহ্য করে কাজ করতে হয়েছে।কাজেই গুড প্র‌্যাকটিস হল , নিজের ব্যাপারে সৎ থাকুন। নিজের ব্যাপারে বাড়তি কথা বললে বেশিরভাগ বায়ারই সাড়া দেবে না।

৪ . ফেসবুক বা মেসেন্জারে চ্যাট তো জীবনে আমরা অনেক করেছি।কাজেই আমরা একাজটা আশা করি ভালোই পারি। অনেক বায়ার স্কাইপিতে চ্যাট করে ইন্টারভিউ নেন।চ্যাট করতে পারলে বায়ারকে কনভিন্স করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।যদি সম্ভব হয় তাহলে ট্রাই করতে পারেন তবে অনেক সাইটই নিজেদের সাইটের বাইরে যোগাযোগ করতে দেয়না।ধরা খাইলে সুলেমানি ব্যান খাইতে পারেন।

সবচেয়ে বড় কথা যেটা , কভার লেটার কিংবা বায়ারের সাথে মেসেজ চালাচালির সময় নিজের কথায় ও কাজে সৎ থাকুন।নিজের দেশে সততার মূল্য না থাকলেও বাইরের দেশের লোকজন আপনার সততার দাম দেবে।ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে খুব ভালোমত অনুভব করেছি এটা। শুধু বিড করা কিংবা মেসেজ চালাচালির সময় না , বরং কাজ পেয়ে গেলে সফলভাবে শেষ করার পুরো প্রক্রিয়াতেই বেশি লাভ করতে গিয়ে নিজের সততাকে বিসর্জন দেবেন না কখনও।বাইরের বায়ারদের কাছে বাংলাদেশিদের একটা সম্মান আছে , আর সেটা এ কারনেই। সামনে একটা পোস্টে বিভিন্ন এমপ্লয়ারের সাথে কাজ করার একইসাথে মজার ও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।

24 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here