যদি আপনাকে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নিয়ে কল্পনা করতে বলি, তবে আপনার মাথায় কি ধরনের কল্পনা আসবে? —শুয়ে থেকে কিছু না করে (রিমোটও না চেপে) টিভি’র চ্যানেল পরিবর্তন করা? মনের সাহায্যে কম্যান্ড দিয়ে কম্পিউটার গেম খেলা? নাকি মনিটরে গেম প্লে না করে সরাসরি মাথার মধ্যেই গেম প্লে ডিসপ্লে করা? কম্পিউটার গেমের দুনিয়ায় চলে যাওয়া? মানুষের মন পড়ে ফেলা? আপনার কল্পনা কম্পিউটার স্ক্রীনে দেখা? —এই সকল চিন্তা ভাবনা একেবারেই পাগলামু হলেও ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (Brain-computer Interfaces) বা বিসিআই (BCI) প্রযুক্তির দ্বারা এই সবকিছু ব্যস্তবে পরিণত করা সম্ভব। মডার্ন কম্পিউটার গুলো দিনদিন যতোবেশি উন্নত হচ্ছে তার পাশাপাশি এরা মানুষের ব্রেইনকেও ততোবেশি বোঝার চেষ্টা করছে। আর এর ফলেই আমাদের কল্পনার সায়েন্স ফিকশন গুলোকে আমরা একে একে ব্যস্তবে পরিণত করতে পারছি। এই আর্টিকেলে, বিসিআই কিভাবে কাজ করে জানবো এবং এই প্রযুক্তির সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করবো, তো শুরু করা যাক…
ব্রেইনের ইলেকট্রিক সিগন্যাল
মানুষের ব্রেইন এবং কম্পিউটারের সাথে আমরা কেন তুলনা করি এবং কেনই বা দুইটিকে একসাথে কানেক্ট করতে চাই? দেখুন কম্পিউটার হলো প্ল্যাস্টিক, ট্র্যানজিস্টর, আইসি ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইজ, কিন্তু মানুষের ব্রেইন জীবন্ত জিনিস; যেটা ১০০ বিলিয়নের মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা গঠিত যাকে নিউরন বলা হয়, প্রত্যেকটি স্নায়ু কোষ একে অপরের সাথে ডেনড্রাইটস (Dendrites) এবং আক্সন (Axon) দ্বারা কানেক্টেড থাকে। এখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, কম্পিউটার এবং ব্রেইন সম্পূর্ণ আলাদা গঠনের জিনিস। কিন্তু ব্রেইনের কাজ করার ধরণ অনেকটা কম্পিউটারের মতোই। আমরা যখন কথা বলি, কাজ করি, ভাবি, বা যেকোনো কিছু করি —সেটাকে সম্পূর্ণ করার জন্য নিউরন কাজ করে। আর এই কাজ করার সময় নিউরন এক ধরনের ইলেকট্রিক সিগন্যাল তৈরি করে এবং সেটা নিউরন থেকে নিউরনে শেয়ার হয়। আর আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, ইলেকট্রনিক্সও ইলেকট্রিক সিগন্যালের উপর কাজ করে। এই ইলেকট্রিক সিগন্যালের উপর ভিত্তি করেই ব্রেইনকে কম্পিউটারের সাথে বা কম্পিউটারকে ব্রেইনের সাথে কানেক্টেড করা সম্ভব। আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং মাইন্ড আপলোডিং প্রযুক্তি এই ধারণার উপরই কাজ করে।
যাই হোক, মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া ইলেকট্রিক সিগন্যাল বিজ্ঞানীরা রীড করতে সক্ষম, অর্থাৎ বিভিন্ন কাজ করার সময় আমাদের ব্রেইনের মধ্যে যে বিভিন্ন প্রকারের সিগন্যাল তৈরি হয়, বিজ্ঞানীরা সেই সিগন্যালকে ধরতে পারে এবং কোনটি কোন কাজের জন্য উৎপাদিত হয় সেটা বুঝতে পারে। যেমন ধরুন আপনি চোখের সামনে লাল বা সবুজ রঙ দেখছেন, এখন আপনার চোখ থেকে অপটিক স্নায়ু এক ধরনের ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্রেইনের কাছে পাঠিয়ে দেবে। আর ঐ সিগন্যালের মধ্যে তথ্য জিপ করা থাকে, আপনার চোখ ঠিক কোন রঙটি দেখেছে। এখন আপনি যদি ঐ সিগন্যালটি রীড করতে পারেন এবং একই সিগন্যাল ক্যামেরা থেকে নিয়ে সরাসরি মস্তিষ্কে সেন্ড করতে পারেন, তবে আপনার মস্তিষ্ক একই রঙ দেখতে পাবে, এভাবে ক্যামেরার সাহায্যে সিগন্যাল তৈরি করে অন্ধ মানুষকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কেনোনা অন্ধদের চোখ যতোই নষ্ট হয়ে যাক না কেন, তাদের মস্তিষ্কের সিগন্যাল চেনার ক্ষমতা কিন্তু নষ্ট হয় না।
ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস
ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস কে কম্পিউটার এবং মানুষের ব্রেইনের সাথে সরাসরি কানেকশন বলতে পারেন। এটি হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারফেস (Human Computer Interface) বা এইচসিআই (HCI) এর সবচাইতে লেটেস্ট উন্নতিকরন। কম্পিউটারে কিছু ইনপুট প্রদান করার জন্য অবশ্যই মাউস, কী-বোর্ড বা অন্যান্য ইনপুট ডিভাইজ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু বিসিআই এ সরাসরি ব্রেইন থেকে কম্পিউটারে ইনপুট প্রদান করা সম্ভব। আপনাকে কিছু লিখতেই হবে না, জাস্ট মাথায় নিয়ে আসবেন, আর স্ক্রীনে ফটাফট সবকিছু টাইপ হয়ে যাবে, এমনকি মস্তিষ্কের মাধ্যমে আপনি মাউস কার্সরও নড়াচড়া করাতে পারবেন। বিসিআই এর সম্ভবনা এবং অ্যাপ্লিকেশন হাজারো। মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে সম্ভাব্য সবকিছুই এই প্রযুক্তি উন্নতিকরন করার মাধ্যমে করা সম্ভব। চিন্তা করে দেখুন নেক্সট জেনারেশন গেমিং এর কথা, যেখানে কোন কী-বোর্ড বা কনসোল ধরে থেকে গেমিং করতে হবে না। মাথার সাথে হয়তো কোন ওয়্যারলেস চিপ লাগানো থাকবে, আর সেটা কানেক্টেড থাকবে সরাসরি কম্পিউটারের সাথে, ডিরেক্ট ব্রেইন থেকে গেমকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। আবার চিন্তা করে দেখুন বিকলাঙ্গ রোগীদের কথা, যারা শুনতে পান না, বা দেখতে পান না। এদের জন্য সরাসরি ক্যামেরা এবং মাইক থেকে ইলেকট্রিক সিগন্যাল তৈরি করে মস্তিষ্কে পাঠিয়ে তাদের দেখানো এবং শোনানো সম্ভব—হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারফেসে এর চেয়ে বড় আবিষ্কার আর কি হতে পারে বলুন?
তাছাড়া বিসিআই এর মাধ্যমে ব্রেইনের কার্যক্রম এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে, এর ফলে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং মাইন্ড আপলোডিং টেকনোলজি’তে আরো উন্নতি এবং নির্ভুলতা আনা সম্ভব হবে। —কেনোনা আমরা মানুষের মস্তিষ্ককে যতোবেশি জানবো, কম্পিউটারকে ততোবেশি এর মতো করে গড়ে তুলতে পারবো। চিন্তা করে দেখুন, এমন এক সোশ্যাল মিডিয়ার কথা যেখানে ফটো আপলোড করার পরে ফটোর সাথে আপনার অনুভূতি, স্মৃতি, ভালোলাগা গুলোও টিউন করতে পারবেন এবং অন্যকেউ সেগুলোকে আপনার মতোই অনুভব করতে পারবে। এভাবেই আমরা ব্রেইনকে যতোবেশি বুঝতে আরম্ভ করবো ততোবেশি অ্যাপ্লিকেশন উন্নতি করা সম্ভব হবে। বিসিআই অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম সম্পূর্ণ ব্রেইনের কার্যক্রমের উপর হিসেব রেখে কাজ করে। নিচে বিসিআই এর ইনপুট এবং আউটপুট নিয়ে আলোচনা করা হলো;
বিসিআই ইনপুট/আউটপুট
এই প্রযুক্তিকে ঠিকঠাক মতো কাজ করানোর বেসিক আইডিয়াই এর গবেষকদের অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে, কেনোনা আমাদের ব্রেইন এতোটা সহজ জিনিস নয়, এতে কোটিকোটি নিউরন রয়েছে এবং কোটিকোটি সিগন্যাল জেনারেট করছে সর্বদা। মানুষের ব্রেইন সবচাইতে কমপ্লেক্স পদ্ধতি’তে কাজ করে। ব্রেইন থেকে সিগন্যাল রীড করার জন্য অবশ্যই মাথায় কিছু লাগানোর প্রয়োজন পড়বে যেটা সিগন্যাল গুলোকে ক্যাপচার করে কম্পিউটারে পাঠাবে। এই কাজের জন্য ইলেক্ট্রোড (Electrodes) ব্যবহার করা হয়, যেটার ডিভাইজের নাম ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফ (Electroencephalograph); আর একে মাথার ত্বকের সাথে লাগিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ইলেক্ট্রোড মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক সিগন্যাল গুলো পড়তে পারে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মস্তিষ্ক থেকে অনেক ক্ষীণ সিগন্যাল আসে এবং বেশিরভাগ সিগন্যাল মাথার খুলী’ই আটকিয়ে দেয়। তাই বেটার সিগন্যাল কোয়ালিটি পাওয়ার জন্য গবেষকরা মাথার খুলী ফাটিয়ে সরাসরি ঘিলুর উপরে ইলেক্ট্রোড প্ল্যান্ট করিয়ে দেয়। [মাথার মগজের উপরে ইলেক্ট্রোড প্ল্যান্ট করার রিয়াল ছবি দেখতে এখানে→ (চিত্র-১ | চিত্র-২) ক্লিক করুণ। বিঃদ্রঃ ছবি গুলো দুর্বল হৃদয়ের মানুষের না দেখার জন্য রেকোমেন্ড করবো] সরাসরি ব্রেইনের সার্ফেসে ইলেক্ট্রোড ইন্সটল করার ফলে আগের তুলনায় অনেক ভালো সিগন্যাল কোয়ালিটি পাওয়া যায়।
যাই হোক, মাথার খুলী ফাটিয়ে ঘিলুর একদম উপরের তলায় ইলেক্ট্রোড লাগানো চারটি খানি কথা নয়, এতে বিশাল সার্জারির প্রয়োজন হয়। একবার সফলভাবে সার্জারি করে প্ল্যান্ট করা সম্ভব হলে তারপরে ইলেক্ট্রোড মস্তিষ্ক থেকে ইলেকট্রিক সিগন্যাল ক্যাপচার করতে আরম্ভ করে, যেহেতু সিগন্যাল গুলো খুবই দুর্বল তাই ঠিকঠাক মতো কাজ করার জন্য সিগন্যাল গুলোকে ফিল্টার এবং এমপ্লিফাই করা হয়। একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই ইলেকট্রিক সিগন্যাল গুলোর প্যাটার্ন গুলোকে সেভ করে রাখা হয়, এই সিগন্যাল প্যাটার্ন গুলো দেখতে অডিও ওয়েভ ফর্মের মতোই।
প্রথমে কোন কাজের জন্য মস্তিষ্কে কি ধরনের সিগন্যাল তৈরি হয় সেটা রীড করা হয় এবং পরে কম্পিউটারে থাকা বিসিআই প্রোগ্রাম থেকে হুবহু রিভার্স সিগন্যাল তৈরি করে মস্তিকের নিউরনে প্ল্যান্ট করে দেওয়া হয়। ধরুন আপনার চোখ কিছু সাবজেক্ট দেখছে, এতে নিশ্চয় এক ধরনের সিগন্যাল মস্তিষ্কের কাছে পৌঁছাচ্ছে, সেই সিগন্যালের প্যাটার্ন বুঝে যদি ক্যামেরা থেকে ছবি নেওয়ার পরে একই সিগন্যাল তৈরি করে নিউরনে প্ল্যান্ট করা যায়, তবে অবশ্যই মস্তিষ্ক সেটা দেখতে পারবে, মস্তিষ্কে ভিজুয়াল ইমেজ তৈরি হবে।
অ্যাপ্লিকেশন
আমি আগেই বলেছি, বিসিআই নিয়ে সম্ভবনার শেষ নেই। আপনার কল্পনার অনেক কিছুকেই ব্যস্তবে রুপ দেওয়া যাবে। তবে এই ব্যাপারে অনেক আর্টিকেল পড়তে গিয়ে দেখলাম, এই প্রযুক্তিকে মূলত বিকলাঙ্গদের সাহায্য করার জন্যই উন্নতি করানো হচ্ছে, যদিও এর বাইরে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তারপরেও এর চেয়ে মহৎ উদ্দেশ্য আর কিছু হতে পারে না। ক্যামেরা ব্যবহার করে অন্ধদের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া যাদের জন্ম থেকে বা বিভিন্ন অ্যাকসিডেন্টের কারণে হাত পা হারিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য এই প্রযুক্তি আশীর্বাদ বয়ে আনবে। তাদের লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে রোবটিক হাত পা, যেগুলো মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল গ্রহন করে কাজ করবে, কিন্তু যাদের রোবটিক অঙ্গ লাগিয়ে দেওয়া হবে, সেগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করানোর জন্য অবশ্যই অনুশীলনের প্রয়োজন পড়বে।
তাছাড়া মস্তিষ্কের মধ্যে কোন সাবজেক্ট মুভ করানোর চিন্তা করে কম্পিউটার কার্সর সরানোরা করানোও সম্ভব হবে, সবকিছুই হয়ে যাবে মাইন্ড কন্ট্রোল। তাছাড়া আরো বিশদভাবে মস্তিষ্ক পড়া সম্ভব হলে হয়তো মাইন্ড ব্যবহার করে কোন কিছু টাইপও করা যাবে, তাছাড়া কিছু না করেই টিভি চ্যানেল পরিবর্তন করার সুবিধা তো থাকবেই। উল্লেখ্য এই যে, একবার সকল প্রসেস গুলো যদি ঠিকঠাক মতো করানো যায়, তবে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে সম্ভবনার কোন সীমা থাকবে না।
বিসিআই থেকে আমরা কতো দূরে?
এতোক্ষণে নিশ্চয় ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে সকল বেসিক ব্যাপার গুলো বুঝে গেছেন, এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে; ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস আমাদের চোখের সামনের প্রযুক্তি হতে এখনো কতোটা দেরি? দেখুন ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস এখন আর কোন সায়েন্স ফিকশন নেই, এটা জীবন্ত সায়েন্স! কিন্তু বিসিআই এখনো পারফেক্ট করে তোলা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
দেখুন আমাদের মস্তিষ্ক এতোটা সহজ ব্যাপার নয়, পৃথিবীর যেকোনো কমপ্লেক্স মেশিনের চাইতেও বেশি কমপ্লেক্স আমাদের মস্তিষ্ক; এতে কোটি কোটি নিউরন রয়েছে যেগুলো লাগাতার একে অপরের সাথে ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল সেন্ড ও রিসিভ করছে, আর ইলেক্ট্রোড এতো সূক্ষ্ম করে সিগন্যাল ক্যাপচার করতে এখনো সক্ষম হয় নি। তাছাড়া মস্তিষ্কে শুধু ইলেকট্রিক সিগন্যালই নয় বরং সেখানে কেমিক্যাল ব্যাপার সাপারও ঘটে আর যেটা ইলেক্ট্রোড দ্বারা ক্যাপচার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া মস্তিষ্ক থেকে অনেক ক্ষীণ সিগন্যাল আসে যেটা ক্যাপচার করা অনেকটা মাছের বাজারে দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে কারো সাথে গল্প করার ন্যায়। আর সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস এ এখনো তারের ব্যবহার করা হয়, সাথে কম্পিউটার গুলোর সাইজ দৈত্যাকার, যদি পোর্টেবল আর ওয়্যারলেস প্রযুক্তিকে এখানে সামিল করানো যায়, তবেই এই প্রযুক্তির বিস্তার লাভ করবে। তবে আমি নিশ্চিত, আমরা পারবোই।
lipitor 20mg cost atorvastatin 10mg oral buy atorvastatin 20mg pills
atorvastatin 10mg over the counter lipitor online lipitor 40mg for sale
purchase glucophage without prescription – cefadroxil 250mg cheap order lincocin 500 mg generic
how to buy glycomet – purchase epivir online oral lincomycin
retrovir online – where to buy glycomet without a prescription allopurinol over the counter
order retrovir 300 mg without prescription – order roxithromycin allopurinol 300mg drug
buy clozapine 50mg generic – buy generic perindopril over the counter oral famotidine 40mg
order clozaril 100mg pill – amaryl order pepcid pills
buy quetiapine 100mg pill – effexor order online eskalith for sale
order generic quetiapine 50mg – buy desyrel eskalith price
anafranil 25mg canada – celexa 20mg pill brand doxepin
buy clomipramine 25mg pills – aripiprazole medication sinequan 25mg for sale
buy hydroxyzine 10mg generic – order hydroxyzine without prescription order amitriptyline 10mg pill
atarax cost – order atarax online cheap purchase endep
amoxil usa – how to get ceftin without a prescription order ciprofloxacin sale
order augmentin 1000mg for sale – clavulanate usa cheap ciprofloxacin
order generic augmentin 625mg – buy generic cipro over the counter buy cipro 1000mg
purchase amoxil sale – cephalexin over the counter cipro 1000mg for sale
order cleocin – oral doxycycline purchase chloramphenicol
azithromycin 500mg pills – buy ciprofloxacin online cheap ciplox over the counter
buy azithromycin generic – sumycin drug how to get ciplox without a prescription
buy clindamycin without prescription – oxytetracycline 250mg without prescription chloromycetin drug