রোবটের উত্থান?

0
35

রোবটের উত্থান?

প্রশ্নটা নতুন করে দেখা দিয়েছে। কারণ, চীনা বোর্ড গেম গো-এর কিংবদন্তি খেলোয়াড় লি সে-দল পাঁচ ম্যাচের টুর্নামেন্টের প্রথম তিনটিতেই সার্চ ইঞ্জিন গুগলের তৈরি কম্পিউটার প্রোগ্রাম আলফাগোর কাছে হেরে গেছেন! গতকাল শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ম্যাচে জিতে আলফাগো ৩-০ তে এগিয়ে গেছে।
যন্ত্রের কাছে, বিশেষ করে বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় মানুষের হেরে যাওয়া এবারই প্রথম নয়। ১৯৯৭ সালে দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভ আইবিএমের তৈরি ডিপ ব্লু নামে এক সুপার কম্পিউটারের কাছে ৩.৫-২.৫ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে যান।
তবে, দাবা খেলার সঙ্গে চীনের বোর্ড গেমের পার্থক্য অনেক। এটি কিছুটা আমাদের দেশের ষোলো গুটি বা বাঘবন্দী খেলার মতো। একটা নির্দিষ্ট বোর্ডে সাদা ও কালো গুটি নিয়ে দুই পক্ষকে খেলতে হয়। উদ্দেশ্য থাকে প্রতিদ্বন্দ্বীর গুটিকে আটকে ফেলে বোর্ডের দখল নেওয়া। যে অর্ধেকের বেশি এলাকা দখল করতে পারবে, সে–ই বিজয়ী। গোর প্রতিটি চালের বিপরীতে অসংখ্য সম্ভাব্য চাল থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের পক্ষে সব চালের বিশ্লেষণ করা অনেক সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে, লি সে-দলের মতো খেলোয়াড়েরা প্রত্যেক চালের শুরুতে অনেক সম্ভাব্য চালকে নাকচ করে দিতে পারেন। তাঁরা কয়েকটি চালের মধ্যে ব্যাপারটি টেনে আনতে পারেন। এই কাজটি কখনোই কম্পিউটার করতে পারবে না বলে ধারণা করা হতো এত দিন।

কিন্তু আলফাগো প্রথমেই কিছু চালকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। এরপর বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেরা চালটি দিতে পারে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত গো গেমের কিংবদন্তি খেলোয়াড়কে হেরে যেতে হলো। এই সিরিজে জিতলে লি পেতেন এক মিলিয়ন ডলার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে মানুষের একটা বাহাদুরি ছিল যে, অজানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের যে ক্ষমতা, সেটি কখনো একটি রোবট অর্জন করতে পারবে না। কারণ, কম্পিউটার প্রোগ্রামকে অবশ্যই জানা তথ্য-উপাত্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা ছাড়া রোবটের পক্ষে নিজে নিজে কিছু শেখাও সম্ভব নয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে দেখা যাচ্ছে, রোবটদের অনেক কিছু ‘শিখিয়ে’ দেওয়া যায়। ফলে ডেটাবেইস নেই, এমন বিষয়েও ‘সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার সক্ষমতা তার তৈরি হয়।

বিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্র দ্য টার্মিনেটরসহ বিভিন্ন কল্পবিজ্ঞানকাহিনিতে রোবটকে মানুষের ওপর ছড়ি ঘোরাতে দেখা যায়। রোবট নিয়ে লেখালেখির শুরুতে কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক আসিমভ রোবটিকসের কয়েকটি সূত্র দিয়ে দেন। এতে বলা ছিল, রোবট কখনো মানুষকে আঘাত করবে না। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, রোবট সেই বিষয় মোটেও তোয়াক্কা করছে না। গত বছরের ১ জুলাই জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্ট শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে ভক্সওয়াগন গাড়ির কারখানায় এক শ্রমিককে মেরে ফেলে একটি নির্মাণ-রোবট। যদিও বলা হয়েছে, মানবিক ভুলের জন্যই এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ওই ‘খুনি-রোবট’ আসিমভের সূত্র মেনে চলেনি!

বাংলাদেশে রোবটিকস নিয়ে গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান চৌধুরী মোকাম্মেল ওয়াহিদ। তিনি মনে করেন, গবেষণা একটা নিয়মনীতি আর কঠোর তত্ত্বাবধানের মাঝে চালানো উচিত। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট যন্ত্র যতক্ষণ পর্যন্ত সৃজনশীল ও নান্দনিক কাজে নিয়োজিত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সমস্যা হবে না। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু অপরিণামদর্শী লোক বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যখন তা মানুষের বিরুদ্ধেই কাজে লাগানো শুরু করবে, তখন মানবজাতির পতন শুরু হবে।

Please comment Here (ভাল লাগলে কমেন্ট করুন)