হিরোশিমায় আশার বাণী শোনানো বোমাহত গাছের গল্প

22
332

৬ আগষ্ট, ১৯৪৫। এটমিক বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিমা শহর জ্বলে-গলে-পুড়ে শেষ। ম্যানহাটান প্রজেক্টের বিজ্ঞানী ড. হ্যারল্ড জ্যাকবসেন ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বললেন, আগামী ৭৫ বছর হিরোশিমায় কোন কিছু জন্মাবে না।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঠিক সে বছর বসন্তেই, পুড়ে যাওয়া শহরের কয়লা ফুঁড়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলো কিছু সবুজ চারা। এই চারা, গাছের সবুজ জাপানের লোকজনকে কি কোন আশার বাণী শুনিয়েছিলো? হবে হয়তো।

বোমা হামলার সাত দশক পর হিরোশিমা আজ সবুজ এক শহর। এই শহরে যুদ্ধের পরে যত গাছ লাগানো হয়েছে তার অনেকাংশই ছিলো বাইরে থেকে কিংবা জাপানের অন্যান্য অংশ থেকে আসা উপহার। এখন হিরোশিমা শহরে যত গাছ আছে তার কিছু ঠিক বোমা যেখানটায় ফেলা হয়েছিলো, তার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। বোমার আঘাতে শরীর পুড়ে ভেঙে গেলেও টিকে গিয়েছিলো ওরা। ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছে।

যুদ্ধের পরে বোমা হামলার হাইপোসেন্টারের দুই কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্য ৫৫টি জায়গায় বেঁচে ওঠা গাছগুলোকে সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। দাপ্তরিক ভাষায় এদের ‘বোমাহত গাছ’ বলে অভিহিত করা হলেও চলতি ভাষায় বলা হয়, ‘হিবাকু জুমোকু’ সার্ভাইভর ট্রি বা উত্তরজীবি তরু। এরকম প্রতিটি গাছের গায়ে আলাদা করে নেইমপ্লেইট লাগানো আছে। হিরোশিমায় ৩২ প্রজাতির প্রায় ১৭০ টি উত্তরজীবি তরু আছে।

এই গাছগুলোর সবকটাই আছে জনগনের জন্য উন্মুক্ত জায়গায়। রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে আছে হিরোশিমা প্রশাসন। গাছগুলোর বীজ পাঠানো হয় বিশ্বের নানা দেশে। কাজটা সাধারণ জনগনই করে নিজ দায়িত্বে। সারাবিশ্বে নিজেদের উত্তরপুরুষ দিয়েই যেন এই তরুরা জানান দিচ্ছে, একেবারে ধ্বংসস্তুপ থেকেও উঠে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করা যায়।

এটমিক বোমায় মানুষ মরে, পরের প্রজন্ম বেড়ে ওঠে বিকলাঙ্গ হয়ে। মৌলবাদ এমন এক বোমা যাতে জীবিত মানুষগুলো হয়ে যায় জীবন্মৃত। স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা থাকে না। বেরিয়ে আসছে সাধারন মানবতার ধর্ম থেকে। অদৃশ্য এই বোমা গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে।

 

22 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here